ডার্বিতে গোল না পেলেও আমার সময়ে কিন্তু মোহনবাগানের দু’টো ট্রফি আছে

তিন বছর মোহনবাগানে তাঁকে কোচিং করাচ্ছেন সঞ্জয় সেন। তিনিও স্বীকার করছেন কোনও দিন ড্রেসিংরুমে এ ভাবে বিমর্ষ অবস্থায় দেখেননি হাইতিয়ান মিডিওকে। শিলিগুড়ির ডার্বিতে ব্যর্থ হওয়ার পর সমালোচনার ঢেউয়ে তিনি যেন আরও বিধ্বস্ত। চোট নিয়ে চলছে নানা জল্পনা। শিলিগুড়িতে ডার্বি খেলার পরের দিন মুম্বইগামী বিমানে ওঠার আগে বাগডোগরা বিমানবন্দরের লাউঞ্জে আনন্দবাজার-কে খোলামেলা, একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন এই মুহূর্তে কলকাতার এক নম্বর ফুটবল-তারকা সনি নর্দে তিন বছর মোহনবাগানে তাঁকে কোচিং করাচ্ছেন সঞ্জয় সেন। তিনিও স্বীকার করছেন কোনও দিন ড্রেসিংরুমে এ ভাবে বিমর্ষ অবস্থায় দেখেননি হাইতিয়ান মিডিওকে।

Advertisement

রতন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:৩২
Share:

ডার্বিতে গোলই শেষ কথা নয়

Advertisement

আমি স্ট্রাইকার নই যে সমস্ত ম্যাচে গোল করতে হবে। যে পোজিশনে খেলি, সেখান থেকে দলের স্ট্রাইকারকে গোল করার পাস বাড়ানোই আমার প্রধান কাজ। মানে গোল করায় সহায়তা করা। আমার পাসে কিন্তু ডার্বিতে একটা গোল আছে মোহনবাগানের। কর্নেল গ্লেন করেছিল গত বছর। আর ডার্বিতে গোল না করলে সেই ফুটবলার সেরা নয়, এটা মানি না। একটা টুনার্মেন্টে অনেক ম্যাচ হয়। সেখানে অনেক গোল করেছি। আর গোল করি বা না করি ট্রফি পাওয়াটাই আসল। মোহনবাগান আমার সময়ে আই লিগ ও ফেড কাপ জিতেছে।

অন্য কোথাও হলে খেলতাম না

Advertisement

সবাই যা বলছে আমি তার সঙ্গে একমত। আমি তো ব্যর্থই হয়েছি। কিছু করতে পারিনি। ৮৩ মিনিট খেলে একটা মাত্র ভাল কর্নার করেছি। যেটা আটকে দিয়ে ইস্টবেঙ্গলের গোলরক্ষক ম্যান অব দ্য ম্যাচ হল। আমার হাঁটুতে চোট ছিল। বিশ্বাস করুন, আমি নামতেই চাইনি। টিম ফিজিও-কে জিজ্ঞেস করুন, ক’টা ইঞ্জেকশন দিয়েছিল নামার আগে। ক’টা ওষুধ খেয়েছিলাম ব্যথা কমানোর জন্য। গতবার আই লিগে শিলিগুড়িতে এসে চোটের জন্য খেলতে পারিনি। এ বারও যদি না নামি তা হলে সমালোচনা হতো। এ রকম চোট থাকলে বিশ্বের কোনও মাঠে নামতাম না। আমার নিজের দেশের জার্সিতেও না। তবু শিলিগুড়িতে নেমেছিলাম। তা ছাড়া সবাই বলল, আমি নামলে বিপক্ষ চাপে থাকবে। তাই নেমেছিলাম। ভেবেছিলাম ২৫ মিনিট মতো খেলে উঠে যাব। তা-ও তো অতক্ষণ থাকলাম। আর কী করতে পারি।

ফিরেছে পুরনো হাঁটুর চোট

এটা আমার পুরনো হাঁটুর চোট। পানামার বিরুদ্ধে দেশের জার্সিতে খেলার সময় লেগেছিল। চোটের পর সেভাবে বিশ্রাম পাইনি। ক্লাবের অনুশীলনে আবার লেগে গেল। এখনও ব্যথা আছে। চেষ্টা করছি মুম্বই ম্যাচে খেলার। কোচ অবশ্য বলছেন ব্যথা হলে খেলতে হবে না। আমি তো খেলতেই চাই। (মঙ্গলবার রাতে অবশ্য জানাচ্ছেন, ব্যথা কমছে। বুধবার খেলার সম্ভাবনা ফিফটি-ফিফটি)

আরও পড়ুন।

মাঠে নামার আগেই ইস্টবেঙ্গল-লাজং যুদ্ধ

ব্যারেটো ১০০ হলে আমি ১০

লোকে যে কেন আমার সঙ্গে হোসে ব্যারেটোর তুলনা করে বুঝি না। আমি ওঁর খেলা দেখিনি। দেখা হয়েছে দু’তিনটে অনুষ্ঠানে। তবে যা শুনেছি ওর সময় ক্লাব প্রচুর ট্রফি জিতেছে। দু’বার আই লিগ, বেশ কয়েক বার ফেড কাপ, আরও অনেক ট্রফি। বহুদিন খেলছে মোহনবাগানে। আমি তো সবে শুরু করেছি। মাত্র দু’টো ট্রফি জিতেছি। ব্যারেটো মোহনবাগানের কিংবদন্তি বিদেশি। আমি তুলনায় কিছুই নই। ব্যারেটো ১০০ হলে আমি ১০। কেন তুলনাটা করা হচ্ছে বুঝতে পারছি না। মিডিয়া যেটা করছে সেটা আমি পছন্দ করছি না। ইস্টবেঙ্গলের উইলস প্লাজা ভাল ফুটবলার। তা বলে কি ওর সঙ্গে র‌্যান্টি মার্টিন্সের তুলনা চলে? র‌্যান্টি নিজেকে প্রমাণ করেছে। প্লাজাকেও যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হবে।

ওয়েডসনের সঙ্গে দ্বৈরথে পিছিয়ে

স্বীকার করে নিচ্ছি, শিলিগুড়ি ডার্বিতে ওয়েডসন আমার চেয়ে ভাল খেলেছে। ওর সঙ্গে আমি হাইতির জাতীয় দলে একসঙ্গে খেলি। বাংলাদেশে একই ক্লাব টিমে খেলেছি দু’জনে। আমার বাড়ি থেকে ওর বাড়ি গাড়িতে ২৫ মিনিট। দারুণ বৈচিত্র ওর খেলায়। কিন্তু একটা ডার্বিতে ভাল খেললেই তো আর চলে না। তিন মরসুম কলকাতায় খেলে যা বুঝেছি, ট্রফি না জিতলে এখানে কাউকে সফল ধরা হয় না। তা সে যত বড় ফুটবলারই হোক না কেন। আমি মোহনবাগান জার্সিতে দু’টো ট্রফি জিতে ফেলেছি। ওয়েডসন সবে তো কয়েকটা ম্যাচ খেলল। কয়েক বছর খেলুক। ট্রফি জিতুক। তারপর বিচার হোক কে সেরা। কে ভাল। মনে হয় তুলনা করার সময় এখনও আসেনি।

বাগান না বেঙ্গল, কে জিতবে লিগ

এখন বলব কী করে? ১১টা করে ম্যাচ বাকি। অনেক লড়াই হবে। প্রথম রাউন্ডও শেষ হয়নি। অনেক অঙ্ক আছে। হোম, অ্যাওয়ে ম্যাচ বড় ফ্যাক্টর। আমাদের তো আবার এ এফ সি-ও খেলতে হবে একই সঙ্গে। এটা বিরাট চাপ। গতবার যা নিয়ে সমস্যা হয়েছিল। এ বার দু’টো ট্রফিই আমরা জিততে চাইছি। বেঙ্গালুরুরও আমাদের মতো অবস্থা। দু’তিন দিন অন্তর ম্যাচ খেলতে হচ্ছে। ইস্টবেঙ্গলের কিন্তু সেই সমস্যা নেই। সেটা ওয়েডসনদের বড় সুবিধা। বিশ্রাম অনেক বেশি পাচ্ছে ওরা। আমার মনে হয়, এই তিনটে টিমের মধ্যেই যে কেউ এ বার জিতবে আই লিগ।

বেঙ্গালুরু, ইস্টবেঙ্গল না মোহনবাগান

আমদের টিম আর সুনীল ছেত্রীদের টিম প্রায় একই শক্তি ধরে রেখেছে। ব্যালান্সড টিম। ডাফি, এডু ছাড়া আমাদের টিম প্রায় একই আছে। তবে ইস্টবেঙ্গলের আক্রমণের শক্তি বেড়েছে। গোল করার লোক অনেক। যা গতবার ওদের ছিল না। এ বার তাই আই লিগে প্রতিদ্বন্দ্বিতা অনেক বেশি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন