নিভৃতবাস থেকে একান্ত সাক্ষাৎকারে ঋদ্ধিমান
Wriddhiman Saha

ভয় তো একটু করছিলই, তবে এখন অনেকটা সেরে উঠেছি

সংবাদমাধ্যমের থেকেও দূরে থাকার চেষ্টা করছেন। একাকীত্ব দূর করার জন্য নানা ধরনের বিনোদনমূলক ওয়েব সিরিজ দেখছেন।

Advertisement

ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত 

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ মে ২০২১ ০৬:১০
Share:

প্রত্যয়ী: বাড়ি ফিরেই ট্রেনিং শুরু করার পরিকল্পনা ঋদ্ধির। ছবি ফেসবুক।

যতই শক্তিশালী হন না কেন, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ মুহূর্তে কাহিল করে দিতে পারে যে কোনও মানুষকে। ভারতীয় ক্রিকেট দলের উইকেটরক্ষক ঋদ্ধিমান সাহা-র মতো ফিট ক্রিকেটারও সংক্রমিত হওয়ার পরে শারীরিক অস্বস্তি অনুভব করেছেন। জ্বর, কাশি, শারীরিক যন্ত্রণা আতঙ্ক তৈরি করেছিল তাঁর মনেও। এই পরিস্থিতির মধ্যে যতটা সম্ভব ইতিবাচক থাকার চেষ্টা করেছেন ঋদ্ধি। গণমাধ্যম থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করেছেন। সংবাদমাধ্যমের থেকেও দূরে থাকার চেষ্টা করছেন। একাকীত্ব দূর করার জন্য নানা ধরনের বিনোদনমূলক ওয়েব সিরিজ দেখছেন। সোমবার দিল্লির টিম হোটেলের নিভৃতবাস থেকেই আনন্দবাজারকে ফোনে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি জানালেন, প্রায় সুস্থ হয়ে গিয়েছেন। তাঁর জন্য যেন আর চিন্তা না করেন সমর্থকেরা।

Advertisement

প্রশ্ন: কবে থেকে আপনার শরীরে অস্বস্তি শুরু হয়?

Advertisement

ঋদ্ধিমান সাহা: মে মাসের প্রথম দিন অনুশীলন শেষ করার পরেই একটা ক্লান্তি অনুভব করি। ঠান্ডা লেগেছিল। সর্দি, হাল্কা কাশি হচ্ছিল। দলের চিকিৎসককে সে দিনই বিষয়টি জানাই। কোনও রকম ঝুঁকি না নিয়ে তখনই আমার জন্য নিভৃতবাসে থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। সে দিনই কোভিড পরীক্ষা করা হয়। পরের দিন রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। দ্বিতীয় দিনও পরীক্ষা করা হয়। ফল নেগেটিভই আসে। তবুও নিভৃতবাস থেকে আমাকে বেরোতে দেওয়া হচ্ছিল না। কারণ, জ্বর আসতে শুরু করেছিল। তৃতীয় দিন পরীক্ষার পরে ফল আসে ‘পজ়িটিভ’।

প্রশ্ন: সংক্রমিত হয়েছেন জানার পরে আপনি কি উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছিলেন?

ঋদ্ধি: ভয় তো করছিলই। যে ভাইরাসের জন্য আজ পৃথিবী প্রায় অচল, তাতে সংক্রমিত হলে ভয় তো লাগবেই। পরিবারের প্রত্যেকে খুবই দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন। ভিডিয়ো কলের মাধ্যমে তাঁদের আশ্বস্ত করি যে, ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। আমার যথেষ্ট যত্ন নেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসকের সঙ্গেও ফোনে কথা হত নিয়মিত। তাঁর নির্দেশ অনুযায়ী ঘরে ওষুধ পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেগুলো সময় মতো খেতে শুরু করি।

প্রশ্ন: নিভৃতবাসে থাকলে একাকীত্ব ও অবসাদ গ্রাস করার সম্ভাবনা খুব বেশি। আপনি কী ভাবে তা কাটানোর চেষ্টা করছেন?

ঋদ্ধি: সংক্রমিত হওয়ার পরে শরীরের সঙ্গে মানসিক যত্ন নেওয়াও খুব জরুরি। যতটা সম্ভব নেতিবাচক চিন্তা-ভাবনা থেকে দূরে থাকা উচিত। আমি চেষ্টা করি হাসিখুশি থাকার। তাই হাল্কা স্বাদের বিনোদনমূলক সব ওয়েব সিরিজ দেখি। সতীর্থদের সঙ্গে ভিডিয়ো কলের মাধ্যমে প্রচুর গল্প করি। বাড়ি ফিরে স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে কী ভাবে সময় কাটাব, তা এখন থেকেই ঠিক করে রাখছি। এ ভাবেই নিজেকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করি।

প্রশ্ন: দিল্লিতে আছেন, জৈব সুরক্ষিত বলয়ের বাইরে সাধারণ মানুষের দুর্দশার খবর আপনার কানে আসে?

ঋদ্ধি: অবশ্যই আসে। যে রকম কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে সব মানুষ যাচ্ছেন, তা সত্যি বেদনাদায়ক। তবে আমি গণমাধ্যম থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন রেখেছি। সংবাদমাধ্যমের সঙ্গেও কোনও যোগাযোগ নেই। চারপাশের এত নেতিবাচক খবর আমাকে খুব প্রভাবিত করে। এই শারীরিক অবস্থার মধ্যে যতটা ইতিবাচক থাকা যায়, ততই ভাল।

প্রশ্ন: প্রায় দশ দিন নিভৃতবাস পর্ব কাটিয়ে ফেলেছেন। আর কোনও শারীরিক সমস্যা হচ্ছে? বাংলার ক্রিকেটপ্রেমীদের উদ্দেশে নিজের শারীরিক অবস্থা নিয়ে কী বলবেন?

ঋদ্ধি: শরীরে আর কোনও অস্বস্তি নেই। জ্বরও আসছে না। সর্দি, কাশিও কমে গিয়েছে। শরীরে যন্ত্রণাও নেই বললেই চলে। ক্লান্তি আদৌ আছে কি না, বুঝতে পারছি না। যত ক্ষণ অনুশীলন শুরু না করছি, সেটা বোঝা সম্ভব নয়। সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আপনারা চিন্তা করবেন না। আমি প্রায় সুস্থ। সাবধানে থাকুন। প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে বেরোবেন না। বেরোলেও দু’টি মুখাবরণ পরার চেষ্টা করুন।

প্রশ্ন: সামনেই বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ। তার আগে ফিটনেস পরীক্ষা দিতে হবে। কী ভাবে নিজেকে তৈরি করবেন?

ঋদ্ধি: কলকাতায় ফেরার পরে বাড়ি থেকে বেরোনো সম্ভব নয়। বাড়িতে থেকেই অনুশীলন শুরু করে দিতে হবে। ফিটনেস পরীক্ষা কোথায় হবে, সে ব্যাপারে এখনও পর্যন্ত কোনও খবর পাইনি। আশা করি, আমাদের প্রস্তুতির আলাদা তালিকা তৈরি করে দেওয়া হবে। সেই অনুযায়ী চলব।

প্রশ্ন: টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল নিয়ে পরিকল্পনা সাজানো শুরু করেছেন? ঋষভ পন্থ প্রথম একাদশে থাকলে কি অবাক হবেন?

ঋদ্ধি: প্রয়োজন অনুযায়ী গড়া হয় দল। অধিনায়ক যদি মনে করেন, কোনও একজন ক্রিকেটারকে নিলে দলের সুবিধে হবে, তা হলে সে-ই খেলবে। তা ছাড়া ঘরের মধ্যে বসে কী করে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ নিয়ে পরিকল্পনা তৈরি করব? অনুশীলন শুরু করার পরে এ বিষয়ে ভাবব।

প্রশ্ন: মেয়ে আনভি একটি ‘সুপারম্যান’-এর ছবি এঁকে আপনার দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছে। ছবিটা দেখে কী আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন?

ঋদ্ধি: নিঃসন্দেহে সেরা উপহার। ওর চিন্তা-ভাবনা দ্রুত উন্নত হচ্ছে। ওই ছবিটা কিন্তু আমার মনোবল বাড়াতে অনেক সাহায্য করেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন