দূর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসে এ রকম একটা খবর পেয়ে শোকস্তব্ধ হয়ে গিয়েছি। সকালে শুনছিলাম ওঁর বাইপাস দরকার হচ্ছে না। একটু ভাল আছেন। শুনে মনটা ভাল হয়ে গেল। দুপুরে লাঞ্চে কোথায় যাব, রাত্রে কোন স্যুটটা পড়ব ভাবছিলাম। এই সময় ফোনে আনন্দবাজারের সাংবাদিক খবরটা জানান।
আমি জগমোহন ডালমিয়ার বরাবরের সাপোর্টার উনিও আমার সাপোর্টার। আমি এখনও ‘ছিলেন’ শব্দটা ব্যবহারই করতে পারছি না। এতটাই শকিং। বেশ কিছু দিন ধরেই লেখালেখি হচ্ছিল যে ওঁর শরীর খুব খারাপ হয়ে গিয়েছে। আমি মুম্বই ক্রিকেটেও ভাইস প্রেসিডেন্ট। অনেকের সঙ্গে কথা বলতে হয়। তারা অনেকেই বলছিল, যখন পারছে না তখন ধরে আছে কেন। আমি এটা মানার কারণ দেখি না।
আমার মনে হয়েছিল তা হলে বোর্ডের সবার মেডিক্যাল রিপোর্ট খোঁজ করা হোক। কোথাও না কোথাও অপারেশনের খোঁজ পাওয়া যাবে। তারা কি ছেড়ে দিয়েছে? তা হলে উনি ছাড়বেন কেন? কয়েক মাস আগে আইপিএল চলার সময় ওঁর সঙ্গে কলকাতায় দেখা করে আসি। শরীর খারাপ ছিল ঠিকই, কিন্তু গল্প করতে কিছু অসুবিধে হয়নি। আমাকে বন্ধু সাংবাদিক জিজ্ঞেস করছিলেন ডালমিয়া আমার দেখা সেরা ক্রিকেট প্রশাসক কি না। ভারত ছাড়ুন, আমি বলব আমার দেখা বিশ্বের সেরা ক্রিকেট প্রশাসক।
আমাকে যেটা সবচেয়ে টানত ক্রিকেটারদের প্রতি ওঁর সহৃদয়তা। কখনও কোনও ক্রিকেটার ওঁর কাছে সাহায্য চেয়ে ফিরে গিয়েছে শুনিনি। অদ্ভুত ভাবে ওঁর সঙ্গে আমার অন্তরঙ্গতা ঊননব্বইয়ে বোর্ড যখন আমাদের সাসপেন্ড করে সেই সময়। সেই সাসপেনশনের পিছনে মূল উদ্যোগ ওঁর ছিল। আর যারা সাসপেন্ড হয়েছিল তাদের মধ্যে ছিলাম আমি একজন। ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আমরা আদালতে যাই। এ রকম একটা সময় বন্ধুত্ব হওয়ার কথাই নয়। তার পর থেকে সেটা বজায় ছিল।
আমাকে যেটা সবচেয়ে আকর্ষণ করেছিল ওঁকে ২৪X৭ পাওয়া যেত। আর সব তথ্য ছিল ওর নখদর্পণে। অনেক বড় ক্রিকেটারকে ম্যাচের আগে প্রিপারেশন করতে দেখেছি। সুনীলকে দেখেছি, সচিনকে দেখেছি। কিন্তু এক জন ক্রিকেট প্রশাসক যে এত তৈরি হয়ে বৈঠকে আসতে পারেন ভাবাই যায় না। এবং ভোটে জেতার বৈঠক নয়, ক্রিকেট উন্নয়নের বৈঠক। ডালমিয়া আমাকে ট্যালেন্ট রিসার্চ উইংয়ের চেয়ারম্যান করেছিলেন। আমাদের কাজ ছিল ভারতবর্ষের বিভিন্ন এলাকা, বিশেষ করে অনুন্নত এলাকা থেকে ক্রিকেটার তৈরি করা। এই স্কিম থেকেই মহেন্দ্র সিংহ ধোনির উত্থান। সেই সময় কাজটার মধ্যে গ্ল্যামারের ছিটেফোঁটাও ছিল না। কেউ নাম শোনেনি, জানে না, চেনে না এমন সব প্লেয়ার। আমি ছাড়া কার খেয়ে দেয়ে কাজ পড়েছে সেটা নিয়ে ভাবতে। ডালমিয়া কিন্তু সে সব নামও ফাইলে নিয়ে আসতেন। আমাদের মনে হয় সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ডিটেলের উপর লক্ষ্য আর ক্রিকেটারদের প্রতি ভালবাসাই ওকে এ রকম অপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্রিকেট প্রশাসক করে তুলেছে। এমন প্রখর বুদ্ধিও আর কারও মধ্যে দেখিনি।
জানি না এই শূন্যস্থান কী ভাবে পূরণ হবে।