Mohsin Naqvi Centres India Vs Pakistan Controversy in Asia Cup 2025

আইএসআইয়ের ‘চর’! পাক সেনাপ্রধানের শ্যালক, এশিয়া কাপে বিতর্কের মুখ নকভি ২৫ হাজার কোটির দুর্নীতিতে ‘দায়ী’

ক্রিকেটের সঙ্গে কোনও রকম সম্পর্ক ছাড়াই পাকিস্তানের ক্রিকেট বোর্ডের সর্বেসর্বা নকভি। তাঁর বিরুদ্ধে ৫৩টি মামলা হলেও একটি ক্ষেত্রেও শাস্তি পাননি নকভি।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৫:৫৯
Share:

এশিয়া কাপে বিতর্কের মুখ মহসিন নকভি। —ফাইল চিত্র।

রকেটের গতিতে উত্থান হয়েছে তাঁর। প্রথমে দেশের একটি প্রভিন্সের মুখ্যমন্ত্রী। পরে দেশের মন্ত্রী। ক্রিকেটের সঙ্গে কোনও রকম সম্পর্ক ছাড়াই পাকিস্তানের ক্রিকেট বোর্ডের সর্বেসর্বা হয়েছেন মহসিন নকভি। বলা হয়, পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের চর তিনি। পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর নয়নের মণি নকভির বিরুদ্ধে রয়েছে ২৫ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ। সেই অভিযোগের প্রমাণ থাকলেও কোনও শাস্তি হয়নি নকভির। পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলা ও ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে একের পর এক ভারত-বিরোধী মন্তব্য করেছেন। এশিয়া কাপেও বিতর্কের মুখ সেই নকভিই।

Advertisement

লাহোরে জন্ম নেওয়া নকভি পাকিস্তানে পড়াশোনা শেষ করে আমেরিকায় যান। সেখানে ওহায়ো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতা নিয়ে পড়াশোনা করেন। একটি বিদেশি চ্যানেলে সাংবাদিক হিসাবে চাকরিও করেছেন। পরে পাকিস্তানে ফিরে একটি সংবাদমাধ্যম চালু করেন তিনি।

বরাবরই পাকিস্তান সেনার সঙ্গে ভাল সম্পর্ক ছিল নকভির পরিবারের। সেই সম্পর্ক আরও মজবুত হয় তাঁর তুতো দিদি সায়েদা ইরাম আসিমের বিয়ের পর। পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর প্রধান আসিম মুনিরের স্ত্রী সায়েদা। সেনাপ্রধানের শ্যালক হওয়ার পর থেকে ক্ষমতা আরও বাড়ে নকভির। মুনির সেনাপ্রধান হওয়ার পরেই পঞ্জাব প্রভিন্সের অন্তর্বর্তী মুখ্যমন্ত্রী হন নকভি। খুব বেশি দিন সেই দায়িত্বে না থাকলেও তার মাঝেই ইমরান খানের দলের কর্মীদের জোর করে জেলে ঢোকানোর অভিযোগ ওঠে নকভির বিরুদ্ধে। এমনও শোনা গিয়েছে, পঞ্জাব প্রভিন্সে ইমরানের দলকে প্রায় শেষ করে দিয়েছেন নকভি।

Advertisement

সেই কারণেই পঞ্জাব প্রভিন্সের মুখ্যমন্ত্রীর পদ যাওয়ার পর ‘পুরস্কার’ দেওয়া হয় নকভিকে। তাঁকে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী করা হয়। পাশাপাশি পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের অন্তর্বর্তী চেয়ারম্যানও হন তিনি। পরে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পাকাপাকি ভাবে সেই পদ পান। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রাক্তন সচিব তথা এশীয় ক্রিকেট কাউন্সিলের প্রাক্তন চেয়ারম্যান জয় শাহ আইসিসি-র চেয়ারম্যান হওয়ার পর এশীয় ক্রিকেটেরও মসনদে বসেছেন নকভি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে দেশের সুরক্ষার দায়িত্ব তাঁর। অভিযোগ, নিজের পদ ব্যবহার করে ইমরান-বিরোধিতা আরও বাড়িয়ে তুলেছেন নকভি।

শোনা গিয়েছে, পাক সেনাবাহিনীর সঙ্গে ভাল সম্পর্কের খাতিরে পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থার সঙ্গেও যোগাযোগ রয়েছে নকভির। নিজের পদ ব্যবহার করে তিনি গোপনে আইএসআইয়ের অনেক সুবিধা করে দেন বলেও খবর। সূত্রের খবর, আইএসআইকে টাকার জোগান দেন তিনি। তাদের জন্য বেশ কয়েকটি আর্থিক দুর্নীতিও তিনি করেছেন বলে অভিযোগ। তার ফলও পেয়েছেন। সেনাপ্রধান মুনিরের নির্দেশ, প্রতিটি ক্ষেত্রে সেনা নকভিকে সমর্থন করবে। নিন্দকেরা তাঁকে আইএসআইয়ের ‘চর’ বলেন। এমনও শোনা যায়, প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফের থেকেও ক্ষমতা বেশি নকভির। তাঁর বিরুদ্ধে অবশ্য কোনও দিন কোনও মন্তব্য করেননি নকভি।

অভিযোগ, পাক বোর্ডের চেয়ারম্যান হওয়ার পর পাক সেনার অধীনে থাকা দু’টি সংস্থাকে ২৫ হাজার কোটি টাকার বরাত দিয়েছিলেন নকভি। তার কোনও হিসাব নেই। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে লাহোরের গদ্দাফি, করাচির ন্যাশনাল স্টেডিয়াম ও রাওয়ালপিন্ডির স্টেডিয়ামের সংস্কারের জন্য সেই টাকা দেওয়া হয়েছিল। তার জন্য কোনও রকম দরপত্র হয়নি। সরাসরি সেই দু’টি সংস্থাকে টাকা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি প্রমাণ দিয়েছেন বিরোধীরা। শোনা গিয়েছে, নকভির বিরুদ্ধে ৫৩টি মামলা দায়ের হয়েছে। তার মধ্যে কয়েকটিতে নকভির বিরুদ্ধে প্রমাণ থাকলেও তিনি শাস্তি পাননি। এতটাই ক্ষমতা তাঁর।

পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলা ও ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পর ভারত-পাকিস্তানের সম্পর্ক উত্তপ্ত হয়েছে। সেই সময় একের পর এক ভারত-বিরোধী মন্তব্য করেছেন নকভি। সেই কারণেই তাঁর হাত থেকে এশিয়া কাপের ট্রফি নিতে অস্বীকার করেছে ভারত। নকভিও নিজের সিদ্ধান্তে অনড়। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের অভিযোগ, ট্রফি ও ভারতীয় ক্রিকেটারদের পদক নিয়ে নিজের হোটেলের ঘরে পালিয়ে গিয়েছেন তিনি। নভেম্বরে আইসিসি-র বৈঠকে নকভির বিরুদ্ধে জোরাল প্রতিবাদ জানাবে ভারতীয় বোর্ড। নকভিকে ট্রফি ভারতে ফিরিয়ে দেওয়ার কথাও বলেছে বিসিসিআই। অর্থাৎ, এশিয়া কাপ শেষে হলেও বিতর্ক এখনও থামছে না। তার কেন্দ্রে নকভি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement