ISL 2024-25

জামশেদপুর কঠিন চ্যালেঞ্জ, সাফল্যের ‘বোঝা’ সরিয়ে বৃহস্পতিবার খেলতে হবে মোহনবাগানকে

বৃহস্পতিবার জামশেদপুরের বিরুদ্ধে আইএসএলের সেমিফাইনালের প্রথম পর্বের ম্যাচ খেলতে নামবে মোহনবাগান। অ্যাওয়ে ম্যাচে খালিদ জামিলের দলের বিরুদ্ধে কঠিন চ্যালেঞ্জ হোসে মোলিনার দলের।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০২৫ ১৯:৫৬
Share:

জেমি ম্যাকলারেন (বাঁ দিকে) ও দিমিত্রি পেত্রাতোস। জামশেদপুরের মাঠেও কি দেখা যাবে এই দৃশ্য? —ফাইল চিত্র।

গত বারের স্মৃতি এখনও তাজা মোহনবাগান সমর্থকদের মনে। যে মুম্বই সিটি এফসিকে হারিয়ে আইএসএল লিগ-শিল্ড জিতেছিল মোহনবাগান, সেই মুম্বইয়ের কাছেই আইএসএল কাপের ফাইনালে হারতে হয়েছিল তাদের। এক মরসুমে জোড়া ট্রফিজয়ের সুযোগ হাতছাড়া হয়েছিল। এ বার আবার সুযোগ এসেছে। তবে তার জন্য আগে সেমিফাইনাল জিততে হবে মোহনবাগানকে। আর সেই লড়াইয়ের প্রথম ধাপে বৃহস্পতিবার বাগানের মুখোমুখি জামশেদপুর এফসি। প্রথম ম্যাচ জামশেদপুরের ঘরের মাঠে। সেখানে কঠিন লড়াই অপেক্ষা করছে হোসে মোলিনার দলের সামনে। সেমিফাইনাল জিততে হলে সাফল্যের ‘বোঝা’ সরাতে হবে সবুজ-মেরুনকে।

Advertisement

আইএসএলে গত তিন বছর সবচেয়ে সফল ক্লাব মোহনবাগান। তিন বছরই ট্রফি জিতেছে তারা। ২০২৩ সালে আইএসএল কাপ জিতেছে বাগান। গত বার জিতেছে লিগ-শিল্ড। এ বারও লিগ-শিল্ড এসেছে ক্লাব তাঁবুতে। তবে গত দু’বারের তুলনায় এ বার সাফল্য আরও বেশি। ২০২৩ সালে লিগ শীর্ষে শেষ করতে পারেনি বাগান। গত বার শেষ ম্যাচে হয়েছিল ফয়সালা। আর এ বার দু’ম্যাচ বাকি থাকতে লিগ-শিল্ড জিতেছে তারা। একতরফা দাপট দেখিয়েছেন শুভাশিস বসুরা। আক্রমণ, মাঝমাঠ থেকে রক্ষণ, তিনটি ক্ষেত্রেই সেরা ফুটবল খেলেছে দল। একের পর এক রেকর্ড গড়ে ভারতসেরা হয়েছে। এত সাফল্য অনেক সময় দলের খিদে কমিয়ে দেয়। গত বার হয়তো সেটাই হয়েছিল। এ বার হলে জোড়া ট্রফিজয়ের সুযোগ নষ্ট হবে। তাই আগে যে সাফল্য তারা পেয়েছে, তা মাথা থেকে বার করতে হবে ফুটবলারদের। সাফল্য অনেক সময় প্রতিবন্ধকতার কাজ করে। সেটা চাইছেন না মোলিনা।

জামশেদপুরের বিরুদ্ধে নামার আগে বাগান কোচ স্পষ্ট করে দিয়েছেন, আরও এক বার তাঁদের প্রমাণ করতে হবে যে তাঁরাই ভারতের সেরা দল। তাই একটি করে ম্যাচ ধরে এগোতে চাইছেন তিনি। ফাইনাল তো দূর, সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগের কথাও ভাবছেন না বাগানের স্প্যানিশ কোচ। ঠিক যে ভাবে লিগে একটি করে ম্যাচ ধরে এগোচ্ছেন, সেমিফাইনালেও সেটাই করতে চান। ফুটবলারদেরও সে কথা বোঝাচ্ছেন তিনি।

Advertisement

মোলিনা জানেন, তাঁদের প্রতিপক্ষ কঠিন। লিগে ঘরের মাঠে জামশেদপুরকে হারালেও অ্যাওয়ে ম্যাচে আটকে গিয়েছিল বাগান। ১-১ গোলে ড্র হয়েছিল খেলা। বাগানের অশ্বমেধের ঘোড়া তখন এগিয়ে চলেছে। একের পর এক ম্যাচে প্রতিপক্ষকে হেলায় হারাচ্ছে তারা। সেই সময়ও জামশেদপুরকে হারাতে পারেনি মোহনবাগান। যদিও ম্যাচ শেষে মোলিনা জানিয়েছিলেন, সেই ম্যাচে তাঁর দল সবচেয়ে ভাল ফুটবল খেলেছিল। খেলার ফল সব কথা বলে না। সেমিফাইনালের আগেও সে কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন মোলিনা। তবে এ বার শুধু ভাল খেলা নয়, জিতে ফিরতে চান তিনি। তাই তো মোলিনা জানিয়েছেন, তাঁর ছেলেরা নিজেদের সেরাটা দেবেন। লড়াই ছাড়বেন না।

ভারতীয় ফুটবলে খালিদ পোড়খাওয়া কোচ। অনেক দলকে কোচিং করিয়েছেন। তালিকায় এ রাজ্যের ইস্টবেঙ্গলও রয়েছে। তাই কলকাতার ফুটবলের ঘরানা তিনি চেনেন। এ বার আইএসএলে অন্যতম সেরা আক্রমণ ছিল নর্থইস্ট ইউনাইটেডের। আলাদিন আজ়েরাইদের ঘরের মাঠে গিয়ে তাদের হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠেছে জামশেদপুর। সেই ম্যাচে বোঝা গিয়েছিল, খালিদ কী ভাবে ম্যাচের ছবি বদলে দিতে পারেন। গোটা ম্যাচে আজ়েরাই তেমন সুযোগই পাননি। বলা ভাল, সেই পথ আটকে দিয়েছিলেন খালিদ। কঠিন দলের বিরুদ্ধে জিততে জানেন তিনি। নিশ্চয় সেই ম্যাচে নজর ছিল মোলিনার। নিশ্চয় তিনি বুঝেছেন, খালিদের বিরুদ্ধে মগজাস্ত্রের লড়াই সহজ হবে না।

তবে মোলিনা বাগানের আগের কোচ আন্তোনিয়ো লোপেস হাবাস নন। হাবাসের যা মনে হত, সকলের সামনে বলে দিতেন। তাতে কাউকে ছোট করা হচ্ছে কি না ভাবতেন না। মোলিনা অন্য ঘরানার। তিনি মুখে বেশি কথা বলেন না। ম্যাচের আগে সাংবাদিক বৈঠকে যত বার জামশেদপুর বা খালিদের নাম উঠেছে তত বার তিনি সম্মানের সঙ্গে উত্তর দিয়েছেন। জানিয়েছেন, কোনও এক জনের বিরুদ্ধে লড়াই নয়। লড়াই একটা দলের বিরুদ্ধে। খালিদও অনেকটা হাবাস ঘরানার। মাঠে উত্তেজিত হয়ে পড়েন। প্রতিপক্ষ বেঞ্চ ও সমর্থকদের দিকে তেড়ে যান। নর্থইস্টের বিরুদ্ধেও সেটা দেখা গিয়েছে। মোলিনা আগে থেকে তেমন কোনও উত্তাপ বাড়াতে চাইছেন না। তিনি দলের মনঃসংযোগ নষ্ট হতে দিতে চাইছেন না। শুধু মাঠে নেমে খেলতে চাইছেন। জিততে চাইছেন।

মোহনবাগানের অবশ্য একটা সুবিধা আছে। আইএসএলের বাকি কোনও দলের সেই সুবিধা নেই। সেটা হল গোলকরা ফুটবলারের সংখ্যা। অনেক বিকল্প রয়েছে বাগান কোচের হাতে। জেমি ম্যাকলারেন, দিমিত্রি পেত্রাতোস, জেসম কামিংস, গ্রেগ স্টুয়ার্ট, লিস্টন কোলাসো, মনবীর সিংহের মতো অজস্র বিকল্প রয়েছে তাঁর হাতে। এক জন আটকে গেলে অন্য জনকে ব্যবহার করতে পারবেন। শুধু কি তাই, বাগানের চার ডিফেন্ডার শুভাশিস, টম অলড্রেড, আলবের্তো রদ্রিগেস ও দীপেন্দু বিশ্বাসের নামে ১৪টি গোল রয়েছে। ফলে বাগানকে আটকানো সহজ হবে না খালিদের পক্ষে।

বাগানের রক্ষণও এ বারের সেরা। গোটা প্রতিযোগিতায় ১৪টি গোল খেয়েছে তারা। গোলের নীচে বিশাল কাইথ ১৪টি ম্যাচে গোল খাননি। এ রকম রক্ষণ ভাঙা সহজ হবে না জামশেদপুরের পক্ষে। জর্ডন মারে, জাভি হার্নান্দেস, স্টিভেন এজ়েদের উপর সারা ক্ষণ নজর থাকবে বাগানের ডিফেন্ডারদের। অর্থাৎ, সব মিলিয়ে টান টান লড়াই হতে পারে জামশেদপুরের মাঠে। গত বার সেমিফাইনালের প্রথম লেগে ওড়িশার কাছে হেরেছিল বাগান। পরে ঘরের মাঠে জিতে ফাইনালে পৌঁছেছিল তারা। এ বার ঘরের মাঠের অপেক্ষায় থাকতে চাইছেন না মোলিনা। শুরুতেই জিততে চাইছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে মোহনবাগান বনাম জামশেদপুরের খেলা। সরাসরি দেখা যাবে স্টার স্পোর্টস চ্যানেল ও জিয়োহটস্টার অ্যাপে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement