নজরে: চার্চিল বধের নায়ক স্যামুয়েল কিনসি। ফাইল চিত্র
শেষের দিকে এসে আই লিগের সব হিসেব ওলট-পালট করে দিচ্ছে পাহাড়ের দলগুলো।
চেন্নাই সিটি এফ সির সঙ্গে ৩-০ পিছিয়ে পড়ে ৩-৩ ড্র করে আকবর নওয়াজের দলকে খেতাবের লড়াইতে হঠাৎই থমকে দিয়েছে নেরোকা এফ সি। আর অশ্বমেধের ঘোড়ার মতো খেতাবের দিকে এগিয়ে যাওয়া চার্চিল ব্রাদার্সকে ৩-২ গোলে হারিয়ে উইলস প্লাজাদের বিপদে ফেলে দিয়েছে শিলং লাজং।
নেরোকা বা লাজং কেউই খেতাবের লড়াইয়ে নেই। কিন্তু হঠাৎই তারা নির্ণায়ক ভূমিকা হয়ে উঠেছে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লড়াইয়ে।
আজ বৃহস্পতিবার আলেসান্দ্রো মেনেন্দেসের দলকে কি আদৌ বিপদে ফেলতে পারবে শিলং? চেন্নাই থেকে ফোনে পেদ্রো মানজ়িদের কোচ আকবর নওয়াজ বললেন, ‘‘লম্বা লিগে ওঠা নামা হবেই। কিন্তু নেরোকার সঙ্গে আমাদের ফলটা যেমন অপ্রত্যাশিত, তেমনই চার্চিলের বিরুদ্ধে শিলংয়ের হারাটাও অঘটন ঘটাতে পারে।’’ প্রতিযোগিতা শুরুর দিন থেকেই অপরাজিত থেকে লিগ শীর্ষে ছিল চেন্নাইয়ের দলটি। কিন্তু হঠাৎই তাদের ধাক্কা খাওয়া শুরু হয়েছে। সিঙ্গাপুর নিবাসী কোচ আকবর বললেন, ‘‘এই লিগে কোনও কমজোরি দল নয়। এই মুহূর্তে আই লিগের যা পরিস্থিতি, তাতে কেউ এখনই বলতে পারবে না সে চ্যাম্পিয়ন হবে। ইস্টবেঙ্গল-শিলং ম্যাচের পরেই ওদের সঙ্গে আমাদের ম্যাচ। ফলে ওই ম্যাচটার উপর নজর তো রাখতেই হবে। বৃহস্পতিবার তাই কড়া নজর রাখতে হবে ইস্টবেঙ্গল বনাম লাজং এফসি ম্যাচে।’’ ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলছেন জবি জাস্টিনরা। ঘরের মাঠে শিলং লাজং এবং রবিবার চার্চিল ব্রাদার্সকে হারাতে পারলেই ৩৪ পয়েন্টে পৌছে যাবে আলেসান্দ্রো মেনেন্দেসের দল। এখন তো চেন্নাই ৩৪ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে রয়েছে। চেন্নাইকে অবশ্য পরের ম্যাচ খেলতে হবে শিলংয়ের বিরুদ্ধে সেই পাহাড়ে গিয়েই। গরম থেকে ঠান্ডায় গিয়ে খেলতে হবে পেদ্রো মানজ়িদের। সেক্ষেত্রে আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াও একটা বড় চ্যালেঞ্জ চেন্নাই সিটি এফসির কাছে।
চেন্নাই কোচ চাইছেন ইস্টবেঙ্গল পয়েন্ট নষ্ট করুক। কী চাইছেন খালিদ জামিল? আজই দিপান্দা ডিকাদের নিয়ে আইজলের বিরুদ্ধে ম্যাচ খেলতে পাহাড়ে যাচ্ছেন মোহনবাগান কোচ। ইস্টবেঙ্গল বনাম শিলং লাজং ম্যাচের ফল নিয়ে কিছু বলতে নারাজ লাল-হলুদের গত মরসুমের কোচ। তবে বললেন, ‘‘চার্চিলকে হারানোর পর শিলং খুব তেতে আছে। ম্যাচটা উপভোগ্য হবে আশা করছি। ইস্টবেঙ্গলও খুব ভাল খেলেছে নেরোকার বিরুদ্ধে। কঠিন ম্যাচ জিতেছে।’’
আইজলকে দু’বছর আগেই আই লিগ চ্যাম্পিয়ন করে হইহই ফেলে দিয়েছেন। পাহাড়ি ছেলেদের হাতের তালুর মতো চেনেন। বলছিলেন, ‘‘পাহাড়িদের সব চেয়ে বড় গুণ হচ্ছে প্রতিটি বলের জন্য লড়াই করে। শেষ মিনিট পর্যন্ত লড়ে যায়। গতিময় ফুটবল খেলার চেষ্টা করে। তার উপর ওরা অবনমন বাঁচানোর লড়াইয়েও আছে। চার্চিলের মতো শক্তিশালী দলকে যেভাবে ৩-২ গোলে হারিয়েছে, সেটা বড় ব্যাপার।’’
ফেডারেশনের দল ইন্ডিয়ান অ্যারোজ ছাড়া শিলং-ই একমাত্র দল যে দলে কোনও বিদেশি নেই। তাদের প্রায় সব ফুটবলারই ভূমিপুত্র। এবং তাঁদের সবার গড় বয়স কম। চার্চিলের বিরুদ্ধে যে ছেলেটি জোড়া গোল করে গোয়ার পারিবারিক দলে অন্ধকার নামিয়েছেন, সেই স্যামুয়েল কিনসি স্থানীয় ছেলে। চার্চিল ২-২ করার পর নোয়ারেম মহেশ সিংহ শিলংকে জেতান গোল করে। নোয়ারেম মণিপুরের ছেলে। খালিদ বলছিলেন, ‘‘পাহাড়ি ছেলেরা খুব লড়াকু হয়। সেই কাজটা শুরু করেছে লাজং। জানি না শেষ পর্যন্ত কে নামবে। তবে ওরা তো একটা চেষ্টা করবেই। এখনও পাঁচটি ম্যাচ বাকি রয়েছে ওদের। সেই পাঁচ ম্যাচে অবনমন বাঁচানোর জন্য অবশ্যই মরিয়া হবে শিলংয়ের দলটি। আর অভিজ্ঞতা থেকে জানি তাগিদ সামনে থাকলে তেতে ওঠে পাহাড়ি ছেলেরা।’’ পাশাপাশি অবশ্য তাঁর আরও মন্তব্য, ‘‘ইস্টবেঙ্গলও অনেক ম্যাচ পিছিয়ে পড়ে জিতেছে। আমার মতে খেতাবের লড়াইতে এখনও চারটি দল আছে। চেন্নাই, ইস্টবেঙ্গল, রিয়াল কাশ্মীর এবং চার্চিল। যা পরিস্থিতি, শেষ দু’ ম্যাচে হয়তো খেতাব নির্ধারিত হবে। এ বার আই লিগ বেশ জমে গিয়েছে।’’