বিতর্ক, যন্ত্রণা দূরে সরিয়ে হিনার সোনা

গোল্ড কোস্ট যাত্রার আগে থেকেই শিরোনামে চলে এসেছিলেন ২৮ বছর বয়সি শুটার। সম্পূর্ণ অন্য এক কারণে। তাঁর স্বামী এবং কোচ রোনক পণ্ডিতের কমনওয়েলথ গেমস যাত্রা আটকে গিয়েছিল। যা নিয়ে সে সময় ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন হিনা।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৮ ০৪:১৯
Share:

গর্বিত: সাফল্যে উচ্ছ্বসিত স্বামী এবং কোচ রোনক। সোনা জয়ের পরে কোলে তুলে নিলেন স্ত্রী হিনাকে। ছবি: এএফপি

কমনওয়েলথ গেমসে যাওয়ার আগেই তাঁকে ঘিরে একটা বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল। গোল্ড কোস্টে গিয়ে আবার সমস্যা বাড়িয়ে তোলে তর্জনীর যন্ত্রণা। গুলি চালানোর সময় এই তর্জনীই (ট্রিগার ফিঙ্গার) ব্যবহার করতে হয় শুটারদের। কিন্তু মানসিক এবং শারীরিক সমস্যা দূরে ঠেলে অস্ট্রেলিয়ার গোল্ড কোস্টে নিজের প্রথম ব্যক্তিগত কমনওয়েলথ সোনা জিতে নিলেন হিনা সিধু।

Advertisement

গোল্ড কোস্ট যাত্রার আগে থেকেই শিরোনামে চলে এসেছিলেন ২৮ বছর বয়সি শুটার। সম্পূর্ণ অন্য এক কারণে। তাঁর স্বামী এবং কোচ রোনক পণ্ডিতের কমনওয়েলথ গেমস যাত্রা আটকে গিয়েছিল। যা নিয়ে সে সময় ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন হিনা। তিনি টুইট করেছিলেন, ‘আমি কখনও মিথ্যে বলিনি। কখনও প্রতারণা করিনি। গত ১১ বছর ধরে শুটিং করছি। ছ’বছর ধরে রোনকের সঙ্গে অনুশীলন করছি। আর এই ছ’বছর ধরে আমাকে একটা লড়াই করতে হচ্ছে। কখনও কোচের জন্য অর্থ জোগাড় করতে সমস্যা হয়েছে, কখনও কোচকে সঙ্গে নিয়ে যেতে সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছে। এই লড়াই লড়তে লড়তে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছি।’

কমনওয়েলথ গেমস শুরুর ঠিক আগে হিনার এই মন্তব্যে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়। হিনা আরও টুইট করেছিলেন, ‘আমি সবাইকে বলছি, রোনক আমার টেকনিক্যাল কোচ। পাঁচ মিনিটও যাঁরা আমার সঙ্গে শুটিং রেঞ্জে কাটিয়েছেন, তাঁরা জানেন আমার একজনই কোচ, আর তার নাম রোনক। তা ছাড়া শুটিং দলের ম্যানেজারও কিন্তু রোনক।’ দিন কয়েক টানাপড়েনের পরে ক্রীড়ামন্ত্রক অনুমতি দেয় রোনকের গোল্ড কোস্ট যাওয়ার ব্যাপারে।

Advertisement

মঙ্গলবার হিনা সোনা জেতার সঙ্গে সঙ্গে দেখা যায় রোনক এসে তাঁকে কোলে তুলে নিয়েছেন। হিনা বারবার বলে এসেছেন, পাশে কোচ থাকলে তাঁর কাজটা অনেক সহজ হয়ে যায়। চলতি কমনওয়েলথ গেমসে যেন সেটাই বোঝা গেল। প্রথমে ১০ মিটার এয়ার পিস্তলে রুপো জেতার পরে মঙ্গলবার ২৫ মিটার পিস্তলে সোনা জিতে নিলেন তিনি। তৃতীয় কমনওয়েলথ গেমসে এসে প্রথম ব্যক্তিগত সোনা জিতলেন হিনা। ৩৮ পয়েন্ট স্কোর করে গেমস রেকর্ডও করলেন। ফাইনাল রাউন্ডে পিছনে ফেলে দিলেন অস্ট্রেলিয়ার এলেনা গালিয়াবোভিচ-কে।

হিনার সোনাজয়ের পিছনে কোচের অবদান কতটা, সেটা পরিষ্কার হয়ে যায় রোনকের কথায়। অস্ট্রেলিয়ায় উপস্থিত প্রচারমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, ‘‘গত দু’মাস ধরে আমরা হিনার জন্য খুব কঠিন পরিবেশের সৃষ্টি করেছি যেখানে ওর শুটিং অনুশীলন চলেছে। অনুশীলনের সময় কৃত্রিম ভাবে জোরে হাওয়া চালানো হয়েছে, আওয়াজ করা হয়েছে। যত রকম ভাবে ওর মনঃসংযোগ নষ্ট করা সম্ভব, সেটা করার চেষ্টা করেছি আমরা। ওই পরিবেশে অনুশীলন করে যেতে হয়েছে হিনাকে। যার ফলটা পাওয়া গেল।’’

দু’দিন আগে আঙুলে যন্ত্রণার জন্য ১০ মিটার এয়ার পিস্তল ইভেন্টে সমস্যায় পড়ে গিয়েছিলেন হিনা। মঙ্গলবার বলছিলেন, ‘‘ওই দিন প্রচণ্ড যন্ত্রণা হচ্ছিল। সব কিছু যেন ঝাপসা দেখছিলাম। আমি তো ফিজিওকে বলে দিয়েছিলাম, আমার আঙুলটা ছোঁবে না। ভাগ্য ভাল, আজ যন্ত্রণা অনেক কম ছিল।’’ বেশ কিছু দিন হল এই ‘ট্রিগার ফিঙ্গার’ ভুগিয়ে চলেছে হিনাকে। যে যন্ত্রণা ছাপিয়ে সোনার পদক জিতে নিলেন তিনি।

সোনা জেতার পরে পতাকা নিয়ে একটি ছবি টুইট করেন হিনা। সঙ্গে লেখেন, ‘এই মুহূর্তটার জন্য অপেক্ষা করে ছিলাম... কমনওয়েলথে ব্যক্তিগত সোনা জিততে আট বছর লেগে গেল।’ যে কৃতিত্বের পরে সাইনা নেহওয়াল থেকে ক্রীড়ামন্ত্রী রাজ্যবর্ধন রাঠৌর— সবার কাছ থেকেই শুভেচ্ছা বার্তা পেয়েছেন তিনি। শুভেচ্ছা এসেছে ভিভিএস লক্ষ্মণ, বীরেন্দ্র সহবাগের কাছ থেকেও।

কী মনে হচ্ছে এই জয়ের পরে? সাংবাদিকদের এই প্রশ্নে হিনার জবাব, ‘‘খুব ক্লান্ত লাগছে, এইটুকু বলতে পারি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন