ঋদ্ধির ইনিংস দু’টো খেলতে পারলে ধোনিও গর্বিত হতো

কলকাতায় যে ভারত জিতল, আর জিতে টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বর হয়ে গেল, তার তিনটে স্বতন্ত্র স্তর আছে। যেগুলো ঘটবে, অনেকেই বোধহয় বুঝতে পারেননি। প্রথমত, ঋদ্ধিমান সাহা আস্তে আস্তে ধোনির ছায়া থেকে বেরিয়ে আসছে। ঋদ্ধি হল মহীরুহের ছায়ায় বেড়ে ওঠা চারাগাছ।

Advertisement

রবি শাস্ত্রী

শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:৪৯
Share:

কলকাতায় যে ভারত জিতল, আর জিতে টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বর হয়ে গেল, তার তিনটে স্বতন্ত্র স্তর আছে। যেগুলো ঘটবে, অনেকেই বোধহয় বুঝতে পারেননি।

Advertisement

প্রথমত, ঋদ্ধিমান সাহা আস্তে আস্তে ধোনির ছায়া থেকে বেরিয়ে আসছে। ঋদ্ধি হল মহীরুহের ছায়ায় বেড়ে ওঠা চারাগাছ। কোরাসের এক জন সদস্য যে এখন মাইকের পিছনের প্রধান গায়ক।

সাহা নিজে এত সাদাসিধে যে, ওর কীর্তিই শুধু ওর হয়ে কথা বলে। ওর ছিপছিপে, রোগা শরীরে লুকিয়ে আছে দৃঢ়তা, সঙ্কল্প আর প্রতিভার চর্বি। ওর চরিত্র ধোনির মতো মোটেই ফ্ল্যামবয়েন্ট নয়। ওর পূর্বসূরি যেমন পারত, সাহা সে ভাবে স্টেডিয়ামের মালিকানা নিয়ে নিতে পারে না। এত কিছুর পরেও ওকে যখন ধোনির শূন্যস্থান পূরণ করতে বলা হয়েছে, ও হোঁচট খায়নি। বরং ও রীতিমতো ঘোড়া ছুটিয়ে দিয়েছে। যেটা দেখে আপনাদের মনে হতেই পারে, এ কি শুধু আট নম্বরে ব্যাট করতে পারে? না কি যে কোনও জায়গায় ও সাবলীল? ইডেনে সাহা যে দুটো ইনিংস খেলল, ধোনি সে দুটো খেলতে পারলে গর্বিত হত। এর চেয়ে ভাল প্রশংসা আমার মাথায় তো আসছে না।

Advertisement

প্রথম দিকে ওর কিপিংয়ের জন্য সাহাকে দলে নেওয়া হয়েছিল। যে কাজে ও এতটাই মসৃণ যে, মনে হয় বলটা ওর গ্লাভসে মিশে যায়। স্লিপের দিকে ব্যাকহ্যান্ডেড লব তো সাহার ট্রেডমার্ক হয়ে গিয়েছে। ব্যাটসম্যান হিসেবে দেখছি ও বাউন্ডারিতে রান করতে পছন্দ করে। বেশির ভাগ ফ্রন্ট ফুটে। ওর রান মাপতে বসলে ভুলে যাবেন না, ডান হাতের উপরের দিকে কী মারাত্মক আঘাত ও পেয়েছিল। উফ, নিশ্চয়ই প্রচণ্ড যন্ত্রণা করছিল। কিন্তু সাহা কী করল? না, শুধু কাঁধটা এক বার ঝাঁকিয়ে আবার লড়াইয়ের জন্য তৈরি হয়ে গেল। দ্বিতীয় নতুন বলও সাহাকে নড়াতে পারেনি। আর এই নিউজিল্যান্ড টিম আর যাই হোক, বল হাতে মোটেও খারাপ নয়।

রোহিত শর্মারও নিজস্ব একটা অনুচ্ছেদ প্রাপ্য। ইডেন উইকেটটা ওর মনের মতো ছিল না। রোহিতের মতো আশ্বস্ত, বহমান ব্যাটসম্যান অত ভেবে-টেবে খেলতে পছন্দ করেও না। ওই পরিস্থিতিতে ধূর্ত ব্যাটসম্যান ভাল করবে। কারণ ওখানে একাগ্রতা চাই, যেটা রোহিতের যথেষ্ট পরিমাণে নেই বলে প্রায়ই সমালোচনা হয়েছে।

তৃতীয়ত, এটা নিয়ে ভাবতে হবে যে, ইডেন গার্ডেন্সে স্পিনারদের চেয়ে বড় ভূমিকা নিয়েছে ভুবি আর শামি। ওরা অক্লান্ত ভাবে ব্যাটসম্যানদের দিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। কখনও ভুবি ওদের ফ্রন্ট ফুটে টেনে আনছে তো কখনও শামি ব্যাক ফুটে ঠেলে দিচ্ছে। ঘরের মাটিতে স্পিন-সাফল্য দেখে বড় হয়ে ওঠা দর্শকের পক্ষে এই বিস্ফোরণের ভবিষ্যদ্বাণী করা অসম্ভব ছিল। নিউজিল্যান্ডের তিন পেসারের চেয়ে ভুবি আর শামি অনেক ভাল বল করেছে। যেটা কম কথা নয়।

ভারত কিন্তু নিউজিল্যান্ডের উপর পুরো কর্তৃত্ব রেখে চলেছে। বললে হবে না যে, দুটো টেস্টেই লোয়ার অর্ডার ভারতকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। এই ছোট ছোট জিনিসগুলোতেই ভাল টিম অন্যদের চেয়ে এগিয়ে। ইডেনে ভারত অধিনায়ক দুর্দান্ত ছিল— ওর ফিল্ড সাজানো, তার পর শামি আর ভুবিকে সঠিক ভাবে ব্যবহার করা। পেসারদের রিজার্ভ বেঞ্চ যদি এত ভাল হয়, তা হলে যে কোনও পরিবেশে ভারত খুব ভাল টিম হয়ে উঠবে। অদূর অতীতে এই ছেলেগুলো আমারই হেফাজতে ছিল। আজ ওদের আনন্দ আর সাফল্যে আমিও সমান ভাগিদার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন