বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য
মোহনবাগান অনূর্ধ্ব-২৩ ফুটবলার খেলানো নিয়ে শুক্রবার যে সমস্যায় পড়েছিল, এই ঝামেলায় আমরাও পড়তে পারতাম। এবং সেটা একেবারে লিগ শুরুর ম্যাচেই।
কাকতালীয় ভাবে বিপক্ষে ছিল টালিগঞ্জ অগ্রগামীই। হয়েছিল কী, ম্যাচটা তখন ড্র চলছিল। লাল-হলুদে সেটা ছিল আমার প্রথম ম্যাচ। প্রচণ্ড টেনশনে ছিলাম। অনূর্ধ্ব ২৩ ফুটবলারকে তুলে নিয়ে অন্য একজনকে নামাতে বলেছিলাম। সে ওয়ার্ম আপও শুরু করে দিয়েছিল। কিন্তু পিছনে বসে থাকা স্বপনদা (বল) কী ভাবে যেন জানতে পারেন আমরা কার বদলে কাকে নামাচ্ছি। সঙ্গে সঙ্গেই তিনি এসে আমাদের ভুল ধরিয়ে দেন। বহু দিনের ম্যানেজার উনি। জানেন রুল বুক পড়া থাকলেও কোথায় ভুল করে ফেলতে পারি আমরা। ফলে সে যাত্রায় রক্ষা পেয়ে গিয়েছিলাম। খারাপ কিছু ঘটার আগেই।
বাগান সেই ভুলটাই করে ফেলেছে। আসলে খেলার উত্তেজনা, টেনশনের মাঝে অনেক সময় এই ব্যাপারগুলো কোচদের মাথা থেকে বেরিয়ে যায়। আমি তো সঞ্জয়কে (সেন) কোনও দোষ দেব না। ওর মতো পরিস্থিতিতে আমিও পড়তে পারতাম সে দিন। যদি না স্বপনদা থাকতেন। ওর দিকে আঙুল তোলার কোনও মানে হয় না। আমি তো বলব, ক্লাব কর্তারা যাঁরা মাঠে ছিলেন তাঁরা কী করছিলেন? তাঁরা কেন স্বপনদা-র মতো সতর্ক করেননি কোচকে? ম্যানেজার হিসেবে যিনি রিজার্ভ বেঞ্চে বসবেন, তাঁকেও নিয়ম সম্পর্কে অবশ্যই ওয়াকিবহাল হতে হবে। এটা তো খেলারই অঙ্গ।
ক্রীড়াসূচি তৈরি হওয়ার অনেক আগেই আইএফএ কলকাতা লিগের নিয়মগুলো পাঠিয়ে দিয়েছিল সব ক্লাবের কাছে। কর্তারা সেই নিয়মাবলি আমাদের দিয়েছিলেন। সেটা হাতে পেয়ে আমরা প্রথমেই ভাল করে পড়ে নিয়মগুলো বোঝার চেষ্টা করেছি। অসুবিধা হলে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছি। প্রয়োজনে কর্তাদের সঙ্গে গিয়েও এ ব্যাপারে কথা বলেছি। তার পরও তো টালিগঞ্জ ম্যাচে আমরা ভুল করতে বসেছিলাম। আমার মনে হয়, মোহনবাগান কর্তাদের আরও একটু তৎপর হওয়ার দরকার ছিল। শুধু তাই নয়, আর্মি একাদশ ম্যাচেও তো শুনলাম ওরা নিয়ম না জানার জন্য পয়েন্ট নষ্ট করেছে। ম্যানেজার হয়ে যিনি রিজার্ভ বেঞ্চে বসছেন তাঁর এই নিয়মগুলো যেমন ভাল করে জানা উচিত, তেমন কর্তারাও এর দায় এড়িয়ে যেতে পারেন না। তাঁরা যদি সঠিক নিয়ম জানতেন, তবে আর্মি ম্যাচের তিন পয়েন্ট পেত মোহনবাগানই।
মোহনবাগান অবশ্য নিয়ম না জেনে আমাদেরই সুবিধে করে দিয়েছে। আমি চাই, ডার্বির আগেই মোহনবাগান-টালিগঞ্জ ম্যাচের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিক আইএফএ। যে টিম নিয়ম মানেনি, তার প্রতিপক্ষ দল পয়েন্ট পাবে। এটাই তো স্বাভাবিক। তা হলে আমাদের সঙ্গে মোহনবাগানের পয়েন্টের ব্যবধান আরও বাড়বে। সঞ্জয়ের টিমের ফুটবলারদের কাছে এটা কিন্তু একটা বড় ধাক্কা হতে পারে।
লিগে হয়তো আমরা এখন ভাল জায়গায় আছি। কলকাতা লিগ আমাদের হাতের মুঠোয় এটা বলার সময় অবশ্য আসেনি। বলতে পারি, লিগ জেতার ব্যাপারে আমি আশাবাদী। তবে লিগ জিতলেও ডার্বি না জিতলে এর কোনও দাম থাকে না। এটা অনেকটা এক বালতি দুধে এক ফোটা চোনা পড়ার মতো।
আর্মান্দো কোলাসো লিগ জিতলেও ডার্বি জিততে পারেননি। বড় ম্যাচের সময় বাড়ি চলে গিয়েছিলেন। ও সব গোয়ায় হয়, কলকাতায় হয় না। ইস্ট-মোহন সমর্থকদের ক্লাব। এখানে লিগের মতোই ডার্বি জয় গুরুত্বপূর্ণ। সে বার ডার্বিকে আর্মান্দো গুরুত্ব না দেওয়ায় সমালোচনার ঝড় বয়ে গিয়েছিল সর্বত্র। আসলে, উনি গোয়ার কোচ। তাই ডার্বিকে ঘিরে সমর্থকদের আবেগ কী, তা বুঝতে পারেননি। আর এ বার তো আরও একটা ব্যাপার জড়িয়ে আছে লিগ-জয়ের সঙ্গে। চল্লিশ বছর আগের ইতিহাসকে স্পর্শ করতে পারবে আমার ছেলেরা। এই আবেগটাও তো ইস্টবেঙ্গলের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমি চাই না, ফুটবলারদের আত্মতুষ্টির জন্য সব ভেস্তে যাক। লিগ জিততে হলে আরও কিছুটা পথ যেতে হবে। এবং সেটা সহজ নয়। শনিবারই তো মহমেডান সাত গোলে জিতে চমকে দিয়েছে। ওরা কিন্তু আমাদের ঘাড়ের কাছেই নিঃশ্বাস ফেলছে।
আমার কাছেও এই লিগের গুরুত্ব আলাদা। একটা বড় চ্যালেঞ্জ নিয়ে ইস্টবেঙ্গলে এসেছি। এর আগে শুরু থেকে দায়িত্ব নিয়ে আমি কখনও লিগ পাইনি। পাশাপাশি দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই শুনে আসছিলাম, আমি ব্যর্থ হলেই ট্রেভর মর্গ্যানকে কোচ করে আনা হবে। ফুটবলার জীবনে বিপক্ষে জামশেদ নাসিরি, চিমা ওকোরি, কৃশানু দে-র মতো ফুটবলারদের সঙ্গে লড়েছি। আসলে প্রতিপক্ষ যত কঠিন, জয়টা ততই মধুর হয়। মর্গ্যানের মতো কোচ উল্টো দিকে আছেন বলেই হয়তো জেদটাও বেড়ে গিয়েছে। তবে আমি একা নই, ফুটবলাররাই আমাকে এই সাফল্য পেতে সাহায্য করছে।
আসলে ইস্টবেঙ্গল এই মুহূর্তে কোচ-ফুটবলার সবাই মিলে টিম গেম খেলছে। আর আমার মতোই সবাই জোড়া লক্ষ্য পূরণ করতে মরিয়া। শুধু লিগ নয়, আমরা ডার্বিটাও জিততে চাই।