কমনওয়েলথ জার্নি শুরুর আগে দীপার পরামর্শ দুই প্রণতিকে

জিমন্যাস্টিক্সের নিয়মানুযায়ী টুনার্মেন্ট শুরুর আগের দিন কী ভাবে প্রতিযোগিতা হবে, তার অনুশীলন হয়। যাকে বলা হয়, পোডিয়াম ট্রেনিং।

Advertisement

রতন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৮ ০৪:২৩
Share:

দীপা কর্মকার।

ভারতীয় সময় ভোর ছ’টায় যখন কমনওয়েলথে পোডিয়াম ট্রেনিং দিতে যাচ্ছেন তার কিছুক্ষণ আগে এসেছে মোবাইল বার্তায় সকালের শুভেচ্ছা।

Advertisement

প্রায় চার ঘণ্টা পর দুই বঙ্গকন্যা— প্রণতি নায়েক ও প্রণতি দাস যখন অস্ট্রেলিয়ার গোল্ড কোস্ট-এর স্টেডিয়াম থেকে ফিরছেন, তখনও তাঁদের মোবাইলে ফের ভেসে উঠেছে দীপা কর্মকারের পাঠানো প্রশ্ন? ‘‘কী রে কেমন করলি ট্রেনিং? ভল্ট, বিম, অ্যাপারেটাস সব ঠিক আছে তো। পয়েন্ট কত হল?’’

জিমন্যাস্টিক্সের নিয়মানুযায়ী টুনার্মেন্ট শুরুর আগের দিন কী ভাবে প্রতিযোগিতা হবে, তার অনুশীলন হয়। যাকে বলা হয়, পোডিয়াম ট্রেনিং। স্টেডিয়াম থেকে গেমস ভিলেজে ফেরার পথে ‘দীপাদিদি’-র মেসেজ পেয়ে অবশ্য অবাক হননি দুই প্রণতিই। কারণ এটা তাদের প্রতিদিনের পাওনা রিও অলিম্পিক্সের তারকা জিমন্যাস্টের কাছ থেকে। ভারতীয় সময় বুধবার দুপুর দেড়টায় প্রণতি দাসকে যখন অস্ট্রেলিয়ায় ফোনে পাওয়া গেল তখন তিনি অনুশীলন থেকে ফিরে বিশ্রাম নিচ্ছেন। বলে দিলেন, ‘‘দীপাদিদি-র সঙ্গে দিল্লিতে প্রায় দেড় মাস ট্রেনিং করেছি। এখানে যে দিন থেকে এসেছি সে দিন থেকে সকাল-বিকেল খোঁজ নেয় অনুশীলনে কী কী করছি। দীপাদিদি আমাদের সবার অনুপ্রেরণা।’’ প্রণতি নায়েকের গলায়ও ভারতীয় জিমন্যাস্টিক্সের মুখ দীপা-র সাহায্যের কথা বলতে গিয়ে উচ্ছ্বাস। বলছিলেন, ‘‘এখানে আসার আগে দিদি আমাদের বারবার বলেছে, আগে ফাইনালে ওঠার কথা ভাবতে। তারপর পদকের কথা। শুরুতেই পদক নিয়ে ভেবে চাপ নিতে বারণ করেছে।’’

Advertisement

কমনওয়েলথে এ বার যতগুলো ভারতীয় দল গিয়েছে, তাদের মধ্যে সবার শেষে ছাড়পত্র পেয়েছে জিমন্যাস্টিক্স। ছেলেদের দল নির্বাচন নিয়ে আদালতে মামলা এবং কর্তাদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই এই ঝামেলা। মেয়েদের কোচ হিসাবে বাংলার মিনারা বেগম এলেও তাই ছেলে দলের সঙ্গে কোনও প্রশিক্ষক আসেননি। যা কখনও হয়নি। তা নিয়ে আশিস কুমার, রাকেশ পাত্র, যোগেশ্বর সিংহদের প্রচণ্ড ক্ষোভ। জিমন্যাস্টিক্সে কোচ থাকাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দুই প্রণতিই বলছিলেন, ‘‘স্প্রিং বোর্ড ঠিক করে দেন কোচ। সব চেয়ে বড় কথা, পয়েন্ট নিয়ে সমস্যা হলে কোচ-ই গিয়ে পরীক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেন।’’

স্বপ্নপূরণ: উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভারতের পতাকা হাতে পি ভি সিন্ধু। ছবি: পিটিআই

আজ বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে কমনওয়েলথের জিমন্যাস্টিক্স ইভেন্ট। যে খেলাগুলি থেকে পদক আসতে পারে বলে ধরা হচ্ছে, তার মধ্যে আছে আশিস-প্রণতিদের খেলা। ২০১০ সালে দেশের প্রথম জিমন্যাস্ট হিসাবে কমনওয়েলথে পদক জিতেছিলেন ইলাহাবাদের আশিস কুমার। গেমস ভিলেজ থেকে ফোনে আশিস বলছিলেন, ‘‘কোচ ছাড়া জীবনে প্রথম নামছি। নিজেকেই সব সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’’ তিন মেয়ে, বাংলার দুই প্রণতি আর তেলেঙ্গনার অরুণা রেড্ডি-কে নিয়ে পড়ে আছেন মেয়েদের কোচ মিনারা। তীব্র বিতর্কের মধ্যে শেষ মুহূর্তে কোচ হয়ে এসেছেন টিমের সঙ্গে। ছাত্রীদের মতো তাঁর কাছেও এ বারের কমনওয়েলথ চ্যালেঞ্জের। জয়নগর মজিলপুরের প্রণতি দাস আর পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রণতি নায়েক দেশের দুই তারকা জিমন্যাস্ট। চার বছর আগে দু’জনেই গিয়েছিলেন গ্লাসগোর কমনওয়েলথ গেমসে। সফল হননি। এ বার সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে মরিয়া তাঁরা।

দুই প্রণতি প্রতিপক্ষ হিসাবে ধরছেন বেলজিয়াম, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ইংল্যান্ড-কে। ‘‘ইউ টিউবে যত টুকু পাই প্রতিপক্ষকে দেখি। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই ওদের চিনেছি।’’ বলছিলেন এক প্রণতি। অন্য প্রণতির মন্তব্য, ‘‘নিজেদের সেরাটা দিতে পারলেই পদক পেয়ে যাব। তবে আগে তো ফাইনালে উঠতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন