ছেলের জয়, দলের হার

শেষ হাসি সেই লাল-হলুদেরই

খেলার শেষে সেরা গোলকিপারের পুরস্কারটা থেকে গেল শিলিগুড়িতেই। দেশবন্ধু পাড়ার জয় দত্ত যখন কাপ হাতে নিলেন, আট-ন’হাজার দর্শক ফেটে পড়ছিলেন চিৎকারে। এঁরা সকলেই কিন্তু বাঘাযতীন ক্লাবের সমর্থক নন। লাল-হলুদের হয়েও এতক্ষণ অনেকে গলা পাঠিয়েছেন।

Advertisement

সৌমিত্র কুণ্ডু

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:১৩
Share:

রক্ষণে ইস্টবেঙ্গলের হানাদারি তিন কাঠির নীচে দাঁড়িয়ে অনেকবারই ফেরালেন জয়। বৃহস্পতিবার কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে।—বিশ্বরূপ বসাক

ইস্ট বেঙ্গল ৩ (জিতেন, প্রহ্লাদ, ওয়েডসন): বাঘা যতীন

Advertisement

খেলার শেষে সেরা গোলকিপারের পুরস্কারটা থেকে গেল শিলিগুড়িতেই। দেশবন্ধু পাড়ার জয় দত্ত যখন কাপ হাতে নিলেন, আট-ন’হাজার দর্শক ফেটে পড়ছিলেন চিৎকারে। এঁরা সকলেই কিন্তু বাঘাযতীন ক্লাবের সমর্থক নন। লাল-হলুদের হয়েও এতক্ষণ অনেকে গলা পাঠিয়েছেন। কিন্তু ঘরের ছেলের হাতে সেরার পুরস্কার উঠতেই ‘জয়, জয়’ চিৎকারে মিলে গেল সকলের গলা।

বাঘাযতীন ক্লাবকে সেরা গোলকিপারের পুরস্কার পেতে দেখে এবং স্কোর লাইনে চোখ বুলিয়ে এর মধ্যে অনেকেই ধরে নিয়েছেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামের প্রদর্শনী ম্যাচ কতটা একপেশে ছিল। এবং ভুল ধরেছেন। এক দিকে জয়ের হাত যখন নিশ্চিত গোল থেকে দলকে বাঁচাচ্ছিল, অন্য দিকে তখন থুপদেন ভুটিয়া বা উত্তম রাইদের আক্রমণ উঠে আসছিল ইস্টবেঙ্গল অর্ধে।

Advertisement

বস্তুত, থুপদেনের শট যখন ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণ নাড়িয়ে গোলকিপারের কাছে পৌঁছয়, খেলার ফল তখনও ০-০। সেই গোল হলে কী হতো, তা নিয়ে খেলার শেষেও আফসোস করছিলেন বাঘাযতীনের সমর্থকেরা। দ্বিতীয়ার্ধে আরও দুটি সুযোগ পায় ভূমিপুত্ররা। কিন্তু দিনের সেরা সুযোগটা মিস করেন উত্তম রাই। ফাঁকা গোলে বল ঠেলতে পারেননি তিনি। ৩৩ মিনিট পর্যন্ত এই লড়াইটা চালানোর পরে বাঘাযতীনের দুর্গে যে শেষ অবধি ফাটল ধরল, তার প্রধান কারণ এক জন হাইতির নাগরিক। ওয়েডসন অ্যানসেলেম এ দিনই প্রথম লাল-হলুদ জার্সি গায়ে নামলেন। এর আগে অনুশীলনের জন্য হাতে পেয়েছিলেন মোটে তিন দিন। কিন্তু তাতেই কাঞ্চনজঙ্ঘার ফ্লাড লাইটে ঝলক দেখালেন তিনি। নিজে তো গোল করলেনই, তার আগে আরও দুটো গোল করালেন জিতেন আর প্রহ্লাদকে দিয়ে। স্বাভাবিক ভাবে কোচ ট্রেভর মর্গান খুশি।

খেলার শেষে ওয়েডসনের সঙ্গে মোহনবাগানের সনি নর্ডির তুলনা উঠে গেল। আর সেই আলোচনাকে সযত্নে এড়িয়ে গেলেন মর্গান। বললেন, ‘‘সনি নর্ডির সঙ্গে কোনও তুলনায় যেতে চাই না। সনি লেফট উইং-এ খেলে। ওয়েডসন মিড ফিল্ডার। ক্রমেই নিজের খেলা মেলে ধরেছে সে। গোলও করেছে। এক কথায় বলল ভালই।’’

ম্যাচের শুরুতে মাঠ বুঝতে মিনিট দশেক সময় নিয়েছেন ওয়েডসন। তার পরে নারায়ণ দাস, প্রহ্লাদ রায়, জিতেন মুর্মুদের নিয়ে আক্রমণে উঠতে থাকেন। ২০ মিনিটের মাথায় ইস্টবেঙ্গলের পেনাল্টি বক্সের বাইরে থেকে বল ধরে মাঠের বাঁ দিক ধরে একের পর এক বিপক্ষের ফুটবলারদের ড্রিবল করে যে ভাবে গোলের সামনে হানা দিলেন, তাতে হই হই করে উঠল গোটা মাঠ। সেই আক্রমণ থামিয়ে দিলেন জয়।

তবে ৩৪ মিনিটের আর পারলেন না দেশবন্ধু পাড়ার ছেলেটি। বাঘাযতীনের পেনাল্টি বক্সের মধ্যে ফাঁকায় থাকা জিতেনের দিকে ঠান্ডা মাথায় বল বাড়িয়ে দেন ওয়েডসন। জিতেন ভুল করেননি। চার মিনিটের মধ্যে পরের গোলের পিছনেও সেই ওয়েডসন। এ বার পাস থেকে গোল করে গেলেন প্রহ্লাদ। দ্বিতীয়ার্ধের পাঁচ মিনিটের মাথায় নিজের গোলটা পেলেন হাইতির এই ফুটবলার। জয় এগিয়ে এসেছিলেন কিছুটা। ওয়েডসন তাঁর মাথার উপর দিয়ে তুলে দেন বলটা।

এ দিন কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়াম থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে একটি ফুটবল ম্যাচের ফাইনালে অতিথি হয়ে এসেছিলেন মোহনবাগান কোচ সঞ্জয় সেন। কাঞ্চনজঙ্ঘার খেলা তিনি দেখলেন না। তবে ওয়েডসনের খবর তাঁর কাছে পৌঁছে গিয়েছে বৈকি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন