‘সৌরভ ঠিকই বলেছে, হলিডে ছেড়ে শাস্ত্রীর ইন্টারভিউ দিতে আসা উচিত ছিল’

ভারতীয় দল যখন ব্যস্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজে, তিনি ডুবে প্র্যাকটিস এবং অলিম্পিক্সে। এবিপি-কে দেওয়া এক্সক্লুসিভ ইন্টারভিউয়ের শেষ পর্বে বিস্ফোরক গৌতম গম্ভীর মুখ খুললেন নতুন হেড কোচ বাছাই বিতর্ক নিয়ে।ভারতীয় দল যখন ব্যস্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজে, তিনি ডুবে প্র্যাকটিস এবং অলিম্পিক্সে। এবিপি-কে দেওয়া এক্সক্লুসিভ ইন্টারভিউয়ের শেষ পর্বে বিস্ফোরক গৌতম গম্ভীর মুখ খুললেন নতুন হেড কোচ বাছাই বিতর্ক নিয়ে।

Advertisement

গৌতম ভট্টাচার্য

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৬ ০৪:৫৯
Share:

আক্রমণাত্মক মেজাজে গৌতম গম্ভীর। নিজের বাড়িতে। ছবি-গৌতম ভট্টাচার্য

প্রশ্ন: আপনার টিভিতে অলিম্পিক্স চলছে দেখছি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজও কি সঙ্গে দেখছেন?

Advertisement

গম্ভীর: দেখি তো। আমার মনে হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ টিমটার যা অবস্থা তাতে আমাদের প্লেয়ারদের চূড়ান্ত বিচার করার জন্য একটু অপেক্ষা করা হোক।

প্র: টিমের বাইরে থাকা অনেক প্লেয়ার স্বীকার করেছেন যে, জাতীয় দলকে টিভিতে খেলতে দেখলে অদ্ভুত সব আবেগ খেলা করে। কেউ অতিরিক্ত রেগে যান। কেউ বিষণ্ণ হয়ে পড়েন। কারও ছটফটানি বেড়ে যায়। আর আপনি তো টেস্ট ক্রিকেটে ৪৪ গড় নিয়ে জাস্ট দু’একটা ব্যর্থতায় টিম থেকে বাদ।

Advertisement

গম্ভীর: আমার সে সব কিছু মনে হয় না। নর্মালি দেখতে পারি। তা ছাড়া শুধু টিমে নেই এই দীর্ঘশ্বাস ফেলে যাব কেন? কত কিছু তো পেয়েছিও। দু’টো বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলে জিতেছি। কত বড় বড় ক্রিকেটার ইন্ডিয়ার হয়ে খেলেছে। অনেকেরই এই সম্মান নেই।

প্র: আপনি এবং বিশ্বকাপ বললেই ২ এপ্রিলের ওয়াংখেড়ে মনে পড়ে যায়। সচিন, সহবাগ এত তাড়াতাড়ি আউট হয়ে যাওয়ার পর আমরা ভারত হারছে জেনে ম্যাচ রিপোর্ট শুরু করে দিয়েছিলাম। কখনও জিজ্ঞেস করা হয়নি ওই চাপের মুখে কী করে নিজের উপর ভরসাটা রেখেছিলেন?

গম্ভীর: এক-একদিন এমন হয় যে, ব্যাট করার সময় একটা জোনের ভেতর কাটাই। তখন কে বোলার, পরিস্থিতি কী ছিল কিছু হুঁশ থাকে না। সে দিন এমনই ছিল। সচিন বা সহবাগ আউট হয়ে যাওয়ায় আমি ভ্রুক্ষেপও করিনি। জানতাম আমি নিজে যদি ৪০ ওভার পর্যন্ত ক্রিজে থাকি, ম্যাচ জিতব। এ রকমই হয়েছিল নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে যে নেপিয়ার টেস্টটা ঠুকে ঠুকে ড্র করেছিলাম। দেড় দিন ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ ছিল। যা বিশ্বকাপ ফাইনালের চেয়ে অনেক বেশি।

প্র: লোকে কিন্তু ওয়াংখেড়েকেই মনে রেখেছে। ম্যাচ শেষ হওয়ার পর আনন্দোচ্ছ্বাস দেখে মনে হচ্ছিল দেশ যেন দ্বিতীয় বার স্বাধীন হল।

গম্ভীর: আমি জানি কিন্তু আমার কী মনে হয় জানেন? ভারতীয় ক্রিকেটার হোক কী বলিউড, এদের আনন্দ দেওয়ারই শুধু ক্ষমতা। তার বাইরে কিছু নয়। এরা মানুষের জীবন পরিবর্তন করতে পারবে না। তা হলে কীসের সুপারহিরো? কেন এদের নিয়ে এত নাচানাচি হবে? আমার কাছে হিরো হল সীমান্তে যারা আমাদের রক্ষা করতে লড়াই করে, সেই ভারতীয় মিলিটারি। এরাই আমার সুপারহিরো। পাকিস্তান ম্যাচে যখন প্রতি বার নামি মনে হয় জিতলে এদেরই উৎসর্গ করব যারা আমাদের জন্য জান বাজি রেখে লড়ে।

প্র: এখন আপনিও নিউজ চ্যানেলে বিশ্লেষকের ভূমিকায় থাকেন। আপনার বন্ধু সহবাগ এখন মিডিয়ায় কেমন অ্যাক্টিভ দেখেছেন?

গম্ভীর: দেখছি।

প্র: অনেকের মনে হচ্ছে এই সব টুইট আর রসাত্মক কমেন্ট্রির পর নভজ্যোৎ সিংহ সিধুর জায়গাটা বোধহয় গেল।

গম্ভীর: হা হা।

প্র: জানতে ইচ্ছে করছে সহবাগ এখন ব্যাট করার সময় পুরনো ইনিংসে যে বিখ্যাত গানগুলোর কথা বলেছেন, সেগুলো শ্রোতা হিসেবে কেমন লাগত?

গম্ভীর: আমি শুনতামই না। আমি নিজের কাজে কনসেন্ট্রেট করতাম। উইকেটের মধ্যে আমার কাজ ছিল জোনে ঢোকার চেষ্টা করা। যে যেমন হয়। তবে বীরুকে দেখে মনে হচ্ছে ব্যাট হাতে যেমন এন্টারটেন করত, এক্সপার্ট হয়েও তেমনই মনোরঞ্জন করতে চায় (হাসি)।

প্র: আপনি যেহেতু এখন এক্সপার্ট খোলাখুলি জিজ্ঞেস করি শাস্ত্রী বনাম কুম্বলে— রগরগে কোচ বিতর্কে আপনি কোন দিকে ছিলেন?

গম্ভীর: কুম্বলে কুম্বলে, কোনও কথা আছে না কি?

প্র: তাই?

গম্ভীর: অফকোর্স। যে দিন কুম্বলে অ্যাপ্লাই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে দিনই দোকান বন্ধ। কারণ অনিল কুম্বলের মতো মানুষ অ্যাপ্লাই করলে আর কোনও নাম উঠতে পারে না।

প্র: কিন্তু শাস্ত্রীর পারফরম্যান্স তো কোচ হিসেবে যথেষ্ট ভাল। ডানকান ফ্লেচার যেখানে টিম নিয়ে গেছিলেন ইংল্যান্ডে সেই অবস্থা থেকে টিমকে টেনে তোলা।

গম্ভীর: আমায় একটা কথা বলুন। টিমটা উপমহাদেশের বাইরে কোনও সিরিজ জিতেছে কি? অস্ট্রেলিয়া, সাউথ আফ্রিকা সর্বত্র দেখুন। বাংলাদেশে অবধি আমরা হেরে এসেছি। দু’টো ওয়ার্ল্ড কাপের ফাইনাল যেতে পারিনি। ঘরের মাঠে সাউথ আফ্রিকাকে হারানো যদি তোলেন তা হলে আমি বলব সে তো ডানকান ফ্লেচারের আমলে আমরা অস্ট্রেলিয়াকে ৪-০ হারিয়েছি। একই তো!

প্র: আর একটা কথা।

গম্ভীর: দাঁড়ান আমার শেষ হয়নি। এই যে রবি সব সময় বলে আমি অমুক জিতেছি তমুক জিতেছি, আমার অবাক লাগে এটা ওকে বলতে হয় কেন? এটা তো মানুষ বলবে। আমি কি চিৎকার করে নিজে বলব যে, আমার ক্যাপ্টেন্সিতে কেকেআর দু’বার আইপিএল জিতেছে? ধোনি কি বলবে আমি ওয়ার্ল্ড কাপ জিতেছি? এ তো স্কোরেই আছে। এগুলো মানুষ বলবে।

প্র: শাস্ত্রী কিন্তু টিমকে একটা জায়গায় যে দাঁড় করিয়েছেন এটা কিন্তু তাঁর সমালোচকেরাও বলে।

গম্ভীর: আমি একটু অন্য কথা বলব যে, সৌরভ ওকে যা জবাব দিয়েছে সেটা ব্রিলিয়ান্ট। ঠিক বলেছে তো যে, ইন্ডিয়ান কোচ হতে যদি এত শখ তখন ব্যাঙ্ককে ছুটি কাটানোর ফাঁকে একদিন কলকাতায় ঘুরে ইন্টারভিউটা দিয়ে যাও। তিন ঘণ্টার তো ফ্লাইট। মুখোমুখি এসে কথা বলো। একে ওকে দায়ী করে আঙুল তুলো না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন