চ্যাম্পিয়ন: কমনওয়েলথ গেমসে প্রথম বার সোনা জেতার পরে ভারতীয় টেবল টেনিস দল। (বাঁ দিক থেকে) মধুরিকা, মৌমা ও সুতীর্থা। ছবি: টুইটার
কমনওয়েলথ গেমসে ইতিহাস তৈরি করল ভারতের মহিলা টেবল টেনিস দল। যে দলের মধ্যে রয়েছেন বাংলার মৌমা দাস। রবিবার ফাইনালে সিঙ্গাপুর-কে ৩-১ ফলে হারিয়ে সোনা জিতে নিলেন মৌমা-রা। এ নিয়ে দ্বিতীয় বার ফাইনালে উঠেছিল মহিলা দল। ২০১০ সালে দিল্লিতে কমনওয়েলথ গেমসে ফাইনালে উঠেছিল
প্রথম গেম থেকেই দুর্দান্ত লড়াই শুরু করে দেন ভারতের মেয়েরা। মণিকা বাত্রা ম্যারাথন ম্যাচ জেতেন ১১-৮, ৮-১১, ৭-১১, ১১-৯, ১১-৭ ফলাফলে। বিশ্বের চার নম্বর তিয়ানওয়েই ফেং-কে হারিয়ে ভারতকে ১-০ এগিয়ে দেন মণিকা। কিন্তু পরের গেমেই মধুরিকা পাটকার-কে সহজেই ১৩-১১, ১১-২, ১১-৬ হারিয়ে দেন মেং ইয়ু। ডাবলস জিতে এর পর মৌমা দাস এবং মধুরিকা পাটকর লড়াইয়ে ফিরিয়ে আনেন ভারতকে। তাঁরা জেতেন ১১-৭, ১১-৬, ৮-১১, ১১-৭ ফলাফলে। তাঁর দ্বিতীয় ম্যাচে ইহান ঝৌ-কে ১১-৭, ১১-৪, ১১-৭ ফলাফলে উড়িয়ে দেন মণিকা। তাতেই নিশ্চিত হয়ে যায় কমনওয়েলথ গেমসের ইতিহাসে টেবল টেনিসে ভারতের প্রথম সোনা।
ফাইনালে অবশ্য ভারত উঠেছিল একই দিনে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে। সহজেই ৩-০ জিতে ফাইনালে উঠেছিলেন মৌমা-রা। ভারতীয় মেয়েদের এই জয় আরও ঐতিহাসিক হয়ে থাকছে কারণ, এর আগে সিঙ্গাপুরের মেয়েরা কখনও কমনওয়েলথ গেমসে হারেনি। ‘‘আমার দূরতম কল্পনাতেও কখনও ভাবিনি কখনও অলিম্পিক্সে পদক পাওয়া এবং বিশ্বের চার নম্বরকে আমি হারাতে পারব,’’ বলেন মণিকা। যাঁকে এখন ভারতের সেরা মহিলা টেবল টেনিস খেলোয়াড় বলা হচ্ছে।
মেরি কমের পদক নিশ্চিত: পাঁচ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন মেরি কম ৪৮ কেজি বক্সিং বিভাগে সেমিফাইনালে উঠে পদক নিশ্চিত করে ফেলেছেন। স্কটল্যান্ডের মেগান গর্ডনকে সহজেই ৫-০ ফলে পরাস্ত করেন তিনি। বক্সিংয়ে এই প্রথম কমনওয়েলথ গেমসে পদক পেতে চলেছে ভারত। সেমিফাইনালে শ্রীলঙ্কার অনুষ্কা দিলরুক্ষির সঙ্গে লড়াই মেরি কমের। এ বারের গেমসে ভারতের তারকা বক্সারকেই সোনা জেতার ব্যাপারে সকলে এগিয়ে রাখছেন।
ভারোত্তোলনে পঞ্চম সোনা: কমনওয়েলথ গেমসে ভারতীয় ভারোত্তোলকদের সোনার দৌড় চলছেই। এ দিন ৬৯ কেজি বিভাগে জিতে পঞ্চম সোনাটি আনলেন পুনম যাদব। ইংল্যান্ডের সারা ডেভিসের চেয়ে এগিয়ে থেকে সোনা জেতেন পুনম। তাঁর তোলা ২২২ কেজির তুলনায় সারা তুলেছিলেন ২১৭ কেজি। শেষ সুযোগে সোনা জেতার জন্য সারা চেষ্টা করেছিলেন ১২৮ কেজি তোলার। কিন্তু ব্যর্থ হন। তাঁকে রুপো নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়। জেতার পরে পুনম বলেন, ‘‘আমি আশা করেছিলান, সব চেয়ে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা আসবে ফিজির দিক থেকে। আশা করিনি ইংল্যান্ড এমন লড়াইয়ে ফেলে দিতে পারে। সারা যখন শেষ সুযোগে ১২৮ কেজি তোলার চেষ্টা করছিল, খুবই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলাম।’’
উত্তর প্রদেশের মেয়ে পুনম গত বারের কমনওয়েলথ গেমসে রুপো জিতেছিলেন। ২২ বছরের পুনম নিজের ফোন নম্বর পর্যন্ত মনে করতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন। কিন্তু পরিষ্কার করে বলে দিলেন, তাঁর পরিবারের আত্মত্যাগের কথা। বললেন, ‘‘আমার বাবা ঋণ নিয়েছিলেন ২০১৪ কমনওয়েলথ গেমসের সময়। যাতে আমার ট্রেনিংয়ে কোনও ঘাটতি না থাকে। আগের কমনওয়েলথে রুপো জেতার পরে আমাদের পরিবার আর্থিক দিকটা কিছুটা সামলে উঠতে পেরেছে। এখন আমি আর আমার বোন মিলেই এখন আমাদের সংসারের খরচ চালাই।’’