Sport News

কোমরের পেশির শক্তি বাড়িয়ে ফিরছেন বুমরা

স্ট্রেস ফ্র্যাকচার নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে প্রথমেই উল্লেখ করতে হবে বায়োমেকানিক্সের।

Advertisement

চিন্ময় রায়

শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০২০ ০৬:২৫
Share:

লড়াকু: চোট পেয়েও কখনও হাল ছাড়েননি বুমরা।

পাকিস্তানের ওয়াকার ইউনিস ‘স্ট্রেস ফ্র্যাকচার’ (মেরুদণ্ডে চিড়) পরবর্তী জীবনে আগের গতিতে আর বল করতে পারেননি। কিন্তু আর এক কিংবদন্তি পেসার ডেনিস লিলিকে চেনা মেজাজেই পাওয়া গিয়েছিল। যশপ্রীত বুমরাও দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন ঘটিয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে শেষ দু’টি ওয়ান ডে-তে ১৪০ কিলোমিটার বেগে বল করে বুম বুম বুমরা বুঝিয়ে দিয়েছেন, তাঁর বিচিত্র অ্যাকশনের কারণে মেরুদণ্ডের হাড়ে যে চিড় ধরেছিল, তা কাবু করতে পারেনি তাঁকে। অথচ আর এক ভারতীয় তারকা হার্দিক পাণ্ড্য ফিটনেস টেস্টেই পাশ করতে পারলেন না। বুমরার মতো তিনিও একই সমস্যার শিকার হয়েছিলেন। চোট সারাতে অস্ত্রোপচারও করিয়েছিলেন হার্দিক।

Advertisement

স্ট্রেস ফ্র্যাকচার নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে প্রথমেই উল্লেখ করতে হবে বায়োমেকানিক্সের। জোরে বোলিংয়ের সময় বোলারদের মেরুদণ্ড একই সময়ে তিন ভাবে সঞ্চালিত হয়। প্রথমে প্রসারণ। তার পরে ঘূর্ণন। সবার শেষে সামনের দিকে ঝুঁকে পড়া। মেরুদণ্ডের মাধ্যমেই শক্তি পা থেকে কাঁধ হয়ে হাতে সঞ্চারিত হয়। শরীরের কাঠামোর নড়াচড়ার এই যান্ত্রিক প্রক্রিয়াকেই বলে বায়োমেকানিক্স। এটা বার বার হওয়ার ক্লান্তি থেকেই মেরুদণ্ডের কশেরুকার হাড়ে চিড় ধরে। ডেনিস লিলি, শেন বন্ড থেকে লক্ষ্মীপতি বালাজি— সকলেরই কোমরের পাঁচ নম্বর কশেরুকায় (এল ৫) চিড় ধরেছিল।

কেন চোট পেলেন বুমরা?: জোরে বোলিং বিশ্লেষণ করা বিজ্ঞানীদের মতে, বলের গতি নির্ভর করে মসৃণ রান আপ ও দৌড়ের উপরে। অধিকাংশ পেসারেরা বল করার আগে দ্রুত গতিতে দৌড়ে আসেন। কারণ, এর ফলে যে ভরবেগ তৈরি হয়, তাতে দ্রুত গতিতে ব্যাটসম্যানকে লক্ষ্য করে বল নিক্ষেপ করা যায়। বুমরা অবশ্য বল করার আগে একেবারেই জোরে দৌড়ন না। জগিংয়ের মতো করেন। শুধু তাই নয়। ক্রিকেটের নিয়ম অনুযায়ী বুমরার বাঁ-হাত কনুই না ভেঙে কাঁধের উপরে সোজা ওঠে না। খুব বেশি হলে, কাঁধের সমান উচ্চতায় ওঠে। এক দিকে সামনের হাত উঠছে না, তার উপরে রান আপে গতি নেই। তা সত্ত্বেও ১৪০ কিলোমিটার বেগে বল করছেন বুমরা শুধু কাঁধ ও কোমরের জোরে। গত বছর বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ডেথ ওভারে ৩৫ ওভার বল করেছিলেন বুমরা। এর মধ্যে মাত্র দু’টি ওভারে দশের বেশি রান দিয়েছিলেন। এই সময় ঘনঘন ইয়র্কার বা বাউন্সার দিয়েছেন বুমরা। ফলে বাড়তি চাপ পড়ছে ওঁর কোমর ও শরীরের মধ্য অংশের উপরে। তা থেকেই হয়েছে এই ‘স্ট্রেস ফ্র্যাকচার’।

Advertisement

অরুণ-শঙ্কর যুগলবন্দি: ২০১৩ সালে গুজরাতের হয়ে খেলার সময় চোট পান বুমরা। সেই সময় জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমির (এনসিএ) ফিজিয়োর সঙ্গে কথা বলে বি অরুণ বুঝতে পারেন, বিচিত্র বোলিং অ্যাকশনই বুমরার চোটের জন্য দায়ী। অ্যাকশনের ঠিক কী পরিমার্জন দরকার, তা-ও বলে দিয়েছিলেন তিনি।

বোলিং অ্যাকশন বদল করতেই ছন্দ হারিয়ে ফেলেছিলেন বুমরা। অরুণ উপলব্ধি করেন, অ্যাকশন বদল করলে বুমরাকে চেনা মেজাজে পাওয়া যাবে না। ভারতীয় পেসারকে তখন তিনি পরামর্শ দেন, কোমরের পেশির জোর বাড়ানোর। এর পরেই বুমরার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন শঙ্কর বাসু। শুরু হয় অলিম্পিক লিফ‌্ট।

বুমরার কাঁধ, পা ও কোমরের পেশি দারুণ শক্তিশালী হয়ে ওঠে। অলিম্পিক লিফ‌্টে বুমরা যে সেই সময় বিরাট কোহালির চেয়েও দক্ষ হয়ে উঠেছিলেন, অনেকেই হয়তো জানেন না। অরুণ-শঙ্কর যুগলবন্দিই বুমরার বোলিংকে অন্য উচ্চতায় পৌঁছে দেয়।

হার-না-মানা মানসিকতা: বুমরা খুব ভাল করেই জানেন, এই চোট যে কোনও সময় বিপদে ফেলতে পারে তাঁকে। তা সত্ত্বেও কখনও আতঙ্কিত হননি। বরং নিজেকে তৈরি করেছেন। এটা সম্ভব হয়েছে, ওঁর ইস্পাত কঠিন মানসিকতার জন্যই। এই প্রসঙ্গে মুনাফ পটেলের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। কাঁধে অস্ত্রোপচারের পরে ওঁর বলের গতি এক ধাক্কায় ১৪০ থেকে ১৩০ কিলোমিটারে নেমে এসেছিল।

বুমরার প্রত্যাবর্তন-রহস্য: এমআরআই করার পরেই ইংল্যান্ডের ডাক্তারেরা বুঝতে পারেন, বুমরার অস্ত্রোপচারের দরকার নেই। এক মাস বিশ্রামের পরামর্শ দেন ভারতীয় বোলারকে। ব্যথা কমার পরে এনসিএ-তে ফিজিয়োর কাছে কোমরের পেশির জোর বাড়ানোর ব্যায়াম শুরু করেন বুমরা। কশেরুকার যে অংশে চিড় ধরে, তার পার্শ্ববর্তী বন্ধনীর সঞ্চালনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। এর সঙ্গে চলতে থাকে ৪-৫ কেজির মেডিসিন বল নিয়ে মেরুদণ্ড ঘোরানোর ব্যায়াম। দশ সপ্তাহ অনুশীলনের পরে নিজস্ব ট্রেনার রজনীকান্তের কাছে ভারী ওজন নিয়ে শরীরের শক্তি বাড়ানোর অনুশীলন শুরু করেন। বোলিং করার মতো জায়গায় পৌঁছতে প্রথম সপ্তাহে ২৪টি বল করেছিলেন। দ্বিতীয় সপ্তাহে তা বাড়িয়ে ৩৬টি। সব চেয়ে ভাল হয়েছে বুমরাকে রঞ্জি ট্রফিতে খেলার অনুমতি না দেওয়া। ভারতীয় দলের নেটেই ওর ফিটনেস পরীক্ষা করা হয়েছে। বোলিং অ্যাকশনের জন্য বুমরার ঘনঘন চোট লাগার আশঙ্কা প্রবল। তাই গুরুত্বহীন প্রতিযোগিতায় ওঁকে বিশ্রাম দেওয়াই উচিত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন