বিতর্কে শুরু, বিতর্কে শেষ বিলেত সফর

শেষ বলে স্ট্রাইক রেখে ঠিকই করেছে ধোনি

রবিবারের টি-টোয়েন্টি ম্যাচটা দেখার পর ভারতীয় ক্রিকেট ভক্তদের অনেকেই মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে খলনায়ক হিসেবে দেখবেন। প্রশ্ন অনেক। কেন শেষ ওভারের পাঁচ নম্বর বলটায় ও সিঙ্গলস নিয়ে অম্বাতি রায়ডুকে স্ট্রাইক দিল না? কেন শেষ বলে পাঁচ রান তোলার প্রচণ্ড কঠিন কাজটা নিজের উপর নিজেই চাপিয়ে দিল? আর ক্যাপ্টেন কুলের সমালোচকেরা নিশ্চয়ই বলা শুরু করে দিয়েছেন যে, ধোনির ঔদ্ধত্য, ওর দম্ভ এ বার দলের পক্ষে ক্ষতিকারক হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

Advertisement

দীপ দাশগুপ্ত

শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:২৪
Share:

বিশ্বের সেরা ফিনিশার যে দিন ব্যর্থ। রবিবার এজবাস্টনে। ছবি: এএফপি

রবিবারের টি-টোয়েন্টি ম্যাচটা দেখার পর ভারতীয় ক্রিকেট ভক্তদের অনেকেই মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে খলনায়ক হিসেবে দেখবেন। প্রশ্ন অনেক। কেন শেষ ওভারের পাঁচ নম্বর বলটায় ও সিঙ্গলস নিয়ে অম্বাতি রায়ডুকে স্ট্রাইক দিল না? কেন শেষ বলে পাঁচ রান তোলার প্রচণ্ড কঠিন কাজটা নিজের উপর নিজেই চাপিয়ে দিল? আর ক্যাপ্টেন কুলের সমালোচকেরা নিশ্চয়ই বলা শুরু করে দিয়েছেন যে, ধোনির ঔদ্ধত্য, ওর দম্ভ এ বার দলের পক্ষে ক্ষতিকারক হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

Advertisement

আমার কিন্তু মনে হয়, শেষ বলে নিজে স্ট্রাইকে থেকে একদম ঠিক কাজ করেছে ধোনি। শেষ দু’বলে পাঁচ রান দরকার, উল্টো দিকে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক ঘটানো রায়ডু, এই পরিস্থিতিতে দলকে জেতানোর দায়িত্বটা তো ধোনিরই। ভেবে দেখুন, শেষ বলে বাউন্ডারি মেরে টিমকে জেতাতে হলে আপনারা কার উপর বাজি রাখতেন? রায়ডু? না ধোনি? এ রকম অবস্থা থেকে ধোনি কতগুলো ম্যাচ ভারতকে জিতিয়েছে, গুনে শেষ করা যাবে না। ওর ঠান্ডা মাথা, চাপের মুখে নার্ভের উপর অসাধারণ দখল এর পরেও কি বলা যায় যে শেষ বলে রায়ডু থাকলে আমরা জিততাম?

সত্যি বলতে কী, ধোনি পাঁচ নম্বর বলটায় এক রান নিয়ে রায়ডুকে স্ট্রাইক দিলেই বরং আমি ধোনির সমালোচনা করতে বাধ্য হতাম। এ রকম অবস্থায় দশ বারের মধ্যে দশ বারই আমার বাজি হবে ধোনি। লোকে বলতে পারে, রায়ডু তো এ রকম চাপ আগেও নিয়েছে। আইপিএলে রাজস্থান রয়্যালসের বিরুদ্ধে এ রকমই একটা রুদ্ধশ্বাস ম্যাচ জিতিয়েছে মুম্বইকে। কেকেআরের বিরুদ্ধে একটা ম্যাচে বালাজির শেষ বলে ছয় মেরে জিতিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু তবু বিশ্বের সেরা ফিনিশার ও নয়। সেটা মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। একটা কথা বলুন, ধোনি যদি রায়ডুকে স্ট্রাইক দিত, আর রায়ডু না পারত, তখন কী বলা হত? এটাই তো যে ক্যাপ্টেন নিজে ক্রিজে থেকেও চাপটা নিল না। পালিয়ে গেল। হেরে গেলেও ধোনি পালিয়ে গিয়েছে, সেটা এখন আর কেউ বলতে পারবে না। বরং এ ভাবে দেখা ভাল যে বিশ্বের সেরা ফিনিশারের একটা খারাপ দিন গিয়েছে।

Advertisement

আর শেষ বলের স্ট্রাইক নয়, ম্যাচটা ভারত হেরে গিয়েছিল তার অনেক আগেই। দু’টো টিমের ডেথ বোলিংয়ের তফাতে। ইংল্যান্ড ইনিংসের শেষ পাঁচ ওভারে উঠল ৮১ রান! তিন ওভারে দশ-দশটা ফুল টস। মোহিত শর্মার একটা ওভারে তিনটে ফুল টস। টি-টোয়েন্টির যুগে শেষ পাঁচ ওভারে ৬০-৬৫ রান দেওয়া তা-ও মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু তাই বলে ৮১? তা-ও বুঝতাম এবি ডে’ভিলিয়ার্স বা ক্রিস গেইলের মতো কেউ আছে। তা নয়, বরং ছিল ইয়ন মর্গ্যান, রবি বোপারা! ইংল্যান্ড আবার প্রায় হেরে যাওয়া ম্যাচটা নিয়ে গেল শেষ ওভারে, যেখানে জিততে ১৭ দরকার ছিল ধোনিদের। ভারতীয় বোলারদের সমস্যা হল, ওদের প্ল্যান ‘বি’ নেই। শুধু ইয়র্কার আর স্লোয়ার করব ভেবে ডেথ বোলিং করা যায় না। মোহিত-শামিদের বুঝতে হবে, ইয়র্কারেরও বৈচিত্র দরকার। ঝুলিতে একটার বেশি স্টক বল না রাখলে বিশ্বকাপেও ভাল ব্যাটিং উইকেটে ওরা বিপদে পড়বে।

ভারতের একটাই যা ভাল ব্যাপার হল। বিরাট কোহলির (৪১ বলে ৬৬) ফর্মে ফেরা। কিন্তু বুঝলাম না, বিরাট অত ভাল সেট করে গিয়েও ম্যাচটা শেষ করে ফিরল না কেন? আস্কিং রেট সাতের ঘরে, হাতে সাতটা উইকেট। কিন্তু ১৮০ তাড়া করতে নেমে ও রকম সেট ব্যাটসম্যান ১৩ বা ১৪ নম্বর ওভারে আউট হয়ে গেলে নতুন ব্যাটসম্যানের পক্ষে ওই সময় এসে, সেট হয়ে ম্যাচ জেতানো সহজ কাজ নয়।

রবিবার সেটাই হল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন