রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে গত বছর ইউরোপজুড়ে সবথেকে বেশি সঠিক পাস বাড়িয়েছিলেন তিনি। অ্যাঞ্জেল দি মারিয়া।
শেষ কয়েক মরসুমে ১৫৩ গোল। স্ট্রাইকিং জোনে অন্যতম বিপজ্জনক ফুটবলার। রাদামেল ফালকাও।
গত তিন বছরে দু’বার প্রিমিয়ার লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা। রবিন ফান পার্সি।
প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় চতুর্থ। ইংল্যান্ডের এক নম্বর স্ট্রাইকার। ওয়েন রুনি।
এক সঙ্গে যাঁরা এখন পরিচিত ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের ‘গ্যালাকটিকোস’ হিসাবে। তবে সেই স্বপ্নের দল নিয়েই দুঃস্বপ্নের হার হজম করতে হল ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডকে। রবিবার প্রিমিয়ার লিগের লড়াইয়ে সদ্য দ্বিতীয় ডিভিশন থেকে উঠে আসা লেস্টার সিটির কাছে ৩-৫ হারল ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড।
প্রথমার্ধের শুরুতে যদিও ছন্দেই শুরু করে লুই ফান গলের দল। ফালকাওর পাসে ফান পার্সির গোলে ১-০। যার কিছুক্ষণ পরেই দি মারিয়ার বিশ্বমানের ‘লবে’ ২-০। যা দেখে প্রাক্তন ইংল্যান্ড স্ট্রাইকার গ্যারি লিনেকার টুইট করেন, “ভাবলে অবাক লাগে কী করে রিয়াল মাদ্রিদ এই ফুটবলারকে বিক্রি করল।” কিন্তু ম্যাচে ম্যান ইউ দু’গোল দিলেও, ব্যবধান কমিয়ে ২-১ করেন আর্জেন্তিনার লিওনার্ডো উল্লোয়া। দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচ পাল্টায় কোনও রোমাঞ্চকর থ্রিলার সিনেমায়। ম্যান ইউ ৩-১ করার পরে নিউজেন্ট ও প্রাক্তন আর্জেন্তিনা তারকা এস্তেবান কাম্বিয়াসোর গোলে ৩-৩ করে লেস্টার। যার মধ্যে নিউজেন্টের গোল আসে রেফারির দেওয়া পেনাল্টি থেকে। যে সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়ে আবার ম্যান ইউর ‘ডাই হার্ড’ সমর্থক উসেইন বোল্ট টুইট করেন, “আমার মনে হচ্ছে এটা রেফারির কোনও চক্রান্ত।”
বিধ্বস্ত গল-বাহিনী।
কিন্তু এখানেই শেষ হয় না প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসে অন্যতম বড় অঘটন। জেমি ভার্দির গোলে ৪-৩ এগোয় লেস্টার। ক্লাইম্যাক্সে আবার পেনাল্টি বক্সে ভার্দিকে ট্যাকল করে লাল কার্ড দেখেন ব্ল্যাকেট। নিটফল, দ্বিতীয় পেনাল্টি। স্পটকিক থেকে নিজের দ্বিতীয় গোল করেন উল্লোয়া। আর ম্যান ইউ সমর্থকরা এমন এক ঘটনার সাক্ষী থাকেন, যার অভিজ্ঞতা তাঁদের গত ৮২৩ প্রিমিয়ার লিগ ম্যাচে হয়নি। অর্থাৎ দু’গোলের ব্যবধানে এগিয়েও ম্যাচ হারা।
পাঁচ গোল হজম করার যন্ত্রণার উপরেও ম্যান ইউর ডাচ কোচকে সহ্য করতে হল লেস্টার সমর্থকদের টিটকিরি। কয়েক জন যেমন চিৎকার করেন, “ম্যান ইউ ধন্যবাদ। তোমাদের সঙ্গে প্রতি সপ্তাহে ম্যাচ পড়লে ভাল হয়।” মাঠের বাইরেও সমান হেনস্থা হতে হল রুনি-ফান পার্সিদের। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট জুড়ে পোস্টের সারমর্ম একটাই, “মোয়েস যে রকম, মোয়েস সিনিয়রও সে রকম।” সমর্থকদের মতো ফুটবল বিশেষজ্ঞরাও কাঠগরায় দাঁড় করাচ্ছেন ফান গলকে। প্রশ্ন উঠছে, কেন ৩-৫-২ ফর্মেশনে খেলানো হচ্ছে ম্যান ইউকে, যখন ফুটবলাররা মানিয়ে নিতে পারছেন না? ১৯৮৯-৯০ মরসুমের পরে লিগে ম্যান ইউর সবথেকে খারাপ শুরু দেখে ওয়েস্ট হ্যাম কোচ স্যাম অ্যালারডাইস যেমন বলেন, “ফুটবলারদের মানিয়ে নিতে অসুবিধা হচ্ছে মনে হয়।”
সাংবাদিক সম্মেলনে এসে ফান গল স্বীকার করলেন, তাঁর দলে ব্যক্তিগত প্রতিভা আছে। কিন্তু দল হিসাবে খেলতে এখনও অভ্যস্থ হয়নি। “আমার দলে ভাল ফুটবলার আছে। কিন্তু সবাই চায় নিজেরা শিরোনামে আসতে।” এ ভাবে বিধ্বস্ত হওয়ার পরেও ফান গল বলেন, “আজ সমর্থকরা দারুণ ম্যাচ দেখল। প্রথমার্ধে আমার দল ভালই খেলেছে। দুটো গোল করে। দ্বিতীয়ার্ধে আরও একটা গোল হয়। তারপর উচিত ছিল ম্যাচ জেতার। সেটা পারল না দল।”
ছবি: রয়টার্স