ভরসা: আরও দুই মরসুমের জন্য কোচ হয়ে লাল-হলুদে নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছেন মেনেন্দেস (মাঝখানে)। ফাইল চিত্র
ইস্টবেঙ্গল আই লিগে চ্যাম্পিয়ন হতে পারবে কি না সময়ই বলবে। তবে আরও দু’বছর যে আলেসান্দ্রো মেনেন্দেস গার্সিয়াই কোচ থাকবেন, বুধবার তা জানিয়ে দেওয়া হল সরকারি ভাবে।
রিয়াল মাদ্রিদ ‘বি’ ও রিজার্ভ দলের প্রাক্তন কোচ চলতি মরসুমে কলকাতা লিগ শেষ হওয়ার পরে সরকারি ভাবে দায়িত্ব নেন। তাঁর কোচিংয়ে টানা দু’ম্যাচ জিতে আই লিগে অভিযান শুরু করে ইস্টবেঙ্গল। তার পরে টানা তিনটি ম্যাচ হারলেও দুর্দান্ত ভাবে খেতাবি দৌড়ে প্রত্যাবর্তন ঘটান জবি জাস্টিন, এনরিকে এসকুয়েদারা। শুধু তাই নয়। দু’টি ডার্বিতেই মোহনবাগানকে হারান তাঁরা। আলেসান্দ্রোর কোচিংয়েই পনেরো বছর পরে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন সমর্থকেরা। এর পরেই তাঁর সঙ্গে চুক্তি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন ক্লাব কর্তারা। মিনার্ভা এফসি-কে হারিয়ে সোমবার কলকাতায় ফিরে ফুটবলারদের দু’দিন বিশ্রাম দেন তিনি। ছুটির মধ্যেই আরও দু’মরসুমের জন্য আলেসান্দ্রোর সঙ্গে চুক্তি সেরে ফেলে ইস্টবেঙ্গল। উচ্ছ্বসিত লাল-হলুদ কোচ বলেছেন, ‘‘ক্লাবের নতুন পরিচালন সমিতি যে ভাবে আমার উপরে আস্থা রেখেছে এবং সহায়তা করছে তাতে আমি অভিভূত। আরও দু’বছর ইস্টবেঙ্গলের দায়িত্ব পেয়ে আমি দারুণ খুশি।’’ তিনি যোগ করেন, ‘‘ইস্টবেঙ্গলকে বিশ্বমানের ক্লাবে পরিণত করাই এ বার আমার লক্ষ্য।’’
আলেসান্দ্রোর সঙ্গে চুক্তি পুনর্নবীকরণের খবরে উচ্ছ্বসিত ফুটবলারেরাও। প্রত্যেকেই মনে করেন, সাফল্যের মূল কারিগর আলেসান্দ্রোই। তিনি দায়িত্ব নিয়েই বদলে দিয়েছেন ইস্টবেঙ্গলকে। কোচের জন্যই কঠিন পরিস্থিতিতেও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তাঁরা। এক ফুটবলার বলছিলেন, ‘‘আইজল এফসি-র বিরুদ্ধে ড্রয়ের পরে আমরা অনেকেই খেতাবের আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। কোচ তখন বলেছিলেন, লিগের শেষ পর্বে অনেক কিছু হতে পারে। তাই কখনও হাল ছাড়লে চলবে না। শেষ পর্যন্ত লড়াই করে যাওয়ার মানসিকতা দরকার।’’
কোচের পরামর্শেই হতাশা ভুলে গিয়েছেন তাঁরা। তাই মিনার্ভা ম্যাচ খেলে কলকাতায় ফিরে আলেসান্দ্রো দু’দিন ছুটি দিলেও শুধু বিশ্রাম করেই সময় কাটাননি তাঁরা। জিমে গিয়ে ফিটনেস ট্রেনিং করেছেন। আজ, বৃহস্পতিবার সকালে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন সংলগ্ন মাঠে অনুশীলন করবেন।
আই লিগের যা অঙ্ক তাতে ৯ মার্চ শেষ ম্যাচে গোকুলম এফসি-র বিরুদ্ধে শুধু জিতলেই হবে না ইস্টবেঙ্গলকে। তাকিয়ে থাকতে হবে চেন্নাই সিটি এফসি বনাম মিনার্ভা ম্যাচের দিকে। এই মুহূর্তে ১৯ ম্যাচে ৪০ পয়েন্ট নিয়ে লিগ টেবলের শীর্ষে চেন্নাই। সমসংখ্যক ম্যাচ খেলে ৩৯ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে এনরিকেরা। গোকুলমের বিরুদ্ধে জিতলে ইস্টবেঙ্গল শেষ করবে ৪২ পয়েন্ট নিয়ে। পেদ্রো মানজ়িরা যদি হারিয়ে দেন মিনার্ভাকে, তা হলে ৪৩ পয়েন্ট নিয়ে তাঁরাই চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাবেন। লাল-হলুদ শিবিরে এখন একটাই প্রার্থনা, শেষ ম্যাচে চেন্নাই যেন জিততে না পারে। তবে চেন্নাই যদি হেরে যায়, আর ইস্টবেঙ্গল ড্র করে তা হলেও খেতাব হাতছাড়া হবে। কারণ, তখন দু’দলেরই পয়েন্ট হবে ৪০। আই লিগের নিয়মে মুখোমুখি সাক্ষাতে চেন্নাই দু’বার ইস্টবেঙ্গলকে হারানোয়, তারাই চ্যাম্পিয়ন হবে।
লাল-হলুদের ফুটবলারেরা অবশ্য আই লিগের জটিল অঙ্ক নিয়ে ভাবছেন না। তাঁদের কথায়, ‘‘আমাদের কাছে একটাই অঙ্ক— গোকুলমকে হারানো। যা আমাদের হাতে নেই, তা নিয়ে ভেবে মনঃসংযোগ নষ্ট করতে চাই না।’’ প্রথম পর্বে গোকুলমকে ৩-১ চূর্ণ করেছিল ইস্টবেঙ্গল। কিন্তু শনিবারের ম্যাচে প্রতিপক্ষকে একেবারেই হাল্কা ভাবে নিচ্ছেন না লাল-হলুদ শিবিরের কেউ।
এ দিকে, বুধবার ইস্টবেঙ্গলের বিনিয়োগকারী সংস্থার প্রধান কর্তার সঙ্গে বেঙ্গালুরুতে আলোচনায় বসেছিলেন ফেডারেশন সচিব কুশল দাস। বৈঠকে আইএসএলে ইস্টবেঙ্গলের খেলা নিয়েও কথা হয়েছে এই দুই কর্তার মধ্যে।