এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর ভারতীয় ক্রিকেট দলের উল্লাস। ছবি: এক্স।
রবিবার দুবাইয়ে এশিয়া কাপের ফাইনালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ২ বল বাকি থাকতে জেতে ভারত। চার ঘণ্টার নাটকীয় ফাইনালকে ছাপিয়ে গিয়েছে খেলা শেষের নাটক। সেই নাটকের শুরু খেলা শেষ হওয়ার ঠিক পর, রাত ১২টায়। পর পর কী ঘটল ৩ ঘণ্টা ধরে?
রাত ১২:০০- খেলা শেষ। পাকিস্তানকে হারিয়ে এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন ভারত।
রাত ১২:০২- পরিকল্পনা অনুযায়ী পাকিস্তানের কোনও খেলোয়াড়ের সঙ্গে হাত মেলালেন না দুই অপরাজিত ব্যাটার রিঙ্কু সিংহ ও তিলক বর্মা।
রাত ১২:০৩- জয়ের রান নিয়ে রিঙ্কুর দৌড়। সঙ্গে ম্যাচের নায়ক তিলক।
রাত ১২:০৮- এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল (এসিসি) ও পাকিস্তান বোর্ডের চেয়ারম্যান মহসিন নকভির হাত থেকে পুরস্কার নেবে না— জানিয়ে দিল ভারত। একই সঙ্গে অনুরোধ, এমিরেটস বোর্ডের ভাইস-চেয়ারম্যান খালিদ আল জারুনি তাদের ট্রফি দিন।
রাত ১২:১১- এসিসি কর্তারা আলোচনা শুরু করলেন। ফিরিয়ে দেওয়া হল ভারতের অনুরোধ।
রাত ০১:০৮- ফাইনাল শেষ হওয়ার ১ ঘণ্টা পরেও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান শুরু হল না। ধারাভাষ্যকার রবি শাস্ত্রী রাগে ফুঁসলেন।
রাত ০১:১৫- মহসিন নকভি মাঠে অপেক্ষা করছেন। কিন্তু পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের দেখা নেই। মাঠে দাঁড়িয়ে কারও সঙ্গে ফোনে কথা বলতে দেখা গিয়েছে নকভিকে। তাঁকে দেখে বোঝা যাচ্ছে, বেশ রেগে রয়েছেন তিনি।
রাত ০১:১৬- ভারতীয় ক্রিকেটারেরাও অপেক্ষা করছেন মাঠে। তাঁরা কোনও ভাবেই নকভির কাছ থেকে পুরস্কার নিতে চাইছেন না।
রাত ১:১৯- অবশেষে দেখা গেল পাক ক্রিকেটারদের। সওয়া ১ ঘণ্টা পর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান শুরু হল।
রাত ১:২০- মঞ্চে দাঁড়িয়ে নকভি। তিনি যখন মঞ্চে এলেন, তখন স্টেডিয়ামে ভারতীয় সমর্থকদের গলায় ‘‘ভারত মাতা কি জয়’’ ধ্বনি।
রাত ১:২৫- সঞ্চালক সাইমন ডুল জানালেন, পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের পদক দেবেন নকভি। কিন্তু তাঁর বদলে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি আমিরুল ইসলামের কাছ থেকে পদক পেলেন সলমন আলি আঘারা।
রাত ১:২৬- রানার আপের চেক নিলেও তা ছুড়ে ফেলেন দিলেন পাকিস্তানের অধিনায়ক সলমন। তাঁকে দেখে বোঝা গেল, রেগে রয়েছেন তিনি।
রাত ১:৩৪- নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড় থাকল ভারতীয় ক্রিকেট দল। পাক বোর্ড তথা এশীয় ক্রিকেট কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মহসিন নকভির কাছ থেকে চ্যাম্পিয়নের ট্রফি নিলেন না সূর্যকুমার যাদবেরা।
রাত ১:৩৫- সাইমন ডুল পরে বলেন, “আমাকে এসিসি থেকে জানানো হয়েছে যে ভারতীয় ক্রিকেট দল পুরষ্কার গ্রহণ করবে না। তাই পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান এখানেই শেষ।”
রাত ১:৩৭- নকভি-সহ এসিসির সকল কর্তা স্টেডিয়াম থেকে বেরিয়ে গেলেন।
রাত ১:৪৮- ভারতীয় দল তখনও মাঠে। হার্দিক পান্ড্য প্রথমে মঞ্চে উঠে সেলফি তুললেন। তারপরে দলের বাকি সদস্যরা এবং কোচিং স্টাফেরা এলেন।
রাত ১:৫৩- টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের পর রোহিত শর্মার ট্রফি নিতে যাওয়ার ভঙ্গি নকল করলেন অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব। কিন্তু তিনি ট্রফি পাননি। কাল্পনিক ট্রফি নিয়েই ভারতের জয় উদযাপন করলেন।
রাত ২:১১- ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সচিব দেবজিৎ শইকীয়া অভিযোগ করলেন, এশিয়া কাপের ট্রফি ও ভারতীয় ক্রিকেটারদের পদক নিয়ে পালিয়ে গিয়েছেন নকভি।
রাত ২:১৩- পাকিস্তানের সমালোচনা করে শইকীয়া বললেন, “যেহেতু ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধের পরিস্থিতি রয়েছে, তাই আমরা এমন কারও কাছ থেকে পুরস্কার নেব না, যিনি পাকিস্তানের মন্ত্রী। নীতিগত ভাবে এই সিদ্ধান্ত আমরা আগেই নিয়েছিলাম। তার মানে এই নয় যে ভদ্রলোক ট্রফি ও মেডেল নিয়ে পালিয়ে যাবেন। এই ঘটনা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। আশা করছি ভদ্রলোক দ্রুত ট্রফি ও মেডেল ভারতে ফেরত দিয়ে দেবেন। নভেম্বর মাসে দুবাইয়ে আইসিসি-র বৈঠক আছে। সেখানে আমরা এশীয় ক্রিকেট কাউন্সিলের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে জোরাল প্রতিবাদ জানাবো।”
রাত ২:৩৩- সাংবাদিক সম্মেলন সূর্যের। বললেন, “চ্যাম্পিয়ন দল ট্রফি পাচ্ছে না, ক্রিকেট খেলা শুরু করার পর থেকে জীবনে এমন ঘটনা আমি দেখিনি। তবে আমার মতে দলের ক্রিকেটার ও সাপোর্ট স্টাফেরাই আসল ট্রফি। সকলে বলছেন, ভারত এশিয়া কাপের চ্যাম্পিয়ন। এটাই আসল কথা।”
রাত ২:৫৭- সলমনের সাংবাদিক বৈঠক। বললেন, ‘‘ভারত আমাদের সঙ্গে হাত মেলায়নি, মহসিন নকভির থেকে ট্রফি নেয়নি। ওরা আমাদের সঙ্গে যা করেছে, তাতে শুধু আমাদের অসম্মান করেনি, গোটা ক্রিকেটকে অসম্মান করেছে। এগুলো দেখে বাকি দলগুলো যদি এ সব করতে শুরু করে? কোথায় শেষ হবে এ সব? ক্রিকেটারদের তো রোল মডেল হওয়া উচিত। মাঠে এগুলো হতে দেখলে ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা কী শিখবে? এ বার যা হয়েছে, খুব খারাপ।’’