‘বার্থডে বয়’

ধোনির পাঁচ মিনিট চান ‘ফ্যান’ আনন্দ

‘‘জীবনটা আমার। পাঁচ মিনিট কেন, পাঁচ সেকেন্ডও তোমাকে দেব কেন?’’ ‘ফ্যান’ ছবিতে ভক্ত গৌরব চাঁদনাকে ঠিক এ ভাবেই কড়া কথা শুনিয়ে দিয়েছিলেন সুপারস্টার আরিয়ান খন্না।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

রাঁচি শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৬ ০৩:১৫
Share:

ধোনির বাড়ির সামনে সেই ভক্ত। -নিজস্ব চিত্র

‘‘জীবনটা আমার। পাঁচ মিনিট কেন, পাঁচ সেকেন্ডও তোমাকে দেব কেন?’’ ‘ফ্যান’ ছবিতে ভক্ত গৌরব চাঁদনাকে ঠিক এ ভাবেই কড়া কথা শুনিয়ে দিয়েছিলেন সুপারস্টার আরিয়ান খন্না। তাতে ভক্তের কাছে খলনায়ক হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। বোকারোর আনন্দকুমার মাহাতো অবশ্য কখনওই তাঁর নায়ক মহেন্দ্র সিংহ ধোনির উপরে রাগ করতে পারবেন না। কিন্তু তাঁরও কাতর প্রার্থনা, ‘‘পাঁচ মিনিটও কি দিতে পারেন না ধোনি?’’

Advertisement

আজ ধোনির জন্মদিন। এ বার রাঁচিতেই আছেন তিনি। প্রতি বারের মতোই সকাল থেকে তাঁর বাড়ির সামনে ফুলের তোড়া, শুভেচ্ছা কার্ড নিয়ে আসছেন অনেকে। হাজির হয়েছেন আঠারো বছরের আনন্দও। নিয়ে এসেছে নিজের বাড়ির গাছের জাম, নিজের হাতে আঁকা ধোনির ছবি। নায়কের বাড়ির নিরাপত্তারক্ষী বলেছেন, ‘‘ও সব গেটে রেখে যান। সাহেবের কাছে পৌঁছে যাবে।’’ কিন্তু সে কথা মানতে রাজি নন আনন্দ। পাঁচটা মিনিটের জন্য দেখা করতে চান তিনি। ভোর পাঁচটা থেকে ঠায় দাঁড়িয়ে থেকেও সে আশা অবশ্য মেটেনি।

গল্পটা তো মিলছে ‘ফ্যান’ ছবির সঙ্গে। মিল অবশ্য আরও আছে। গৌরব চাঁদনার মতোই নায়কের সঙ্গে দেখা করতে বোকারো ছেড়ে রাঁচি এসেছেন আনন্দ। বছর তিনেক আগে রাঁচির মোরাবাদির এক হোটেলে ধোনিকে দেখেছিলেন। তার পরেই আনন্দের মনে হয়, রাঁচির বড় কোনও হোটেলে চাকরি পেলে ধোনির সঙ্গে দেখা হতে পারে। রাঁচি রোডের এক হোটেলে ধোনির যাতায়াত আছে জেনে সেখানে চাকরি নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। পেয়ে গিয়েছেন ফ্রন্ট অফিসের একটি কাজ।

Advertisement

কিন্তু আনন্দের কপাল মন্দ। তিনি চাকরি নেওয়ার পরে ওই হোটেলে আর আসেননি স্বপ্নের নায়ক। রাঁচির সবচেয়ে অভিজাত পাঁচতারাতেই এখন যান তিনি। তাহলে সেই হোটেলে চাকরি নিলেন না কেন? আনন্দ বলছেন, ‘‘চেষ্টা করেছিলাম। প্রায় হয়েও গিয়েছিল। কিন্তু ওই হোটেল কর্তৃপক্ষ জানতে চাইলেন এই চাকরি ছাড়ছি কেন। বলে ফেললাম, ধোনির সঙ্গে দেখা করতে চাই বলে। সঙ্গে সঙ্গে ওঁরা আমায় বিদায় করে দিলেন।’’

এখনও ধোনির সঙ্গে ফ্রেমবন্দি হতে পারেননি। তাই ফটোশপে নায়কের ছবির সঙ্গে নিজেকে জুড়ে দুধের স্বাদ ঘোলে মিটিয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, সম্প্রতি ধোনির নামে উৎসর্গ করে নিজের চক্ষুদানও করেছেন।

ধোনির নামে উৎসর্গ কেন?

আনন্দ জানাচ্ছেন, তাঁর চোখ যিনি পাবেন তিনিও ধোনিকে এমন ভালবাসার চোখে দেখবেন। বোকারোর গরিব খেতমজুর প্রেমচন্দ মাহাতোর ছেলে আনন্দ অবশ্য নিজের পরিবারকে অবহেলা করেন না। বাবাকে মোবাইল কিনে দিয়েছেন তিনি। প্রেমচন্দ জানাচ্ছেন, ‘‘বাড়ির বজরঙ্গবলীর পাশে ধোনির ছবি টাঙিয়েছে ছেলে। নায়কের এত ছবি এঁকেছে যে মোটা অ্যালবাম ভরে যাবে। এমন ভক্তকে কি পাঁচ মিনিট দিতে পারেন না ধোনি?’’

‘ধোনি ম্যানিয়া’ নিয়ে বন্ধুবান্ধবরা ঠাট্টাতামাশা করেন। আনন্দ নিজেই বলছেন, ‘‘ধোনির নম্বর দেবে বলে সবাই ভুয়ো নম্বর দিয়েছে। এমনকী ওঁর ম্যানেজারের নম্বর বলে যেটা দিল সেটাতেও যোগাযোগ করতে পারিনি।’’

‘ফ্যান’ ছবিটা দেখেছেন আনন্দও। তবে নিজের নায়কের সঙ্গে অমন দুর্ব্যবহার করার কথা ভাবতে পারেন না তিনি।

কিন্তু কখন এমন উন্মাদনার শিকার হয় মানুষ?

মনোবিদ অমিত চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘এ সব ক্ষেত্রে অন্য এক ব্যক্তির প্রতি ভালোলাগা এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে তা ভক্তের নিজস্ব সত্তাকে প্রায় গ্রাস করে নেয়। কেবল সিনেমা বা ক্রীড়াজগৎ নয়, ধর্মীয় বা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের ভক্তদের মধ্যেও বার বার এমন উন্মাদনার নজির দেখা গিয়েছে।’’ আরিয়ান খন্নাও তাঁর ভক্তকে বলেছিলেন, ‘‘ফ্যান ছাড়া অন্য কিছু হয়ে দেখাও। কারও সন্তান, কারও বন্ধু, কারও প্রেমিক। তুমি তোমার জায়গায় থাকো, আমি আমার জায়গায়।’’ ভালবাসা আর উন্মাদনার পার্থক্যটা ভক্তরা বুঝলেই ভাল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন