শুভাশিস বসু (বাঁ দিকে) ও সুনীল ছেত্রী। —ফাইল চিত্র।
আইএসএল এখনও বিশ বাঁও জলে। কবে প্রতিযোগিতা শুরু হবে, বা আদৌ হবে কি না, তা নিয়ে কোনও নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি। বল আবার সুপ্রিম কোর্টে। তার মাঝেই নিজেদের মনোভাব জানালেন কয়েক জন ফুটবলার। তাঁদের মধ্যে যেমন মোহনবাগানের শুভাশিস বসু, সাহাল আব্দুল সামাদ রয়েছেন, তেমনই রয়েছেন বেঙ্গালুরু এফসি-র সুনীল ছেত্রী।
শুভাশিস, সুনীল, সাহালেরা একটি বিবৃতি পোস্ট করেছেন নিজেদের সমাজমাধ্যমের পাতায়। প্রতিটি বিবৃতির বক্তব্য এক। দেখে বোঝা যাচ্ছে, নিজেরা আলোচনা করেই এই বিবৃতি পোস্ট করেছেন তাঁরা। সেখানে বলা হয়েছে, “আমরা পেশাদার ফুটবলার হিসাবে যারা আইএসএলে খেলি, তারা একযোগে একটা আবেদন করছি। আমাদের একটাই আর্জি। আবার আইএসএল হোক। আমরা খেলতে চাই। এটাই সহজ কথা।”
শুভাশিসেরা জানিয়েছেন, এ বার মরিয়া হয়ে উঠেছেন তাঁরা। মোহনবাগানের অধিনায়ক বলেন, “আমাদের রাগ, হতাশা এখন বদলে গিয়েছে মরিয়া প্রচেষ্টায়। যে খেলাকে আমরা এত ভালবাসি তা খেলতে আমরা মরিয়া হয়ে উঠেছি। আমাদের দর্শক, পরিবার, সমর্থকরাই সব।” এই পরিস্থিতিতে আইএসএল শুরু করার আর্জি জানিয়েছেন তাঁরা। কল্যাণ চৌবের সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের উদ্দেশে লেখা হয়েছে, “যারা আমাদের দেশের ফুটবল চালায়, এই আর্জি তাদের উদ্দেশে। যে ভাবেই হোক আবার আইএসএল শুরু করুন। ভারতে আবার প্রতিযোগিতামূলক ফুটবল হোক।”
দীর্ঘ দিন ধরে যে অনিশ্চয়তা চলছে তাকে অন্ধকার সুড়ঙ্গের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে বিবৃতিতে। বলা হয়েছে, “যত দিন আমরা পেশাদার থাকব, আমাদের কাজের প্রতি দায়বদ্ধতা দেখাব, তত দিন আমরা এগিয়ে যাব। দেশের ফুটবল যারা চালাচ্ছে তারা একটু সৎ প্রচেষ্টা দেখাক। দীর্ঘ দিন ধরে একটা অন্ধকার সুড়ঙ্গের মধ্যে দিয়ে আমরা হাঁটছি। আশা করছি এ বার আলো দেখতে পাব।”
শুভাশিসেরা যতই আলোর কথা বলুন না কেন, পরিস্থিতি ততটা সহজ নয়। গত ১৬ অক্টোবর দরপত্র আহ্বান করেছিল সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন। সম্প্রচারস্বত্ব, স্পনসরশিপ-সহ আইএসএলের বাণিজ্যিক কাজকর্ম সামলানোর জন্য সংস্থাগুলির থেকে দরপত্র চাওয়া হয়েছিল। একের পর এক আলোচনা, পর্যবেক্ষণ এবং সময়সীমা বাড়ানোর পরেও আইএসএলের আয়োজক খুঁজে পাওয়া যায়নি। মনে করা হয়েছিল গত ১৫ বছর যারা আয়োজন করেছে, সেই এফএসডিএল দরপত্র জমা দেবে। তারাও আগ্রহ দেখায়নি।
অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রাওয়ের সামনে এক বেসরকারি সংস্থার সাহায্য নিয়ে একটি বৈঠকও আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে এফএসডিএল ছাড়াও তিনটি সংস্থা আগ্রহ দেখিয়েছিল। প্রাথমিক আগ্রহ দেখানোর পরেও কোনও সংস্থাই দরপত্র জমা দেয়নি। স্বার্থের সংঘাতের কারণে একটি সংস্থাকে বাতিল করা হয়েছে। টেন্ডারের আর্থিক মডেল এবং পরিকাঠামো সংক্রান্ত ব্যাখ্যার অভাবকেই দায়ী করা হয়েছে।
বিনিয়োগকারী সংস্থার জন্য যে আর্থিক মাপকাঠি রেখেছে ফেডারেশন, তাতেই কেউ আগ্রহী হয়নি বলে সূত্রের খবর। ফেডারেশনের তরফে আগ্রহী সংস্থার থেকে প্রতি বছর ৩৭.৫ কোটি টাকা অথবা লাভের পাঁচ শতাংশ (যেটি বেশি হবে) চাওয়া হয়েছিল। ১৫ বছরের জন্য চুক্তি করতে বলা হয়েছিল। বিশেষজ্ঞদের দাবি, এই মুহূর্তে ভারতীয় ফুটবলের যা বাণিজ্যিক অবস্থা, তাতে এই টাকা দাবি করা অবাস্তব ছাড়া কিছু নয়।
তখনই ফেডারেশন জানিয়েছিল, বিড রিভিউ কমিটি আলোচনায় বসে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করবে। সেই বৈঠকের পরেই আবার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে এআইএফএফ। এ বার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের অপেক্ষা করবে তারা। একটি বিবৃতিতে তারা বলেছে, “রবিবার সর্বভারতীয় ফুটবল সংস্থার বিড রিভিউ কমিটি একটি বৈঠক ডেকেছিল। সেখানে দরপত্রের অবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেই আলোচনার পর কমিটির চেয়ারপার্সন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এল নাগেশ্বর রাও তাঁর রিপোর্ট সুপ্রিম কোর্টে জমা দেবেন। তার পর আদালতই পরের ধাপ ঠিক করে দেবে।” এখন দেখার, শীর্ষ আদালত এই বিষয়ে কী নির্দেশ দেয়।