ডার্বিতে মেতেছে বাংলা।
মোহনবাগান কোচ সঞ্জয় সেন বলে এসেছেন আলাদা করে ডার্বিকে তিনি গুরুত্ব দিচ্ছেন না। বরং আই লিগের আরও একটি ম্যাচ খেলতে নামছেন তাঁরা। কিন্তু ক্রমশ বদলেছে পরিবেশ। শিলিগুড়ি যাওয়ার আগে থেকেই মুখে কুলুপ বাগান শিবিরে। শিলিগুড়ি পৌঁছে যেন থমথমে পরিবেশ গঙ্গাপাড়ের ক্লাবে। উল্টোদিকে, দারুণ ফুরফুরে মেজাজে টিম ইস্টবেঙ্গল। মাঠের মধ্যে মর্গ্যান জমানার চেনা খুনসুটি তো রয়েছেই সঙ্গে অনুশীলনেও বিন্দাস মেজাজে মেহতাবরা। ড্রেসিংরুমে নেই কোনও টেনশন। মোহনবাগান শিবিরে অবশ্য ঝড়ের আগের নিস্তব্ধতা। রবিবারের ডার্বি ঘিরে যখন তাতছে গোটা শিলিগুড়ি তখন দুই শিবিরে দু’রকম চিত্র। মর্গ্যান অবশ্য নিজেই খোলসা করলেন তাঁর দলের ফুরফুরে মেজাজের কারণ। বলেন, ‘‘আমি প্লেয়ারদের বলেছি চাপ না নিতে। হালকা মেজাজে থাকতে। এটা আরও একটা ম্যাচ। ড্রেসিংরুমকেও হালকা মেজাজেই থাকতে বলেছি।’’
আরও খবর: মরসুমের প্রথম ডার্বি, মন খারাপ কলকাতার
শিলিগুড়ি ইস্টবেঙ্গলের ডেন। উত্তরবঙ্গে সমর্থনের বিচারে এগিয়ে ইস্টবেঙ্গলই। তার উপর কলকাতা থেকেও শিলিগুড়িতে হাজির হয়েছে প্রচুর সমর্থক। কলকাতা থেকে অবশ্য দলে দলে মোহনবাগান সমর্থকরাই ইতিমধ্যেই পৌঁছে গিয়েছেন সেখানে। যা খবর ৩০ হাজারের গ্যালারি হলেও টিকিট ছাড়া হয়েছে ২৯ হাজার। প্রথম দিকে যে ভাবে টিকিটের জন্য হাহাকার শোনা যাচ্ছিল দিন এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে তা কমেছে অনেকটাই। তার মধ্যেই বিপাকে পড়েছে আগে টিকিট কিনে ফেলা সমর্থকরা। মোহনবাগানের প্রতিবাদে টিকিট পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে ইস্টবেঙ্গল। এমএমবি-র জায়গায় মোহনবাগান লেখা স্টিকার লাগিয়ে শেষ বেলায় সমস্যার সমাধান করা গিয়েছে। কিন্তু এমএমবি লেখা টিকিট নিয়ে ঢোকা যাবে না স্টেডিয়ামে। কাউন্টারে গিয়ে সেই টিকিটে মোহনবাগান লেখা স্টিকার লাগিয়ে তবেই ঢোকার অনুমতি পাওয়া যাবে। ম্যাচের দিন এটাই কিছুটা সমস্যায় ফেলবে সমর্থকদের।
আরও খবর: এ বারের সেরা টিমটা ইস্টবেঙ্গলেরই, বলছেন বাগান কোচ সঞ্জয় সেন
এদিকে, কেউই দলে বিশেষ কোনও পরিবর্তন আনছেন না। ডার্বির দলে থাকছে না কোনও চমক। আই লিগে টানা জিতে আসা দুই দলই তাদের উইনিং কম্বিনেশন ভাঙতে নারাজ। যদিও ইস্টবেঙ্গল রক্ষণে ফিরতে পারেন অর্ণব মণ্ডল। বুকেনিয়ার পাশে ভালই মানিয়ে নিয়েছেন গুরবিন্দর সিংহ। কিন্তু তাঁর পরিবর্ত হিসেবে এদিন অর্ণবকে ভাল মতই দেখে নিলেন মর্গ্যান। ইস্টবেঙ্গলের গোলে খেলবেন রেহনেশই। রক্ষণে রাহুল ভেকে, বুকেনিয়া, গুরবিন্দর/অর্ণব, নারায়ন দাস। মাঝমাঠে লালরিন ডিকা, ওয়েডসন, মেহতাব হোসেন ও নিখিল পূজারি। ফরোয়ার্ডে উইলিস প্লাজা ও রবিন সিংহ। মর্গ্যান অবশ্য শুধু বিদেশিদের নিয়ে মাতামাতি করতে নারাজ। বলেন, ‘‘শুধু বিদেশি নয় পুরো টিম ফ্যাক্টর। প্লাজা যে গোলটা করবে সেটির পাস কিন্তু বাড়াবে ডিকা বা মেহতাব। তাই সকলেই গুরুত্বপূর্ণ দলে।’’
অনুশীলনে ইস্টবেঙ্গল।
মোহনবাগানেও তেমন কোনও পরিবর্তন নেই। দল অনেকটা এই রকমই থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। গোল দেবজিৎ মজুমদার। রক্ষণে প্রীতম কোটাল, এডুয়ার্ডো, আনাস ও শুভাশিস। মাঝমাঠে কাটসুমি ইউসা, প্রণয় হালদার, সনি নর্ডি ও সৌভিক/বিক্রমজিৎ। ফরোয়ার্ডে ড্যারেল ডাফির সঙ্গে জেজে লালপেখলুয়া। যদিও শেষবার এই শিলিগুড়িতেই নির্বাসিত থাকার জন্য রিজার্ভ বেঞ্চে বসতে পারেননি মোহনবাগান কোচ সঞ্জয় সেন। বসতে হয়েছিল গ্যালারিতে। সেই আফসোস তো রয়েছেই। এ বার সেটা পুষিয়ে নিতে চান ডার্বি জিতে। বলেন, ‘‘এই ম্যাচ থেকে তিন পয়েন্টটাই লক্ষ্য।’’ বিদেশিদের নিয়ে মাতামাতি বাগান কোচ কখনওই খুব একটা পছন্দ করেন না। এদিনও সেটা পরিষ্কার করে দিলেন, ‘‘ফুটবল ১১ জনের খেলা। আগে বিদেশিরা ম্যাচ জেতাত। কিন্তু এখন ফুটবল বদলে গিয়েছে। পুরো টিমকে একসঙ্গে সমানভাবে খেলতে হয়।’’ ইস্টবেঙ্গলের অচেনা বিদেশিদের নিয়ে চিন্তা রয়েছে সবুজ-মেরুন শিবিরে। কোচ বলেন, ‘‘ইস্টবেঙ্গলের সব বিদেশিরাই অচেনা। আর এচেনা দলের বিরুদ্ধে খেলা সব সময়ই ঝুঁকির। তবে আই লিগে এখন যা অবস্থা যেই হারুক বা জিতুক চ্যাম্পিয়নশিপের লড়াইয়ে দু’দলই থাকবে।’’
আরও খবর: ডার্বির আগে প্রতিপক্ষকে সমীহ করেই জয়ের হুঙ্কার দিয়ে রাখলেন মর্গ্যান
ডার্বির প্রভাব সুস্বাদু খাওয়ারেও।