প্রয়াত প্রাক্তন ইংল্যান্ড অধিনায়ক বব উইলিস, ব্যথিত সৌরভ থেকে গাওয়ার

দেশের হয়ে ৯০টি টেস্টে ৩২৫ উইকেট নিয়েছিলেন ডানহাতি এই ফাস্ট বোলার। ৬৪টি ওয়ান ডে ম্যাচে উইকেটসংখ্যা ৮০।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:০৪
Share:

স্মৃতি: আগুনে বোলিংয়ে ইডেন মাতিয়েছিলেন বব উইলিস। ফাইল চিত্র

চলে গেলেন প্রাক্তন ইংল্যান্ড অধিনায়ক এবং ভয়ঙ্কর পেস বোলার হিসেবে ক্রিকেটবিশ্বে পরিচিত বব উইলিস। প্রথাগত বোলিং অ্যাকশন না থাকার কারণে যাঁকে বিশ্বক্রিকেট চিনত ‘গুজ’ নামে। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৭০ বছর।

Advertisement

দেশের হয়ে ৯০টি টেস্টে ৩২৫ উইকেট নিয়েছিলেন ডানহাতি এই ফাস্ট বোলার। ৬৪টি ওয়ান ডে ম্যাচে উইকেটসংখ্যা ৮০। যদিও ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে এখনও উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে ১৯৮১ সালে অ্যাশেজ সিরিজে হেডিংলেতে তৃতীয় টেস্টে তাঁর বিধ্বংসী বোলিংয়ের ছবি। প্রথম ইনিংসে কোনও উইকেট না পেলেও উইলিস ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছিলেন দ্বিতীয় ইনিংসে। তাঁর বোলিং পরিসংখ্যান ছিল ১৫.১-৩-৪৩-৮। ১৩০ রান তাড়া করতে গিয়ে অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় ইনিংস শেষ হয়ে যায় ১১১ রানে। ১৮ রানে টেস্ট জিতেছিল ইংল্যান্ড। যদিও সেই সিরিজ চিহ্নিত হয়েছিল ‘বোথামস অ্যাশেজ’ হিসেবে। গোটা সিরিজে অবিশ্বাস্য ক্রিকেট উপহার দিয়েছিলেন ইংল্যান্ডের অলরাউন্ডার। যদিও প্রথম দু’টি টেস্টে অধিনায়কত্ব করার পরে বোথামকে সরিয়ে নেতৃত্বে ফেরানো হয়েছিল মাইক ব্রিয়ারলিকে। ঐতিহাসিক হেডিংলে টেস্টেই তিনিই ছিলেন অধিনায়ক।

বুধবার উইলিসের পরিবারের তরফে জানানো হয়, গত তিন বছর ধরে প্রস্টেট ক্যানসারে ভুগছিলেন তিনি। এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘প্রিয় ববকে হারিয়ে আমরা শোকাচ্ছন্ন, যিনি একই সঙ্গে ছিলেন অসাধারণ স্বামী, পিতা, ভাই এবং দাদু। পরিচিত মহলে প্রত্যেকেই তাঁর ব্যক্তিত্বের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন।’’ আরও বলা হয়েছে, ‘‘তিনি রেখে গিয়েছেন স্ত্রী লরেন, কন্যা কেটি, ভাই ডেভিড এবং বোন অ্যানকে। এই শোকের সময়ে উইলিস পরিবারের আবেদন, তাঁদের যেন বিরক্ত না করা হয়। সকলের কাছে অনুরোধ, ফুল অথবা কোনও আর্থিক অনুদান দেওয়া হলে তা যেন দান করা হয় প্রস্টেট ক্যানসার সংস্থাকে।’’

Advertisement

বিধ্বংসী বব

• নাম: রবার্ট জর্জ ডিলান উইলিস
• জন্ম: ৩০ মে, ১৯৪৯
• টেস্ট: ৯০
• উইকেট: ৩২৫
• সেরা বোলিং: ৮-৪৩
• ওয়ান ডে: ৬৪
• উইকেট: ৮০
• সেরা বোলিং: ৪-১১

ইডেনে উইলিস

১-৬ জানুয়ারি, ১৯৭৭ (দ্বিতীয় টেস্ট)
• প্রথম ইনিংস: ২০-৩-২৭-৫
• দ্বিতীয় ইনিংস: ১৩-১-৩২-২
*ইংল্যান্ড জয়ী ১০ উইকেটে

১-৬ জানুয়ারি, ১৯৮২ (চতুর্থ টেস্ট)
• প্রথম ইনিংস: ১৪-৩-২৮-২
• দ্বিতীয় ইনিংস: ৬-০-২১-০
*ম্যাচ ড্র

১৯৮৪ সালে ক্রিকেট থেকে অবসরের পরে উইলিস ধারাভাষ্যকার হিসেবে নতুন ইনিংস শুরু করেছিলেন। শোকবার্তায় ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড বলেছে, ‘‘বব উইলিসের মতো ব্যক্তিত্বকে বিদায় জানাতে গিয়ে আমরা ব্যথিত হয়ে পড়ছি। তিনি ছিলেন ইংল্যান্ডের ক্রিকেট ইতিহাসে অন্যতম কিংবদন্তি। মাঠে এবং পরে মাঠের বাইরে তাঁর প্রগাঢ় ক্রিকেটপ্রজ্ঞা কোনও দিন ভোলা যাবে না।’’

আরও পড়ুন: বুমরাকে নাকি সামলে দিতেন! দাবি রজ্জাকের

শোকাচ্ছন্ন ক্রিকেটবিশ্বও। প্রাক্তন ইংল্যান্ড অধিনায়ক ডেভিড গাওয়ার বলেছেন, ‘‘ওঁর অধিনায়কত্বে খেলেছি। আবার ওঁর হাত থেকেই তুলে নিয়েছি নেতৃত্বের ব্যাটন। ববের মতো ভাল, বিশ্বস্ত বন্ধু এবং ইংল্যান্ড সমর্থক দ্বিতীয় কেউ হতে পারবেন না।’’ আর এক প্রাক্তন সতীর্থ পল অ্যালট বলেছেন, ‘‘উইলিসের সঙ্গে আমার পরিচয় দীর্ঘ ৪০ বছরের। আমরা একসঙ্গে খেলেছি। ইংল্যান্ড দলে বব ছিলেন আমার প্রথম সহ-অধিনায়ক।’’ ভারতীয় বোর্ড প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় টুইট করেছেন, ‘‘বব উইলিসের প্রয়াণের খবর শুনে খুবই খারাপ লাগছে। ওঁর আত্মার শান্তি কামনা করি। ক্রিকেটবিশ্ব উইলিসের অভাব অনুভব করবে।’’ প্রসঙ্গত ভারতের বিরুদ্ধে ১৭টি টেস্ট খেলেছিলেন উইলিস। পেয়েছিলেন ৬২ উইকেট। ১৯৭৭ সালে খেলেছিলেন ইডেনেও। দুই ইনিংস মিলিয়ে নিয়েছিলেন সাত উইকেট (৫-২৭ এবং ২-৩২)। ইংল্যান্ড জিতেছিল ১০ উইকেটে। পরে আবার ইডেনে ফিরেছিলেন ১৯৮২ সালে। দুই ইনিংস মিলিয়ে পান দু’টি উইকেট। ম্যাচ ড্র হয়েছিল। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাক্তন ফাস্ট বোলার অ্যালান ডোনাল্ড টুইট করেন, ‘‘ওঁর সঙ্গে ধারাভাষ্য দারুণ উপভোগ করেছি। ওঁর সময়ের ক্রিকেটের মজার গল্পগুলো শুনতে দারুণ লাগত।’’

সান্ডারল্যান্ড থেকে উঠে আসা বব উইলিসের আন্তর্জাতিক মঞ্চে অভিষেক ২১ বছর বয়সে। ১৯৭১ সালের অ্যাশেজ সিরিজে আহত অ্যালান ওয়ার্ডের পরিবর্তে ইংল্যান্ড দলে জায়গা পেয়েছিলেন তিনি। সাত টেস্টের অ্যাশেজ সিরিজে শেষ চার টেস্টে নিয়মিত ভাবে খেলেন উইলিস। মোট উইকেট ছিল ১২টি। ১৯৭০ থেকে ৮০-র দশক পর্যন্ত ইংল্যান্ড ক্রিকেটে নতুন এক মাত্রা যোগ করেছিলেন ৬ ফুট ৬ ইঞ্চি উচ্চতার এই ডানহাতি ফাস্ট বোলার। যাঁর সম্পর্কে পরবর্তী সময়ে ধারাভাষ্যকার ক্রিস্টোফার মার্টিন জেনকিন্স বলেছিলেন, ‘‘ক্লাব ক্রিকেটে খুব সামান্য সময়ের জন্য ওর বিরুদ্ধে খেলার সুযোগ হয়েছিল। ওই রকম ঝাঁকড়া চুলের দীর্ঘকায় মানুষের বিরুদ্ধে খেলাটা খুব অস্বস্তির ছিল।’’ ১৯৬৯ সালে সারের হয়ে কাউন্টি ক্রিকেটে আগমন। যদিও দলে ছিলেন না নিয়মিত। বরং সেই সময় করিন্থিয়ান-ক্যাসুয়ালস ফুটবল দলে গোলকিপার হিসেবে খেলার একটা সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছিল। তখনই পাল্টে গেল জীবনের গতিপথ। ১৯৭১ সালে অ্যাশেজ সিরিজে হঠাৎ করেই ডাক পান তিনি। সেই সফরে ইংল্যান্ড দলের অধিনায়ক ছিলেন রে ইলিংওয়ার্থ, যাঁর উইলিস সম্পর্কে কোনও ধারণাই ছিল না। তিনি দলে চেয়েছিলেন এমন এক বোলারকে, যাঁকে দেখে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানেরা আতঙ্কিত হয়ে পড়বেন। সারে দলের ব্যাটসম্যান ডন এডরিচই এই কিংবদন্তি বোলারের নাম বলেন ইলিংওয়ার্থকে। ইংল্যান্ড ক্রিকেটেও শুরু হয়ে যায় নতুন অধ্যায়ের। যে বর্ণোজ্জ্বল ইতিহাসের সমাপ্তি ঘটল বুধবার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন