Wriddhiman Saha

‘আদর্শ টিমম্যান, নিঃস্বার্থ ভাবে ঋদ্ধি সাহায্য করেছে পন্থকে’, সাহাকে সেলাম শাস্ত্রীর

কেউ যোগ্য না হলে বসিয়ে দেওয়া যায়, ব্রাত্য করে রাখার উদাহরণও প্রচুর আছে, কিন্তু কী করে এমন বলা যায়, তোমাকে আর নেব না?

Advertisement

সুমিত ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৭:২৮
Share:

নিঃস্বার্থ: উত্তরসূরি ঋষভের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন ঋদ্ধি। ফাইল চিত্র

ঋদ্ধিমান সাহাকে নির্বাচক কমিটি এবং বর্তমান দল পরিচালন সমিতি নাকি জানিয়ে দিয়েছে, তাঁকে আর ভবিষ্যতের রাস্তায় ভাবা হবে না। রাহুল দ্রাবিড়, চেতন শর্মারা ৩৭ বছরের ঋদ্ধিমানকে ‘প্রাক্তন’ করে দিয়ে তুলে ধরতে চান দক্ষিণের ২৮ বছর বয়সী কে এস ভরতকে, এমনই খবর। তিনি সদ্য প্রাক্তন ভারতীয় কোচ, রবি শাস্ত্রী কী মনে করছেন?

Advertisement

ঋদ্ধিকে নিয়ে ভারতীয় ক্রিকেট তোলপাড় হওয়ার মধ্যে অবশেষে শুক্রবার পাওয়া গেল শাস্ত্রীকে। বর্তমান টিম ম্যানেজমেন্ট বা নির্বাচক কমিটির সিদ্ধান্ত থেকে তিনি এখন অনেক দূরে, তাই এ নিয়ে মন্তব্য করতে চান না। তবে প্রাক্তন কোচের মুখে বরাবরের মতোই বঙ্গ কিপারকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা শোনা গেল। শাস্ত্রী বলে দিলেন, ‘‘সাহার মতো টিমম্যান আমি দেখিনি। দলের প্রয়োজনে ও নিজের জীবন পর্যন্ত দিতে পারে।’’ এখানেই না থেমে শাস্ত্রী ফাঁস করলেন, ‘‘বাইরের পৃথিবী হয়তো দেখে, ঋষভ আর ঋদ্ধির মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছে। কিন্তু সব কিছু ভুলে ঋদ্ধি যে ভাবে ঋষভকে সাহায্য করেছে কিপিং নিয়ে, তা ভারতীয় দল মনে রাখবে। নিঃস্বার্থ সেই অবদানের সাক্ষী আমরা।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘একটা ছেলে দেখছে, সে খেলবে না, অন্য ছেলেটা প্রথম একাদশে থাকবে। তবু তাকে সাহায্য করে যাচ্ছে, তার কিপিং উন্নত করার জন্য পাশে দাঁড়াচ্ছে। এর চেয়ে বড় একতার ছবি, টিমম্যানের ছবি আর কী হতে পারে! কেউ সারাজীবন একটি পদে থাকে না। কিন্তু এই ছবিগুলোই সারাজীবন সঙ্গে থেকে যায়।’’

ভারতীয় ক্রিকেট মহলের গরিষ্ঠ অংশের কিন্তু মনে হয়েছে, ঋদ্ধিমানের মতো নীরব সৈনিকের জন্য এমন বার্তা শুধু কর্কশই নয়, যথেষ্ট অপমানজনকও। প্রশ্ন উঠছে, শুধু বঙ্গ কিপারেরই বয়স হয়ে গেল, অন্যদের নয়— এমন বিমাতৃসুলভ আচরণ কেন? শিখর ধওয়ন ৩৬ বছর বয়সে ওয়ান ডে খেলছেন, অশ্বিনকে ৩৫ বছর বয়সে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ঢুকিয়ে দেওয়া হল এবং তাতে বোর্ডের শীর্ষ কর্তারাও নাচতে নাচতে সায় দিলেন, তা হলে ৩৭ শুধু ঋদ্ধির ক্ষেত্রে অবসরের বয়স হতে যাবে কেন? আর ঋদ্ধির বেলায় সকলে আশ্চর্যজনক ভাবে চুপচাপই বা কেন? সিএবি কর্তাদের দিক থেকেই বা প্রতিবাদ নেই কেন? আরও বড় প্রশ্ন, কোনও টিম ম্যানেজমেন্ট বা নির্বাচক কমিটি কী করে কাউকে বলতে পারে, তোমাকে আর নেওয়া হবে না? এটা তো মধ্যযুগীয় মানসিকতায় শাসন চালানোর মতো হয়ে গেল। কেউ যোগ্য না হলে বসিয়ে দেওয়া যায়, ব্রাত্য করে রাখার উদাহরণও প্রচুর আছে, কিন্তু কী করে এমন বলা যায়, তোমাকে আর নেব না? ক্রিকেট বোর্ডের সাম্প্রতিক ভূমিকা নিয়ে ক্রমশ প্রশ্ন বাড়ছে।

Advertisement

শাস্ত্রী যদিও ভারতীয় ক্রিকেট সংসার থেকে দূরে থাকায় এ সবের মধ্যে ঢুকতে চাইছেন না। তবে ঋদ্ধিকে নিয়ে উচ্ছ্বাস থামে না তাঁর গলায়, ‘‘টেকনিকের দিক থেকে অসাধারণ। দুর্দান্ত অনুমান ক্ষমতা। আর যত খারাপ উইকেট, তত যেন অপ্রতিরোধ্য উইকেটের পিছনে। তবে ঋদ্ধি সকলের চেয়ে এগিয়ে ওর ফুটওয়ার্কের জন্য। শ্রীলঙ্কায় যে রকম কিপিং করেছিল, তা খুব কম কিপারকেই করতে দেখেছি।’’ এর পর সৈয়দ কিরমানির সঙ্গে খেলা, মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে কাছ থেকে দেখা শাস্ত্রীর বড় শংসাপত্র ঋদ্ধির জন্য— ‘‘নিঃসন্দেহে ভারতের সর্বকালের সেরা কিপারদের এক জন।”

এর আগেও ঋদ্ধিকে নিয়ে সর্বোচ্চ প্রশংসা শোনা গিয়েছে শাস্ত্রীর মুখে। শ্রীলঙ্কায় তাঁর কিপিং দেখে আনন্দবাজারেই মন্তব্য করেছিলেন, ‘‘বিশ্বের সেরা কিপার এখন ঋদ্ধিই।’’ তা নিয়ে তখন কিছু অতি-বিশেষজ্ঞ হাসাহাসি করলেও পরে অনেকেই মেনে নেন সে কথা। পরে ইংল্যান্ডের প্রাক্তন উইকেটকিপার বব টেলরের সঙ্গেও ঋদ্ধির তুলনা করেন শাস্ত্রী। এ দিনও বললেন, ‘‘হ্যাঁ, ঋদ্ধির কিপিং আমাকে টেলরের কথা মনে করায়।’’

মহেন্দ্র সিংহ ধোনি যখন অস্ট্রেলিয়ায় ড্রেসিংরুমে এসে আচমকা বলে দিলেন, তিনি টেস্ট ক্রিকেট থেকে বিদায় নিতে চান, সেই সময় থেকে বিকল্প হিসেবে প্রবেশ ঋদ্ধিমানের। দ্রুতই শাস্ত্রী-কোহলি জমানায় কোচ-অধিনায়কের আস্থা অর্জন করে টেস্টে প্রথম উইকেটকিপার হিসেবে পাকাপাকি জায়গা করে নেন তিনি। ঋষভ পন্থের আবির্ভাবের আগে পর্যন্ত তিনি ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী এক নম্বর। ঋষভের উত্থানে প্রথম কিপারের জায়গা হারাতে শুরু করেন ঋদ্ধি। যা মনে করানোয় শাস্ত্রীর জবাব, ‘‘দলের কম্বিনেশনের স্বার্থে অনেক সময় কঠিন সিদ্ধান্ত নিতেই হয়। ইয়েস, ঋষভকে খেলানো হয়েছে, ঋদ্ধিকে বসাতে হয়েছে। কিন্তু তার পরেও ঋদ্ধি যে ভাবে সেই সিদ্ধান্তকে আদর্শ টিমম্যানের মতো গ্রহণ করেছে, যে ভাবে ঋষভের পাশে দাঁড়িয়ে ওকে সাহায্য করেছে, অতুলনীয়!’’

ঋষভের উত্থানের মধ্যে শাস্ত্রীরা তা-ও ঋদ্ধিকে এমন অসম্মানজনক ভাবে দল থেকে গলা ধাক্কা দেওয়ার অসভ্যতাটা করেননি। বরং তাঁকেই দ্বিতীয় কিপার হিসেবে রেখে দেওয়া হয়েছিল। মাঝে ঋষভকে বসিয়ে ঋদ্ধিকে প্রথম কিপার হিসেবে ফেরানোও হয়েছিল। পালাবদলের পরে নতুনরা এসে এমন এক নীরব সৈনিকের প্রতি সামান্য সৌজন্যটুকু দেখানোর প্রয়োজনও বোধ করল না!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন