ধোনির শহরে ফুটবলের ক্লাস

ঝাড়খণ্ডের প্রত্যন্ত এলাকার গ্রামের আদিবাসী ছেলেমেয়েদের ফুটবল শেখানো শুরু করলেন বাংলার ফুটবলার কল্যাণ চৌবে। ন’য়ের দশকের মাঝামাঝি সময়ে মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গলের হয়ে খেলা দাপুটে এই গোলকিপার দেশের হয়ে অধিনায়কত্বও করেছেন।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

রাঁচী শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৭ ০৩:৪৬
Share:

প্রস্তুতি: রাঁচীর মাঠে চলছে ‘একলব্য’-এর ফুটবল ক্লাস। নিজস্ব চিত্র

ঝাড়খণ্ডের প্রত্যন্ত এলাকার গ্রামের আদিবাসী ছেলেমেয়েদের ফুটবল শেখানো শুরু করলেন বাংলার ফুটবলার কল্যাণ চৌবে।

Advertisement

ন’য়ের দশকের মাঝামাঝি সময়ে মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গলের হয়ে খেলা দাপুটে এই গোলকিপার দেশের হয়ে অধিনায়কত্বও করেছেন। আজ রাঁচীর খেলগাঁওতে ঝাড়খণ্ড সরকারের ঝাড়খণ্ড স্টেট স্পোর্টস প্রোমোশন সোসাইটির মাঠে কচিকাচাদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে কল্যাণবাবু বলেন, ‘‘আদিবাসী এইসব ছেলে মেয়েদের ফুটবল শেখানোর দায়িত্ব পেয়ে আমি খুবই উত্তেজিত। এদের ঠিক মতো প্রশিক্ষণ দিতে পারলে কে বলতে পারে এদের মধ্যে থেকেই কয়েকজন জাতীয় দলের হয়ে খেলবে না?’’

ঝাড়খণ্ডের ১৮০০০ ছেলেমেয়েদের মধ্যে বাছাই করে ১০০ জনকে নিয়ে খেলগাঁও স্টেডিয়ামে খেলাধুলোর প্রশিক্ষণ দিচ্ছে ঝাড়খণ্ড স্টেট স্পোর্টস প্রোমোশন সোসাইটি। আট থেকে ১২ বছর বয়সী এই ১০০ জনের মধ্যে ৪৮ জন মেয়ে। যারা প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন তাদের সবাইকে থাকতে হবে খেলগাঁওয়ের সরকারি হোস্টেলে। এদের স্কুলে পড়ানোর দায়িত্বও নিয়েছে ঝাড়খণ্ড স্টেট স্পোর্টস প্রোমোশন সোসাইটি। এই সংস্থার এক কর্তা বিক্রান্ত মালহান বলেন, ‘‘প্রশিক্ষণের মধ্যে অ্যাথলেটিক যেমন আছে সেরমকই রয়েছে ফুটবলও। ফুটবল অ্যাকাডেমির দায়িত্বে ভারতীয় জাতীয় দলের প্রাক্তণ অধিনায়ককে পেয়ে আমরা খুবই আনন্দিত। কল্যাণবাবুর একলব্য ফুটবল অ্যাকাডেমি শুধু ছেলেদেরই নয় মেয়েদেরও ফুটবলের প্রশিক্ষণ দেবে।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: প্রস্তুতি ম্যাচেও রক্ষণ ভাবাচ্ছে মর্গ্যানকে

২০ জন ছেলে ও ২০ জন মেয়েকে নিয়ে ফুটবল দল তৈর করেছেন কল্যাণবাবু। কল্যাণবাবু বলেন, ‘‘আধুনিক ফুটবলে স্কিল যেমন প্রয়োজন সেরকমই প্রয়োজন গায়ের জোরও। আদিবাসী ছেলেমেয়েদের একটা সহজাত গায়ের জোর রয়েছে। ওরা ভয় পায় না। প্রথম দেড় বছর শুধু ফুটবলের প্রাথমিক শিক্ষা দেব আমরা।’’

গুমলা, লোহারদাগা, লাতেহারের, পলামুর মতো মাওবাদী অধ্যুসিত গ্রামগুলো থেকে আসা সুইটি টুডু, ছোটিকিরণ মুর্মু, অনিল মুর্মুরা প্রথম দিনই বল নিয়ে ফুটবল শিখতে শুরু করেছে কল্যানবাবুর কাছে। ধোনির শহর রাঁচীতে বড় ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দেখে ওরা। গুমলা থেকে আসা এক ১২ বছরের এক কিশোর বলে, ‘‘গ্রামে ফুটবল খেলার জন্য সবার বলও জুটতো না। একটা বল নিয়ে আমরা একসঙ্গে পঁচিশ তিরিশজন খেলতাম। এখানে এতগুলো বল পাচ্ছি। সঙ্গে মাস্টারমশাই। সবই কেমন যেন পাল্টে গিয়েছে।’’

পাল্টে যে গিয়েছে তা বুঝতে পেরেছেন এই সব কচিকাচাদের অভিভাবকরাও। খুঁটির এক কিশোরীর মা দীপিকা মুর্মু বলেন, ‘‘মেয়েটা বাড়িতে আমার কাছে না থেকে হোস্টেলে থাকবে ভেবে দুঃখ হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু ও ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দেখে। ওকে বাড়িতে রাখলে এই স্বপ্নতো অধরাই থেকে যেতো।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন