মায়ের কাছে। আগরতলার বাড়িতে দীপা কর্মকার শুক্রবার। ছবি-বাপি রায়চৌধুরী।
ঘরে ফিরলেন দীপা। ফেরার জন্য ফিরলেন না, আর এক নতুন দৌড় শুরু করার জন্য ছুঁয়ে যাচ্ছেন ত্রিপুরার আগরতলার উজান অভয়নগরের বাড়ি। ক’টা দিন মায়ের কাছে থেকে একটু আদর, ভালবাসা, বাবার আশীর্বাদ নিয়েই ফের মে দিবসের দিন চলে যাবেন দিল্লি। ঠিক করা হবে দীপার আগামী তিন মাসের ‘প্রাক্টিস সিডিউল’। ঠিক হবে, দিল্লিতেই চলবে তাঁর অনুশীলন নাকি ট্রেনিং করবেন বিদেশে। মাঝখানে তো মে-জুন-জুলাই। অগস্টেই শুরু হচ্ছে রিও অলিম্পিক্স-২০১৬।
আজ সকালে তাঁদের ঘরের মেয়েকে স্বাগত জানাতে আগরতলা বিমানবন্দর ছিল ভিড়ে ভিড়াক্কার। শেষ পর্যন্ত সিআইএসএফের নিরাপত্তা কর্মীরা প্রথমে অন্য যাত্রীদের বের করে তারপরে দীপা কর্মকার ও তাঁর কোচ বিশ্বেশ্বর নন্দীকে কর্ডন করে নিয়ে বেরোয়। ভিড়ে দলের ব্যানার ও স্লোগান নিয়ে হাজির হন ত্রিপুরা বিজেপির একদল নেতা-কর্মীও। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে দীপাকে নিয়ে তাঁর বাবা দুলাল কর্মকার ও কোচ একটি গাড়িতে উঠে বাড়ির পথ ধরেন। বিমানবন্দরে মা-দিদির সঙ্গে দেখাই হয়নি দীপার।
দীপাকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে এবং চিত্র-সাংবাদিকদের জন্য কিছু পোজ্ দিয়েই বেরিয়ে যেতে হয় দীপার বাবা, সাইয়ের হেভিওয়েট কোচ দুলালবাবুকে। মা মেয়েকে মিষ্টিমুখ করান। বাড়িতে ভিড় ছিল আত্মীয়স্বজন-প্রতিবেশীদের। তাঁদের সঙ্গেই থাকেন পিসি, গীতা দেব। খুশিতে ডগমগ পিসি জানান, ‘‘ছোট থেকেই দীপা আমার খুব ন্যাওটা।’’ আত্মীয়স্বজনদের উল্লাসের ফাঁকেই দীপার কোচ বিশ্বেশ্বর নন্দী জানান, পয়লা মে-ই তাঁরা দিল্লি চলে যাবেন। সেখানে সাইয়ের সঙ্গে মিটিং। সেখানেই ঠিক হবে, পরের তিন মাসের অনুশীলন কোথায় হবে। তিনি জানান, রিও থেকে ফিরে দিল্লিতে সাইয়ের ডিজির সঙ্গে তাঁদের কথা হয়েছে। ডিজি জানান, দীপার সব থেকে ভাল অনুশীলনের জন্য দেশে বা বিদেশে, যেখানে যা করার তিনি করবেন।’’ বিশ্বেশ্বরবাবু সাইয়ের প্রতি তাঁদের কৃতজ্ঞতার কথা বারবার জানিয়েছেন। দিল্লি বিমানবন্দরে যে দুই ফেডারেশন কর্তাদের ‘দীপা-দখলের লড়াই’-কে ঘিরে দীপার সাংবাদিক সম্মেলন বাতিল হয়ে যায়, সেই ফেডারেশন কর্তাদের আকচাআকচিতেই দীপার রিও যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল। শেষ পর্যন্ত সাইয়ের উদ্যোগেই দীপা রিওতে যায়। আগরতলায় এই দিন দশেকে দীপাকে তিনি হাল্কা, একবেলা অনুশীলন করাবেন বলে কোচ জানান।
দীপা জানান, অলিম্পিক্স থেকে পদক আনার জন্য তিনি সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করবেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, শচীন তেণ্ডুলকর সকলেই তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। দীপা আপ্লুত। এখন লক্ষ্য, ‘‘এঁদের সবার ও দেশের মুখ যেন আমি রাখতে পারি!’’