(বাঁ দিকে) সূর্যকুমার যাদব এবং গৌতম গম্ভীর (ডান দিকে)। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ ঘিরে চেনা উন্মাদনার ছবি এ বার অনেকটাই ফিকে দুবাইয়ে। অপারেশন সিঁদুরের পর এই ম্যাচ ঘিরে দ্বিধাবিভক্ত প্রাক্তন ক্রিকেটারেরা। রাজনৈতিক নেতারাও। পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার মতো ঘটনার পরেও কেন পাকিস্তানের সঙ্গে ভারত খেলছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। সমাজমাধ্যমে ম্যাচ ‘বয়কট’এর কথাও বলছেন কেউ কেউ। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি কিছুটা অস্বস্তিকর। এই পরিস্থিতিতে ক্রিকেটারদের শুধু খেলা নিয়ে ভাবার পরামর্শ দিয়েছেন কোচ গৌতম গম্ভীর।
এশিয়া কাপের ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ ঘিরে উত্তেজনার থেকে অস্বস্তি বেশি। এই ম্যাচ ঘিরে নানা মতামত সূর্যকুমার যাদব, শুভমন গিলদের কানেও পৌঁছেছে। স্বাভাবিক ভাবেই খানিকটা চাপে রয়েছেন তাঁরা। মাঠের আবহ কেমন থাকবে, তা আগাম আন্দাজ করা কঠিন। পহেলগাঁওয়ের ঘটনার সময় পাকিস্তানের সঙ্গে সব রকম যোগাযোগ বন্ধ করার পক্ষে সওয়াল করেছিলেন গম্ভীরও। অথচ তিনিই ভারতীয় দলের কোচ হিসাবে এখন ‘নিরুপায়’। ভারতীয় সাজঘরের অস্বস্তির পরিবেশের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন দলের অন্যতম সহকারী কোচ রায়ান টেন দুশখতে।
শনিবার সাংবাদিকদেক সঙ্গে কথা বলার সময় দুশখতে বলেছেন, ‘‘এই ম্যাচ ঘিরে সমর্থকদের আবেগ আমরা বুঝি। আমাদের কোচের বার্তা খুব পেশাদার এবং পরিষ্কার। গম্ভীর বলেছে, যেটা আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই, সেটা নিয়ে কিছু ভাবারও দরকার নেই।’’ তিনি আরও বলেছেন, ‘‘বিষয়টা খুবই সংবেদনশীল। অধিকাংশ ভারতবাসীর মনোভাব, অনুভূতি ক্রিকেটারদের অজানা নয়। ওদের অনুভূতিও খুব একটা আলাদা নয়। একটা সময় পর্যন্ত এশিয়া কাপই অনিশ্চিত ছিল। সকলে অপেক্ষায় ছিলাম। তবে সরকারের অবস্থান সকলেরই জানা।’’
একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কী বলতে হবে আর কী বলা যাবে না, এসব শিখিয়ে দিয়ে দুশখতেকে পাঠান গম্ভীর। বিতর্কের আবহ থেকে ক্রিকেটারদের আড়ালে রাখার চেষ্টা করেছেন কোচ। দুশখতে বলেছেন, ‘‘আমরা ক্রিকেটের মধ্যে আবেগ মেশাতে চাইছি না। ছেলেরা যথেষ্ট পেশাদার। কিছু পরিস্থিতিতে ব্যক্তিবিশেষের আলাদা আলাদা অনুভূতি থাকা স্বাভাবিক। আমরা ক্রিকেটারদের বলেছি, শুধু খেলায় মন দিতে। ক্রিকেট ছাড়া অন্য কিছু নিয়ে না ভাবতে।’’ সূত্রের খবর, ক্রিকেটারদের সঙ্গে গম্ভীর নিজে কথা বলেছেন। সাজঘরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছেন। আর একটা ম্যাচ হিসাবে দেখার বার্তা দিয়েছেন।
কোচ না ভাবার পরামর্শ দিলেও ক্রিকেটারদের পক্ষে চোখ-কান বন্ধ করে রাখা সম্ভব নয়। ভারতীয় দলের অনেক ক্রিকেটারই সমাজমাধ্যমে যথেষ্ট সক্রিয়। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ ঘিরে নানা নেতিবাচক বিষয় তাঁদের চোখেও পড়ছে। বিতর্ক এড়াতে কেউ মুখ খুলছেন না ঠিকই। তবে পুরোপুরি নিশ্চিন্তও থাকতে পারছেন না অনেকে। এই ম্যাচের পর ক্রিকেটপ্রেমীদের একাংশের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে, সেটাই তাঁদের সবচেয়ে বেশি ভাবাচ্ছে।
সব মিলিয়ে পরিস্থিতি যে কিছুটা ঘোলাটে, তা বোঝার জন্য কূটনীতিবিদ হওয়ার প্রয়োজন নেই। শনিবার পর্যন্ত দু’দলই দু’দলকে এড়িয়ে চলেছে। এক মাঠে এক সঙ্গে অনুশীলন করলেও সাধারণ সৌজন্য বিনিময় করতেও দেখা যায়নি দু’দলের ক্রিকেটারদের। রবিবার সে সুযোগ নেই। মুখোমুখি হতেই হবে। স্বভাবতই ক্রিকেটারদের মনে নানা সংশয়, নানা প্রশ্ন। দুশখতে বলেছেন, ‘‘আমরা দেশবাসীর অনুভূতি সম্পর্কে সচেতন। তবে আমাদের এগোতে হবে। ক্রিকেটারেরা দেশের হয়ে আরও একটা ম্যাচ খেলার সুযোগ পাবে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে ওরা যতটা সম্ভব পেশাদার এবং খেলার প্রতি মনোযোগী থাকার চেষ্টা করবে।’’
নেদারল্যান্ডসের প্রাক্তন ক্রিকেটারের পক্ষে ভারত-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের আঁচ বা আবেগ বোঝা সম্ভব নয়। বিদেশি কোচের মধ্যে জাতীয়তাবোধের অনুভূতিও থাকবে না। দেশবাসীর আবেগ বোঝাও কঠিন। শনিবার তাঁর বলা কথাগুলি নিয়েই তাই প্রশ্ন রয়েছে। ২২ গজে পাকিস্তানের মুখোমুখি হওয়ার আগে কোনও ক্রিকেটারকে সংবাদমাধ্যমের সামনে পাঠাননি গম্ভীর। নিজেও আসেননি। কোনও ভারতীয় সহকারীকেও পাঠাননি। গম্ভীর নিজেও যে ‘নিরুপায়’।