শুভমন গিল। ছবি: পিটিআই।
জয়ী দলে সাধারণত বদল হয় না। কিন্তু গৌতম গম্ভীরের মানসিকতা আলাদা। তিনি পিচ ও পরিস্থিতি দেখে দল নির্বাচন করেন। ফলে জয়ী দলে বদল এর আগেও দেখা গিয়েছে। বৃহস্পতিবার কি চণ্ডীগড়ে সেই ছবিই দেখা যাবে? ভারতের ছোট ফরম্যাটের দলে প্রত্যাবর্তনের পর থেকে শুভমন গিলের ব্যাটে রান নেই। তাঁকে কি বসানোর ঝুঁকি নেবেন ভারতীয় দলের কোচ?
মঙ্গলবার কটকে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ১০১ রানে হারিয়েছে ভারত। ফলে দলের আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে। এই ধরনের দলে বদলের প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু ভারতীয় দলের ছবিটা তা নয়। এশিয়া কাপ থেকে ভারতের টি-টোয়েন্টি দলে ফিরেছেন শুভমন। সহ-অধিনায়ক করা হয়েছে তাঁকে। তার আগে ছোট ফরম্যাটের দলে শুভমনের জায়গা ছিল না। যত দিন রোহিত শর্মা ছিলেন, তিনি ওপেন করতেন। রোহিত অবসর নেওয়ার পর যশস্বী জয়সওয়াল, অভিষেক বর্মা, সঞ্জু স্যামসনদের সেই ভূমিকায় দেখা গিয়েছে। গম্ভীর কোচ হওয়ার পর সঞ্জুকে ওপেনার করেছিলেন। ওপেন করতে নেমে তিনটি শতরানও করেছেন তিনি। তা-ও মাত্র চার ম্যাচের মধ্যে। অথচ সেই সঞ্জু এখন জায়গা পাচ্ছেন না।
ওপেনিংয়ে একটি জায়গা দখল করে রেখেছেন অভিষেক। বিশ্বের এক নম্বর টি-টোয়েন্টি ব্যাটার তিনি। ফলে তাঁকে সরানোর প্রশ্ন নেই। অপর জায়গাটি নিয়ে লড়াই চলছে। শুভমন ওপেন করলেও এখনও পর্যন্ত বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। তাঁর রান তোলার গতিও অভিষেকের মতো নয়। শুভমন ওপেন করায় সঞ্জুকে নামতে হয়েছিল মিডল অর্ডারে। এশিয়া কাপে একটি ম্যাচে তো আট নম্বরে ব্যাট করতে নেমেছিলেন তিনি। কিন্তু সঞ্জু মিডল অর্ডার ব্যাটার নন। পাওয়ার প্লে কাজে লাগাতে পারেন। পরের দিকে নেমে ঝোড়ো ব্যাটিং দেখা যায়নি তাঁর কাছ থেকে। ফলে কটকে জিতেশ শর্মাকে প্রথম একাদশে খেলানো হয়েছে। জিতেশ বরাবরই ফিনিশারের কাজ করেন। সেটি তাঁর স্বাভাবিক জায়গা। ফলে সঞ্জুর বদলে জিতেশে ভরসা রেখেছেন গম্ভীর।
শুভমনকে সহ-অধিনায়ক করায় তাঁকে সহজে বাদ দেওয়া সম্ভব নয়। ফলে রান না থাকলেও দলে রয়েছেন ভারতের বাকি দুই ফরম্যাটের অধিনায়ক। তাঁকে গম্ভীর পছন্দ করেন। এমনও শোনা যাচ্ছে, ফর্মে না থাকা সূর্যকুমার যাদবকে সরিয়ে বিশ্বকাপের আগে শুভমনকে অধিনায়কও করে দেওয়া হতে পারে। ভারতে সাধারণত তিন ফরম্যাটে একজন অধিনায়কই থাকেন। সেই জায়গা পেতে পারেন শুভমন।
কিন্তু তার জন্য ব্যাট হাতে ফর্মে থাকতে হবে। এ বার দেশের মাটিতে বিশ্বকাপ। সঞ্জু যত দিন ওপেন করেছেন, ভাল খেলেছেন। ফলে পরিসংখ্যান তাঁর পক্ষে। কিন্তু শুভমন তা পারেননি। বিশ্বকাপ জিততে হলে ভারতের ওপেনিং জুটিকে ফর্মে থাকতে হবে। কারণ, কুড়ি-বিশের ফরম্যাটে ওপেনিং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। পাওয়ার প্লে কাজে লাগাতে না পারলে জিততে সমস্যা হবে। দেশের মাটিতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিততে না পারলে আরও চাপে পড়বেন গম্ভীর। সেটা তিনি জানেন। নিজের চাকরি বাঁচাতে কি অপ্রিয় সিদ্ধান্ত নিতে দেখা যাবে কোচকে? শুভমনের বদলে সঞ্জুকে ওপেন করিয়ে কি দেখে নেবেন তিনি? যদি শুভমনকে প্রথম একাদশ থেকে বাদ না দিতে চান, তা হলে তিন নম্বরে তাঁকে নামানো যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে তিলক বর্মা, সূর্যকুমার, হার্দিক পাণ্ড্যেরা এক ধাপ করে নেমে যাবেন ব্যাটিং অর্ডারে। চণ্ডীগড়ে কি সেটাই দেখা যাবে?
কটকে জেতার পর অধিনায়ক সূর্য অবশ্য স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, তাঁদের ব্যাটিং অর্ডারে কোনও সমস্যা নেই। বিশ্বকাপের আগে দলে বিশেষ বদলও দেখা যাবে না। বিশ্বকাপের আগে দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিউ জ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে মোট ১০টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলবে ভারত। তার মধ্যে একটি ম্যাচ হয়ে গিয়েছে। তাই ভারত যে খুব বেশি পরীক্ষার পথে যাবে না, সেই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। তবে এক, দু’টি জায়গায় বিকল্প তৈরি রাখতে চাইবেন গম্ভীর। বিশ্বকাপে কোনও সমস্যা হলে যাতে মোকাবিলা করা যায়। তারই অঙ্গ হিসাবে চণ্ডীগড়ে সঞ্জুকে খেলানো হতে পারে। কারণ, সেই পরীক্ষা এখনই করে নিতে হবে ভারতের কোচকে।
ভারতের বাকি দলে বিশেষ বদলের সম্ভাবনা নেই। দুই পেসার-অলরাউন্ডারই খেলাবে ভারত। অভিষেক ও তিলক থাকায় দু’জনের বেশি স্পিনার খেলানোর সম্ভাবনা কম। অর্থাৎ, কুলদীপকে হয়তো বেঞ্চেই থাকতে হবে। ফেব্রুয়ারি মাসে বিশ্বকাপ। সেই সময়ও শিশির পড়বে। আর শিশির পড়লে স্পিনারদের থেকে পেসারদের অসুবিধা কম। তাই হয়তো হার্দিক ও শিবমকে খেলানো হবে। তাঁদের মতো আক্রমণাত্মক ব্যাটার থাকলে ডেথ ওভারে রান তোলা সুবিধা। জিতেশকে না খেলালেও সমস্যা হবে না ভারতের।
চণ্ডীগড়ে ভারতের সম্ভাব্য একাদশ— অভিষেক শর্মা, সঞ্জু স্যামসন, শুভমন গিল, তিলক বর্মা, সূর্যকুমার যাদব, হার্দিক পাণ্ড্য, শিবম দুবে, অক্ষর পটেল, জসপ্রীত বুমরাহ, অর্শদীপ সিংহ, বরুণ চক্রবর্তী।