গোলের পর কেউ সমারসল্ট দেওয়ার চেষ্টা করলে কলকাতার দর্শকরা এখনও তাঁর নাম করেন।
কোনও ফুটবলার চুলের নিত্য নতুন স্টাইল করলেই এখনও তাঁর উদাহারণ চলে আসে রকের আড্ডায়।
আর তাঁর বিশ্বমানের গোল? সে কথাও তো এখনও ভুলতে পারেননি কলকাতার অনেক দর্শক।
আবার সেই প্রথম বিতর্ক মানেও তো ইথিওপিয়ান ফুটবলারটির কথাই বারবার মনে পড়ে যায়!
তিনি ফিকরু তেফেরা! শেষ দুটি আইএসএলের চ্যাম্পিয়ন টিমের সদস্য। প্রথম আইএসএলে আটলেটিকো দে কলকাতার জার্সিতে শুরুতেই নজর কেড়েছিলেন। কলকাতাকে চ্যাম্পিয়ন করার পিছনে তাঁর বড় ভূমিকা ছিল। আইএসএল-টুতে চেন্নাইয়ানে সই করেন তিনি। সে বারও তো চ্যাম্পিয়ন হয় মার্কো মাতেরাজ্জির টিমই। এ বার সেই ফুটবলারটিই আইএসএল থ্রি-তে নেই। আজ গুয়াহাটিতে আইএসএলের উদ্বোধন দেখবেন ঢাকায় বসে। ভারতের সবচেয়ে দামি টুনার্মেন্ট সম্পর্কে কথা তুললেই এখনও অবশ্য নস্টালজিক তিনি। ‘‘কেন ক্লাবেরা আমাকে ডাকেনি জানি না। তবে আইএসএল আমার কাছে এখনও সুখস্মৃতি। প্রথম গোলটা যে আমার। দারুণ একটা গোল করেছিলাম একটা ম্যাচে। মিডিয়া লিখেছিল বিশ্বমানের গোল।’’
আইএসএলে আপনি পয়া ফুটবলার বলে পরিচিত। আপনি যে টিমে থাকেন, সেই টিমই তো ট্রফি জেতে? তা সত্ত্বেও কেউ নিল না আপনাকে! ‘‘সে রকম কোনও বিষয় নেই। এ বার তো আমি কোনও টিমে নেই। তা বলে কি কোনও টিম চ্যাম্পিয়ন হবে না? আর দলে নেওয়াটা তো ক্লাবের ব্যাপার। ওরা মনে করেনি, নেয়নি। তবে আমি লাকি যে পর পর দু’ বার দু’টি টিমের জার্সিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বাদ পেয়েছি।’’
সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটের মাধ্যমে ফিকরুর সঙ্গে ঢাকায় যোগাযোগ করার পর নানা প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন তিনি। জানালেন, ‘‘ভারতে খেলার অভিজ্ঞতা খুবই ভাল। কলকাতার মানুষকে আমি কখনও ভুলব না।’ এই মুহূর্তে বাংলাদেশের প্রিমিয়ার ডিভিশনের ক্লাব শেখ রাসেল কেসি-তে খেলছেন ইথিওপিয়ান ফুটবলার। বাংলাদেশের ক্লাবের হয়ে প্রচুর গোলও করছেন ফিকরু। তবে তাঁর সঙ্গে কথোপকথনের সময় মনে হচ্ছিল, যত গোলই বাংলাদেশ লিগে করুন, আইএসএলে এ বার খেলতে না পারার আফসোস বয়ে বেড়াচ্ছেন। সরাসরি সে কথা স্বীকারও করে নিলেন ফিকরু, ‘‘আইএসএল মিস করব, এটা নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই। আইএসএলের জন্যই তো আপনারা এখনও আমাকে মনে রেখেছেন।’’ পরক্ষণেই পেশাদারিত্বের মোড়কে গুটিয়ে নিলেন নিজেকে, ‘‘আমি তো পেশাদার। যে ক্লাবের জার্সি পরেই খেলি না কেন, সেখানেই নিজের সেরাটা দিতে চাই।’’
আইএসএলের সব স্মৃতিই এখনও ফিকরুর কাছে বড় টাটকা। নিজেই লিখলেন, ‘‘আইএসএলে কলকাতার জার্সিতে প্রথম ট্রফি জিতেছিলাম।’’ এটিকের প্রসঙ্গ উঠতেই যে প্রশ্নের উত্তর দেননি কখনও, সেটাই করতে হল। আন্তোনিও হাবাস বা লুইস গার্সিয়ার সঙ্গে আপনার মনোমালিন্যটা কী নিয়ে হয়েছিল? অনেকক্ষণ এই প্রশ্নের কোনও উত্তরই এল না। প্রায় ঘণ্টা দুয়েক পরে ফিকরু যা লিখলেন তার বঙ্গানুবাদ করলে দাঁড়াবে, ‘‘দেখুন, আমি ভাল খেলছিলাম, গোল পাচ্ছিলাম বলে অনেকেই আমাকে পছন্দ করত না। জানি না কোচ পরে কেন আমাকে ভুল বুঝেছিলেন? একটা দূরত্ব তো তৈরি হয়েছিল। হয়তো আমার সম্পর্কে তাঁকে ভুল বোঝানো হয়েছিল। অথচ শুরু থেকেই কোচের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ভাল ছিল। আর আমি হাবাসকে এখনও খুব শ্রদ্ধা করি। কোচ হিসেবে ও কিন্তু অনেক বড় মাপের।’’
এ বার তো হাবাস পুণেতে। জানেন? ‘‘জানি। অন্য টিমগুলো সম্পর্কেও কিছু কিছু খবর রাখি।’’ ফিকরু তো এ বার কোনও টিমে নেই। কে চ্যাম্পিয়ন হবে? ফিকরুর জবাব, ‘‘টিম গুলোর খেলা না দেখলে বলা কঠিন। আগে সবাই মাঠে নামুক।’’ তার পর মজা করে লিখলেন, ‘‘আমি থাকলে আমার টিমই চ্যাম্পিয়ন হত। এ বার কে হবে তা বলব না।’’