শ্রীসন্থ থেকে আজহার চালিয়ে সতর্ক করা হচ্ছে ক্রিকেটারদের

আইপিএলআটের ধুন্ধুমার শুরুর সঙ্গে ক্রিকেটারদের উপর কড়াকড়িও চালু হয়ে গেল। এবং যা অন্যান্য বারের চেয়ে অনেক বেশি। এত দিন ক্রিকেটারদের উপর চেনা কয়েকটা বিধিনিষেধ চাপিয়ে দেওয়া হত। যেমন মোবাইল ফোন ড্রেসিংরুমে ব্যবহার করা যাবে না। বা হোটেল ছেড়ে বেরোতে হলে জানিয়ে যেতে হবে দুর্নীতিদমন অফিসারকে। কিন্তু এ বারের বজ্রআঁটুনি অভূতপূর্ব।

Advertisement

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায় ও রাজীব ঘোষ

শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৫ ০৪:০৬
Share:

আইপিএলআটের ধুন্ধুমার শুরুর সঙ্গে ক্রিকেটারদের উপর কড়াকড়িও চালু হয়ে গেল। এবং যা অন্যান্য বারের চেয়ে অনেক বেশি।

Advertisement

এত দিন ক্রিকেটারদের উপর চেনা কয়েকটা বিধিনিষেধ চাপিয়ে দেওয়া হত। যেমন মোবাইল ফোন ড্রেসিংরুমে ব্যবহার করা যাবে না। বা হোটেল ছেড়ে বেরোতে হলে জানিয়ে যেতে হবে দুর্নীতিদমন অফিসারকে। কিন্তু এ বারের বজ্রআঁটুনি অভূতপূর্ব।

এক দিকে যেমন বিভিন্ন ভিডিও দেখানো চলছে, তেমনই আবার নানাবিধ ‘ডুজ অ্যান্ড ডোন্টস’-এরও নিয়মাবলী চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তার উপর রাজস্থান রয়্যালসের এক ক্রিকেটারকে তাঁর রঞ্জি-সতীর্থ গড়াপেটার প্রস্তাব দেওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়তে কড়াকড়ি আরও বাড়ে। দেশের বিভিন্ন স্টেডিয়ামে শোনা গেল পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে দুর্নীতিদমন শাখার অফিসারদের। যাঁদের কয়েক জন ছিলেন ইডেনেও। এবং ক্রিকেটারদের আইপিএল আট চলাকালীন নির্দেশাবলী এবং সতর্কতা বাড়ানো নিয়ে যা যা বলা হচ্ছে তা নীচে তুলে দেওয়া হল:

Advertisement

এক) ক্রিকেটারদের দূরে থাকতে বলা হচ্ছে ‘হানি ট্র্যাপ’ থেকে। বোঝানো হচ্ছে ব্যাপারটা কী ভাবে হয়। যেমন ধরা যাক কোনও ক্রিকেটারের সঙ্গে কোনও এক সুন্দরী তরুণীর আলাপ হল। আলাপ থেকে বন্ধুত্ব। বন্ধুত্ব থেকে প্রেম। এবং কয়েক দিন পরেই হয়তো দেখা যাবে, সংশ্লিষ্ট ক্রিকেটারের মোবাইলে একটা এমএমএস ঢুকল। যেখানে ওই তরুণীর সঙ্গে তাঁর অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি। শেষে একটা ফোন আসবে যেখানে ক্রিকেটারকে যে কোনও একটা বিকল্প বেছে নিতে বলা হবে। হয় বুকিদের কথামতো চলা। গড়াপেটায় যুক্ত হওয়া। নইলে ক্রিকেটারের ওই অন্তরঙ্গ এমএমএস চলে যাবে ইন্টারনেটে! বারবার করে ক্রিকেটারদের বলা হচ্ছে, অচেনা মহিলাদের থেকে দূরে থাকতে।

দুই) ভিডিও দেখানো হচ্ছে ভারতের দুই প্রবাদপ্রতিম ক্রিকেটার—রাহুল দ্রাবিড় এবং অনিল কুম্বলের। যেখানে তাঁরা বলছেন, কী ভাবে পরিচ্ছন্ন ক্রিকেট খেলতে হবে। অতীতের বড়-বড় ক্রিকেটারের উদাহরণ টেনে তাঁরা বলছেন, কী ভাবে সৎ পথে তাঁরা ক্রিকেট খেলে গিয়েছেন।

তিন) চোখের সামনে চালানো হচ্ছে শান্তাকুমারণ শ্রীসন্থের ভিডিও ক্লিপিংসও। আইপিএল গড়াপেটা কাণ্ডে প্রধান অভিযুক্তের মধ্যে ছিলেন শ্রীসন্থ। ক্লিপিংস দেখিয়ে ক্রিকেটারদের সতর্ক করা হচ্ছে, কী ভাবে বুকিদের ফাঁদে পড়ে গিয়েছিলেন শ্রীসন্থ।

চার) অতীতে গড়াপেটার সঙ্গে কয়েক জন ক্রিকেট ব্যক্তিত্বের কেলেঙ্কারিও দেখানো হচ্ছে। যেমন আজহার। যেমন ক্রোনিয়ে।

পাঁচ) ক্রিকেটারদের বলা হচ্ছে, টিমের কোনও খবরাখবর বাড়ির লোককেও না বলতে! সোজাসুজি বললে, এক জন ক্রিকেটার পরের দিন ম্যাচে খেলছেন কি খেলছেন না, সেটা তাঁর বাবা-মাকেও বলা যাবে না। বলা হচ্ছে, নিজেদের নিকটতমকেও বিশ্বাস না করতে। পরিবারের লোকজন যদি পরিচিত কাউকে সেটা বলে ফেলেন আর সে যদি তার থেকে অন্যায় ফায়দা তোলে, তাই এই সতর্কতা।

ছয়) ক্রিকেটারদের ঘরে যখন-তখন ঢুকে পারেন দুর্নীতিদমন কর্তারা। ইংরেজিতে যাকে বলে ‘সারপ্রাইজ ভিজিট’। ক্রিকেটারকে বলে তাঁর ঘরে সেই কর্তাকে আসতে হবে, তার কোনও মানে নেই।

সাত) সমস্ত ক্রিকেটারকে তাঁর চেনা-পরিচিত বন্ধুবান্ধবদের নাম, ফোন নম্বর জমা করতে হবে দুর্নীতিদমন কর্তাদের কাছে। কোনও রকম সন্দেহজনক গতিবিধি তাঁরা দেখলেই যাতে দ্রুত তদন্ত শুরু করে দিতে পারেন।

আট) কোন কোন সাংবাদিকের সঙ্গে যোগাযোগ আছে বা থাকে, তাদের নামও জমা করতে হবে।

নয়) ক্রিকেটাররা কেউ অনুমতি ছাড়া হোটেলের বাইরে যেতে পারবেন না। গেলেও সঙ্গে করে এক জন দুর্নীতিদমন কর্তাকে দেওয়া হবে।

দশ) ক্রিকেটারদের ফেসবুক বা টুইটারের উপরও নজরদারি চালানো হতে পারে। সন্দেহজনক কিছু দেখলে চাওয়া হতে পারে ব্যাখ্যা। এমনকী ফোন ট্যাপ করাও অসম্ভব কিছু নয়। আর গড়াপেটার কোনও ক্রিকেটারের কাছে আসার পরেও যদি তিনি না জানান, তা হলে তাঁকে মোটা অঙ্কের জরিমানা দিতে হতে পারে।

রাতে আইপিএল চেয়ারম্যান রাজীব শুক্ল ফোনে বললেন, ‘‘দুর্নীতির সঙ্গে কোনও আপস করা হবে না। আইপিএলকে কলঙ্কমুক্ত করার জন্য যা যা দরকার, সব করা হবে।’’

এখন দেখার, সেটা সত্যিই কতটা হয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement