অস্কার ব্রুজ়ো। —ফাইল চিত্র।
মাত্র এক বছরেই অস্কার ব্রুজ়ো বুঝে গিয়েছেন, ডার্বি মানে কী? তিনি জানেন, জিতলে সমর্থকেরা মাথায় তুলে নাচবে। আর হারলে জুটবে খলনায়কের তকমা। তাই সাবধানি ব্রুজ়ো। রবিবার ডুরান্ড কাপের কোয়ার্টার ফাইনালে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে খেলতে নামার আগে হাতের তাস লুকিয়েই রাখলেন তিনি। জানিয়ে দিলেন, “জিতলে নায়ক হব। হারলে খলনায়ক। এটা এক বছরে ভাল ভাবে বুঝে গিয়েছি। তাই আমাদের লক্ষ্য থাকবে জেতা। গত বার পারিনি। এ বার জিততে চাই।”
এ বার যে তিনি গুছিয়ে এগোতে চান, তা বোঝা গিয়েছিল ব্রুজ়োর রুদ্ধদ্বার অনুশীলনের সিদ্ধান্তে। ম্যাচের আগের দিন ব্রুজ়োর সাংবাদিক বৈঠকও যেন ‘রুদ্ধদ্বার’। তাঁর কাছ থেকে পরিকল্পনা নিয়ে একটা কথাও বার করা গেল না। যত বার প্রশ্ন করা হল, তত বার এড়িয়ে গেলেন ব্রুজ়ো। স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, “আগে পরিকল্পনা ফাঁস হয়েছে। সেটা এই ম্যাচে চাই না। প্রতিপক্ষ মোহনবাগান যথেষ্ট শক্তিশালী। ওদের দলে ভাল ফুটবলার আছে। তাই আরও ভাল করে পরিকল্পনা করতে হয়েছে। কিন্তু আমি পরিকল্পনা নিয়ে কিছু বলব না।”
ইস্টবেঙ্গলের অনুশীলনে দেখা গিয়েছে জয় গুপ্তকে। এই ভারতীয় ফুটবলারের জন্য অনেক টাকা খরচ করেছে তারা। বোঝাই যাচ্ছে, ব্রুজ়োর পরিকল্পনায় তিনি রয়েছেন। কিন্তু তিনি রবিবারের ডার্বিতে খেলবেন কি না সে বিষয়ে কিছু স্পষ্ট করেননি ব্রুজ়ো। তিনি বলেন, “৪৮ ঘণ্টা লাগে রেজিস্ট্রেশনের জন্য। আমি এটা বলতে পারি যে ও আমার পরিকল্পনায় আছে। এর বেশি কিছু বলব না।”
মোহনবাগানের দলে অনেক ফুটবলার পুরনো। বিশেষ করে তাদের বিদেশিদের ডার্বি খেলার অভিজ্ঞতা আছে। সেখানে ইস্টবেঙ্গলের বেশির ভাগ বিদেশি নতুন। প্রতিপক্ষকে সমীহ করলেও তাদের এগিয়ে রাখতে চাইছেন না ব্রুজ়ো। লাল-হলুদ কোচ বলেন, “ওরা ভাল দল। সফল দল। ওপেন প্লে থেকে গোল করে। সেটপিস থেকেও গোল করে। ওদের আটকানো কঠিন। কিন্তু আমরাও তৈরি। এ বার ভাল দল তৈরি হয়েছে। ফুটবলারদের মধ্যে বোঝাপড়া তৈরি হয়েছে। পারফরম্যান্সই শেষ কথা বলবে। ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান ম্যাচ ৫০-৫০। তাই আগে থেকে কিছু বলা যাবে না।” তবে গত বারের থেকে যে এ বার ভাল খেলবেন তা নিশ্চিত করেছেন ব্রুজ়ো। তিনি বলেন, “এ টুকু বলতে পারি, গত বারের থেকে ভাল খেলব। আমরা আগের কয়েকটা ম্যাচে ভাল খেলেছি। গোল করেছি। সকলে খেলা উপভোগ করছে। আমাদের বিদেশিরা নতুন। কিন্তু ওরা বুঝেছে কলকাতার ফুটবল কী। ওরা ছন্দে আছে। আশা করছি ডার্বিতেও ভাল খেলব।”
গত বার ফিটনেস সমস্যায় পড়তে হয়েছিল ইস্টবেঙ্গলকে। কার্ডের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে অনেককে পাননি ব্রুজ়ো। এ বার সেই সমস্যা নেই বলে জানিয়েছেন লাল-হলুদ কোচ। সকলকেই পাবেন তিনি। তবে মহম্মদ রশিদ নেই। বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে প্যালেস্টাইনে ফিরে গিয়েছেন তিনি। রশিদের এই সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়েছেন ব্রুজ়ো। তিনি বলেন, “রশিদের জীবনে খুব কঠিন সময় চলছে। ও পরিবারের সঙ্গে থাকতে চেয়েছে। ওর সিদ্ধান্তকে আমি সম্মান জানিয়েছি। ও চেয়েছে ওকে বেশি বিরক্ত করা না হোক। তাই এই বিষয়ে আমি বেশি কথা বলব না। আমিও আপনাদের সেই অনুরোধই করব। অনেক সময় ফুটবলের থেকেও গুরুত্বপূর্ণ কিছু থাকে। সমর্থকদের পাশাপাশি ওর জন্যও কাল জিততে চাই।”
মোহনবাগানের বিরুদ্ধে কোন ফর্মেশনে তিনি দল সাজাবেন সেই বিষয়েও চুপ ব্রুজ়ো। কিছুই খোলসা করেননি লাল-হলুদ কোচ। ব্রুজ়ো বলেন, “কোন ফর্মেশনে দল সাজাব তা এখন বলব না। ওদের দল খুব ভাল। আক্রমণ, মাঝমাঠ, রক্ষণ সব শক্তিশালী। ওরা দাপট দেখায়। কিন্তু এ বার আমরাও তৈরি। ওদের দেখে পরিকল্পনা করেছি। মাঠে ওদের আক্রমণ থামাতে হবে। আবার ওদের রক্ষণও ভাঙতে হবে। সেটা কী করে করা যাবে, সেই অনুশীলন করিয়েছি। মাঠে নেমে সেটা করে দেখাতে চাই। তবে এটুকু বলতে পারি, এ বার সেটপিস পার্থক্য গড়ে দিতে পারে।”
পুরনো কথা মনে না রেখে নতুন উদ্যমে ঝাঁপাতে চান ইস্টবেঙ্গলের পোড়খাওয়া ফুটবলার শৌভিক চক্রবর্তী। বহু ডার্বি খেলেছেন তিনি। জানেন, আগে থেকে এই ম্যাচে কাউকে এগিয়ে রাখা য়ায় না। তিনি বলেন, “অতীতের ফল নিয়ে ভেবে লাভ নেই। ডার্বির ফল সেই দিনের খেলার উপর নির্ভর করে। সেই দিন যে ভাল খেলবে সে জিতবে। মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল ম্যাচ সব সময় ৫০-৫০ থাকে। এটা বাঙালির আবেগের ম্যাচ। আমরা পুরোপুরি তৈরি। গ্রুপ পর্বে ভাল খেলেছি। আশা করছি কোয়ার্টার ফাইনালেও ভাল ফল করব।”