দিল্লিতে জাতীয় ট্রায়ালে নামার আগে দীপার প্রস্তুতি।
ত্রিপুরার কোথাও শো রুম নেই বলে সচিন তেন্ডুলকরের হাত থেকে বিএমডব্লিউ উপহার পেয়েও ফেরত দিয়েছিলেন। গাড়ি ফেরত দেওয়ার টাকা থেকে কয়েকদিন আগে কিনেছেন নীল রংয়ের এলান্ট্রা। তবে, গাড়ি বদলালেও ভল্টে কোনও পরিবর্তন আনতে চাইছেন না দীপা কর্মকার।
বরং তাঁর নিজস্ব ব্র্যান্ড হয়ে ওঠা প্রোদুনোভা ভল্টকে আরও সঠিক করার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করলেন রিও অলিম্পিক্সে হইচই ফেলে দেওয়া বঙ্গতনয়া। জিমন্যাস্টিক্স বিশ্ব যখন তাঁকে ঝুঁকির প্রোদুনোভা ভল্ট থেকে সরে আসার পরামর্শ দিচ্ছে তখন দীপা তাঁর সিদ্ধান্তে অনড়। আগরতলা থেকে ফোনে দীপার কোচ বিশ্বেশ্বর নন্দী বলে দিলেন, ‘‘প্রথমে ভেবেছিলাম অন্য ভল্টে চলে যাব। কিন্তু এখন সেই ভাবনা বদলেছি। দীপাও চাইছে না এত দিন ধরে অনুশীলন করে আসা প্রোদুনোভা বদলাতে। আমিও তাই চাই। বরং অনুশীলনে চেষ্টা করছি যাতে ল্যান্ডিংটা আরও সঠিক করা যায়।’’
আজ রবিবার বড়দিনেই দিল্লি যাচ্ছেন জাতীয় শিবিরে ট্রায়াল দিতে দীপা। সামনেই বিশ্ব ও এশীয় চ্যাম্পিয়নশিপ। আগরতলায় দীপার অনুশীলনের জন্য ফোম পিট তৈরির কাজ শুরু হয়েছে কয়েকদিন আগে। যা শেষ হতে মাস চারেক লাগতে পারে। সে জন্য দিল্লিই আপাতত ঘাঁটি দ্রোণাচার্য পুরস্কার জয়ী কোচ ও তাঁর ছাত্রীর।
বড়দিনের মেজাজে তাঁর অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী সিমোন বাইলস।
তবে প্রোদুনোভা না ছাড়লেও বিশ্বেশ্বর ও দীপা ঠিক করেছেন, অন্য ইভেন্ট সুকাহারা ভল্টে কিছু পরিবর্তন আনতে। রিও-তে সুকাহারা ৭২০ করেছিলেন। যার অর্থ বিম থেকে শূণ্যে শরীর ছুঁড়ে দিয়ে দু’বার ভল্ট দিয়ে মাটি ছোঁয়া। ভারতের প্রথম মেয়ে জিমন্যাস্ট অলিম্পিয়ান এ বার ৭২০ থেকে বাড়িয়ে সেটা ৯০০ তে নিয়ে যেতে চাইছেন। অর্থাৎ দুই থেকে বাড়িয়ে সেটা আড়াইতে নিয়ে যাওয়া। নেতাজি সুভাষ রিজিওনাল ট্রেনিং সেন্টারের পিট পরিচর্যার ফাঁকে দীপার কোচ বলছিলেন, ‘‘এটা করা খুব কঠিন। তবে পয়েন্ট বাড়াতে গেলে সেটা করতেই হবে। রিও-র মতো এশীয় বা বিশ্ব স্তরেও ওই দুটি ভল্টকে সঙ্গী করেই পদক চাইছে দীপা।’’
রিও অলিম্পিক্সে পদক না পেলেও চতুর্থ হয়েছিলেন দীপা। তাঁকে নিয়ে তা সত্ত্বেও বয়ে গিয়েছিল সংবর্ধনার ঢেউ। এখন সেখান থেকে অনেকটাই বাস্তবের মাটিতে তিনি। প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা অনুশীলন করছেন আগের মতোই। দিল্লিতে গিয়ে শুরু করবেন চূড়ান্ত প্রস্তুতি। বিশ্বেশ্বর বলছিলেন, ‘‘রিও আর আমাদের মাথায় নেই। সামনে পরপর বড় চ্যাম্পিয়নশিপ। চ্যালেঞ্জার্স কাপ জাতীয় আরও ছোট কিছু টুনার্মেন্ট আছে। বেছে বেছে নামাব ছাত্রীকে।’’ ইতিমধ্যেই দীপাকে তিনি কী ভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছেন সেই পরিকল্পনার কথা সাইকে জানিয়েছেন বিশ্বেশ্বর।
দীপা অবশ্য আগের মতোই কোচের কথায় সায় দিচ্ছেন। অনুশীলনের ফাঁকে তাঁর মন্তব্য, ‘‘প্রোদুনোভা ছাড়ার কোনও ইচ্ছে নেই আমার। নিজের ভল্টেই সামনের টুনার্মেন্ট গুলোতে নামব।’’
ছবি: টুইটার।