Argentina Football

ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে আর্জেন্টিনার পেনাল্টির সিদ্ধান্ত কি সঠিক ছিল? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?

প্রথমার্ধে একটি পেনাল্টি পায় আর্জেন্টিনা, যেখান থেকে গোল করেন মেসি। সেই পেনাল্টি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েই দেখা দিয়েছে বিতর্ক। কেউ বলছেন সেটি পেনাল্টি, কারওর মতে সেটি পেনাল্টি নয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২২ ১৯:৩২
Share:

আলভারেসকে বাধা দিচ্ছেন লিভাকোভিচ। ছবি: রয়টার্স

মঙ্গলবার রাতে ক্রোয়েশিয়াকে উড়িয়ে বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে গিয়েছে আর্জেন্টিনা। লিয়োনেল মেসির দল জিতেছে ৩-০ গোলে। তবে সেই ম্যাচেও রেফারিং নিয়ে দেখা দিয়েছে বিতর্ক। প্রথমার্ধে একটি পেনাল্টি পায় আর্জেন্টিনা, যেখান থেকে গোল করেন মেসি। সেই পেনাল্টি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েই দেখা দিয়েছে বিতর্ক। কেউ বলছেন সেটি পেনাল্টি, কারওর মতে সেটি পেনাল্টি নয়।

Advertisement

ঘটনাটি ঘটে ম্যাচের ৩২ মিনিটে। মাঝমাঠ থেকে এনজ়ো ফের্নান্দেস বল ভাসিয়ে দিয়েছিলেন সামনের দিকে। সেই বল যায় আলভারেসের উদ্দেশে। আর্জেন্টিনার ফরোয়ার্ডের সামনে ছিলেন ক্রোয়েশিয়ার দুই সেন্টার-ব্যাক। তাঁদের টপকানোর পর ক্রোয়েশিয়ার গোলকিপার ডমিনিক লিভাকোভিচ সামনে চলে আসেন। তাঁকেও কাটিয়ে নিয়েছিলেন আলভারেস। কিন্তু বল নিজের দখলে রাখতে গিয়ে লিভাকোভিচের দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হন আলভারেস। রেফারি ড্যানিয়েলে ওরসাতো পেনাল্টির নির্দেশ দেন।

অনেকেরই মত, লিভাকোভিচ বল বাঁচানোর জন্য দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি কোনও নড়াচড়া করেননি। আলাদা করে আলভারেসকে আটকানোর কোনও প্রচেষ্টা করেননি। লিভাকোভিচের সঙ্গে ধাক্কা লেগে নিজেকে সামলাতে না পেরে বক্সে পড়ে যান আলভারেস। এখানেই উঠছে প্রশ্ন। লিভাকোভিচ যখন আলভারেসকে ফাউল করেননি বা আটকানোর চেষ্টা করেননি, তখন কী হিসাবে পেনাল্টি দিলেন রেফারি? আলভারেস নিজেই দৌড়তে দৌড়তে টাল সামলাতে না পেরে বক্সের মধ্যে পড়ে গিয়েছেন। আলভারেস ইচ্ছাকৃত ভাবে লিভাকোভিচের সঙ্গে ধাক্কা লাগিয়ে পেনাল্টি পাওয়ার চেষ্টা করেছেন কি না, সেই প্রশ্ন উঠছে।

Advertisement

তবে ফুটবলের আইন বলছে, পেনাল্টি দেওয়ার সিদ্ধান্তে কোনও ভুল নেই। গোল করার মুহূর্তে কোনও ফুটবলার নিজের নিয়ন্ত্রণে বল থাকা সত্ত্বেও যদি বিপক্ষের ফুটবলারের দ্বারা কোনও ভাবে বাধাপ্রাপ্ত হন, তা হলে পেনাল্টি দিতেই পারেন রেফারি। বিপক্ষের সেই ফুটবলার বা গোলকিপারকে ট্যাকল করতেই হবে, এমন কোনও নির্দেশ নেই। আলভারেসের ক্ষেত্রে, তিনি লিভাকোভিচকে কাটিয়ে নিয়েছিলেন। বল ছিল তাঁরই নিয়ন্ত্রণে। যদি লিভাকোভিচের দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত না হতেন, তা হলে গোল করার ৯০ শতাংশ সুযোগ ছিল। এই ব্যাপারটি মাথায় রেখেই রেফারি পেনাল্টি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

ধাক্কা খেয়ে পড়ে যাচ্ছেন আলভারেস। ছবি: রয়টার্স

সে কথাই জানালেন ফিফার রেফারি প্রাঞ্জল বন্দ্যোপাধ্যায়। আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বলেছেন, “পরিষ্কার পেনাল্টি ছিল। ক্রোয়েশিয়ার গোলকিপার বক্সের মধ্যে বিপক্ষের ফুটবলারকে বাধা দিয়েছে। বাধা দেওয়ার সময়ে শারীরিক সংঘর্ষ হয়েছে। বক্সের বাইরে হলে রেফারি নিশ্চিত ভাবে ডিরেক্ট ফ্রিকিকের নির্দেশ দিতেন। যদি শারীরিক ভাবে সংঘর্ষ না হত, তা হলে সেটা ইনডিরেক্ট ফ্রিকিক হত। এ ক্ষেত্রে আর্জেন্টিনার ফুটবলার গোল করার জায়গায় ছিল। তাই পেনাল্টি দেওয়ার মধ্যে ভুল কিছু নেই।”

তবে দ্বিমতও রয়েছে। ফুটবলার গ্যারি নেভিল বলেছেন, “এটা কোনও ভাবেই পেনাল্টি নয়। এর থেকে বেশি লিভাকোভিচ কী করতে পারত? বল বাঁচানোর চেষ্টা করেছিল ও। পা মাটিতে গাঁথা ছিল। যদি আলভারেসকে টেনে ধরার চেষ্টা করত বা বক্সে ফেলে দিত, তা হলে পেনাল্টি দেওয়াই যেত। কিন্তু ও যেখানে কিছুই করেনি, সেখানে কেন পেনাল্টি দেওয়া হল বুঝতে পারছি না।”

নেভিলের কথার বিরোধিতা করেন একই অনুষ্ঠানে থাকা প্রাক্তন রেফারি পিটার ওয়াল্টন। তিনি বলেন, “লিভাকোভিচ বলের উদ্দেশে ঝাঁপায় এবং সেটা মিস্ করে। তার পরে ফুটবলারকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। ওর পথের সামনে দাঁড়িয়ে পড়ে আটকে দেয়। ফলে আলভারেস দৌড়তে পারেনি। তাই ওটা ফাউলই এবং নিশ্চিত পেনাল্টি।”

ক্রোয়েশিয়ার কোচ জ্লাটকো ডালিচও রেফারির সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেছেন। বলেছেন, “আমরা এমন একটা গোল খেলাম যেটা বেশ সন্দেহজনক। যে ভাবে পেনাল্টিটা দেওয়া হল, আমার একদম ভাল লাগেনি। আমাদের গোলকিপার যেটা করেছে তার বেশি কিছু করতে পারত না। এখন বোধহয় নতুন নিয়ম তৈরি হয়েছে। ওই গোলটাই ম্যাচ আমাদের থেকে কেড়ে নিল।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন