Durand Cup

টাইব্রেকারে জিতে ডুরান্ডের ফাইনালে ইস্টবেঙ্গল, বৃহস্পতিবার মোহনবাগান জিতলে রবিবার ডার্বি

যুবভারতীতে ছন্নছাড়া ফুটবল খেলেও ডুরান্ড কাপের ফাইনালে উঠল ইস্টবেঙ্গল। টাইব্রেকারে নর্থইস্টকে হারাল তারা। বৃহস্পতিবার মোহনবাগান জিতলে ডুরান্ডের ফাইনালে আবার ডার্বি।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০২৩ ২০:১৪
Share:

ইস্টবেঙ্গল ফুটবলারদের উল্লাস। —ফাইল চিত্র

ছন্নছাড়া ফুটবল। ভুল পাসের ছড়াছড়ি। ডার্বিতে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে ইস্টবেঙ্গল যে খেলাটা খেলেছিল তার ১০ শতাংশই খেলতে পারল না ডুরান্ডের সেমিফাইনালে। পর পর তিনটে পাস দিতেই ভুল করছিলেন লাল-হলুদ ফুটবলারেরা। দেখে মনে হচ্ছিল খেলার ইচ্ছাটাই তাঁদের নেই। রক্ষণ থেকে মাঝমাঠ, মাঝমাঠ থেকে আক্রমণ ভাগের ফুটবলারদের মধ্যে বোঝাপড়া দেখা গেল না। তুলনায় কিছুটা ভাল ফুটবল খেলল নর্থইস্ট। গোলের সুযোগ বেশি তৈরি করল তারা। ০-২ পিছিয়ে থাকার পরেও নাওরেম ও সংযুক্তি সময়ে নন্দকুমারের গোলে খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানে প্রভসুখন গিলের দস্তানায় জিতে ফাইনালে ওঠে ইস্টবেঙ্গল।

Advertisement

বৃহস্পতিবার ডুরান্ডের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে মুখোমুখি মোহনবাগান ও গোয়া। সেই ম্যাচে মোহনবাগান জিতলে রবিবার ডুরান্ডের ফাইনালে আবার ডার্বি।

যুবভারতীতে খেলার শুরুটা দেখে মনে হল নর্থইস্ট নয়, ইস্টবেঙ্গলই বোধহয় অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলতে নেমেছে। প্রথম ১৫ মিনিটেই ইস্টবেঙ্গলের গোল লক্ষ্য করে বেশ কয়েকটি আক্রমণ তুলে আনে নর্থইস্ট। খেলার শুরুতেই লাল-হলুদ রক্ষণকে বোকা বানিয়ে বক্সে ঢুকলেও গোল লক্ষ্য করে শট মারতে পারেননি ফাল্গুনী সিংহ।

Advertisement

দু’দলই মাঝমাঠ দখলের চেষ্টা করছিল। সেখানে খানিকটা এগিয়ে ছিল উত্তর-পূর্বের দল। নিজেদের মধ্যে ছোট ছোট পাসে আক্রমণে উঠছিলেন মিগুয়েল জাবাকো, মনবীর সিংহেরা। উল্টো দিকে ইস্টবেঙ্গলের দুই প্রান্ত ধরে খুব বেশি আক্রমণ হচ্ছিল না। যে কয়েকটি আক্রমণ মন্দার রাও, নিশু কুমারেরা তুলে আনেন তা-ও নর্থইস্টের রক্ষণে আটকে যায়। মহেশ নাওরেম সিংহ এই ম্যাচে ডান প্রান্ত ধরে খেলছিলেন। যে কয়েকটি আক্রমণ হয় তাতে ভূমিকা ছিল নাওরেমের। বক্সের বাইরে থেকে লুকাস পারডোর জোরালো শট বাঁচিয়ে দেন নর্থইস্টের গোলরক্ষক মিচু মিরশাদ। এই মিরশাদ ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন গোলরক্ষক।

মাঝেমধ্যে ভুল পাস, এলোমেলো ফুটবল দেখা যাচ্ছিল যুবভারতীতে। তার মাঝেই ২২ মিনিটের মাথায় চমক দেখাল নর্থইস্ট। বাঁ প্রান্তে বক্সের বাইরে বল পান ফাল্গুনী। ফিতরে ঢুকে রক্ষণের উপর দিয়ে বক্সের ভিতরে বল ভাসিয়ে দেন তিনি। লাল-হলুদ ডিফেন্ডারকে ঘাড়ের কাছে নিয়ে হেডে গোল করেন জাবাকো। এগিয়ে যায় নর্থইস্ট। গোল শোধ করার সুযোগ পেয়েছিলেন জাভিয়ের সিভেরিয়ো। কিন্তু নাওরেমের ক্রস নামাতে পারেননি তিনি। বল তাঁর মাথায় রেখে বাইরে বেরিয়ে যায়।

৩০ মিনিটের মাথায় আক্রমণের ঝাঁঝ একটু বাড়ায় ইস্টবেঙ্গল। ৩৬ মিনিটের মাথায় বক্সে ভাল জায়গায় বল পান মন্দার। সরাসরি গোলরক্ষক মিরশাদের হাতে মারেন তিনি। সময় কেটে যাচ্ছিল। গোলের মুখ খুলতে না পেরে অধৈর্য হয়ে পড়ছিলেন লাল-হলুদ ফুটবলারেরা।

প্রথমার্ধের বাকি সময়ে গোল করতে পারেনি ইস্টবেঙ্গল। মাঝেমধ্যেই ফুটবলারেরা চোট পাওয়ায় খেলায় বিঘ্ন ঘটছিল। শেষ পর্যন্ত ০-১ গোলে পিছিয়ে মাঠ ছাড়ে লাল-হলুদ ব্রিগেড।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে গোল করার একটা তাগিদ দেখায় ইস্টবেঙ্গল। প্রথমার্ধের থেকে ভাল ফুটবল শুরু করে তারা। লাল-হলুদ সমর্থকেরা ভেবেছিলেন খেলার ছবিটা হয়তো বদলাবে। কিন্তু কোথায় কী! ৫৬ মিনিটের মাথায় মাঝমাঠ থেকে লম্বা বল ধরে গোল করেন নর্থইস্টের ফাল্গুনী। ইস্টবেঙ্গলের গোটা রক্ষণ দাঁড়িয়ে দেখছিল। ২-০ গোলে এগিয়ে যায় নর্থইস্ট।

গোটা ম্যাচে কিছুতেই মাঝমাঠের দখল নিতে পারছিলেন না লাল-হলুদ ফুটবলারেরা। ভুল পাসের কারণেই দখল হারাচ্ছিলেন তাঁরা। ফলে আক্রমণ দানা বাঁধছিল না। যে টুকু আক্রমণ হচ্ছিল, নাওরেমের প্রান্ত ধরে। মাঝে মাঝে প্রতি আক্রমণ থেকে সুযোগ পাচ্ছিল নর্থইস্টও। কিন্তু সেগুলো কাজে লাগাতে পারছিল না তারা। বোঝা যাচ্ছিল, দু’দলের ফুটবলারেরাই ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন।

৭৬ মিনিটের মাথায় এক গোল শোধ করে ইস্টবেঙ্গল। ক্লেইটন সিলভার ক্রস থেকে নাওরেমের শট নর্থইস্টের ডিফেন্ডার দীনেশ সিংহের পায়ে লেগে দিক পরিবর্তন করে গোলে ঢুকে যায়। গোল করার পর চাপ আরও বাড়ায় ইস্টবেঙ্গল। ক্লেইটন ভাল খেলছিলেন। তিনি নামায় আক্রমণের চাপ বাড়াচ্ছিল ইস্টবেঙ্গল। উল্টো দিকে গোল খেয়ে সম্পূর্ণ ভাবে রক্ষণাত্মক খেলা শুরু করে নর্থইস্ট। তাতে আরও চাপে পড়ে যায় তারা।

সময় যত এগোচ্ছিল তত গোল করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিল ইস্টবেঙ্গল। কিন্তু তখনও ভুল করছিলেন লাল-হলুদ ফুটবলারেরা। বিশেষ করে নর্থইস্টের আক্রমণ ভাগে এসে তালগোল পাকিয়ে ফেলছিলেন তাঁরা। টানা ৯০ মিনিট জঘন্য পাসের ধারাবাহিক নিদর্শন রাখল ইস্টবেঙ্গল। গোটা ম্যাচে চার থেকে পাঁচ বার তিনটি ভাল ঠিক পাস দিয়েছে তারা। তার পরেও খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। সংযুক্তি সময়ে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন নর্থইস্টের জাবাকো। সংযুক্তি সময়ে শেষ মুহূর্তে হেডে গোল করে সমতা ফেরান নন্দকুমার।

টাইব্রেকারে নায়ক ইস্টবেঙ্গলের গোলরক্ষক প্রভসুখন। নর্থইস্টের তৃতীয় শট বাঁচিয়ে দেন তিনি। শেষ শট নিতে যান নন্দকুমার। তিনি ঠান্ডা মাথায় গোল করে ইস্টবেঙ্গলকে ফাইনালে তোলেন। হারের মুখ থেকে ফাইনালে ওঠেন কার্লেস কুয়াদ্রাতের ছেলেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন