গোটা ফুটবল বিশ্ব জুড়ে এখন একটাই হেডলাইন, ‘বন্ধু যখন শত্রু’।
তবে তাঁর কাছে কিন্তু ইউরোর শেষ চারের লড়াইটা শুধু রিয়াল মাদ্রিদের সতীর্থ ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর বিরুদ্ধে নয়। আরও এক সতীর্থের বিরুদ্ধেও। জার্মানির টনি ক্রুজ। ইউরো শুরুর আগে তাঁকে ক্রুজ বিদ্রুপ করেছিলেন, ‘তোমাদের দৌড় তো তিনটে ম্যাচের’। মানে গ্রুপ পর্যায়ের পরই তো ছিটকে যেতে হবে এতটাই দুর্বল ওয়েলস টিম। এটাই ইঙ্গিত ছিল জার্মান মিডফিল্ডারের। এমন অপমান ভোলা যায়! তিনিও ভোলেননি। ঠাট্টার গনগনে জবাবটা এ বার ফাইনালে উঠে দিতে চান। চান ফাইনালে তাদের মুখোমুখি পড়ুক ক্রুজের জার্মানিই। তিনি— গ্যারেথ বেল।
‘‘ক্রুজের কথাটা মনে আছে। তাই ফাইনালে ওদের সামনে পেলে দারুণ লাগবে,’’ পর্তুগালের চ্যালেঞ্জে মাঠে নামার চব্বিশ ঘণ্টা আগে বলছেন ওয়েলশ উইজার্ড। তবে এটাই কিন্তু প্রথম নয়। বেলকে এই নিয়ে আগেও কথা শুনতে হয়েছে। ‘‘এই যন্ত্রণাটা নতুন নয়। কখনও হাসি, মজা, কখনও টিটকিরি শুনতে হয়েছে এই নিয়ে। আমাদের র্যাঙ্কিং যখন ১০০ ছিল অনেকে তো তখন এমনও বলত দু’সপ্তাহের জায়গায় আমরা ছুটি পাই ন’সপ্তাহ,’’ যোগ করেছেন রিয়াল তারকা।
এটা অবশ্যই ঠিক যে বেলের ওয়েলস এ বার ইউরোয় তাদের অতি বড় সমর্থকদের প্রত্যাশাও ছাপিয়ে গিয়েছে। গত পঞ্চাশ বছরে প্রথম বড় কোনও টুর্নামেন্টে শুধু কোয়ালিফাই করাই নয়, সেমিফাইনালে ওঠার কৃতিত্ব দেখিয়ে। তাও আবার কোয়ার্টার ফাইনালে বিশ্বের দু’নম্বর টিম বেলজিয়ামকে হারিয়ে। এর আগে ওয়েলসের বড় টুর্নামেন্টে সাফল্য বলতে ১৯৫৮ বিশ্বকাপে। সে বার সে দেশের ‘সোনার ছেলে’ ইভর আলচার্চের দাপটে কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছে গিয়েছিল ওয়েলস। শেষ পর্যন্ত পেলের ব্রাজিলের কাছে হার মানতে হয় ০-১ হেরে। সেই কৃতিত্বও যেন এ বার টপকে গিয়েছেন বেলরা।
বেল সেটা জানেন বলেই বলছেন, ‘‘আমরা বুঝি অনেকের প্রত্যাশাই আমরা ছাপিয়ে গিয়েছি। তবে আমরা এটাও বিশ্বাস করি এই রূপকথার দৌড় এখানেই শেষ নয়। গ্রিস, ডেনমার্ক যদি অতীতে করে দেখাতে পারে, আমরা পারব না কেন?’’ পাশাপাশি কোয়ালিফায়ার থেকে তাঁদের ইউরোয় এত দূরের পথ পেরোনোটা যে স্রেফ ভেল্কি নয় সেই কথাও বলে রেখেছেন তিনি, ‘‘কোয়ালিফায়ার থেকেই আমাদের টিমে একজোট হয়ে থাকার ব্যাপারটা ক্রমশ দানা বেঁধেছে। যত দিন গিয়েছে সেটা আরও জমাট হয়েছে। যখন যে রকম প্রয়োজন হয়েছে— কখনও কুৎসিত ভাবে, কখনও ভাল ফুটবল খেলে জিতেছি। তবে একটা বিশ্বাস ছিল, আমরা পারব। তাই আমার হলিডে বুকিংটা করেছি ১১ জুলাই (ফাইনালের পরের দিন)।’’
আত্মবিশ্বাসের আগুনে গনগনে হয়ে থাকা ওয়েলস ক্যাপ্টেন এটাও বলছেন যে সেমিফাইনালে যতই অ্যারন র্যামসে আর বেন ডেভিস না থাকুন তাতে ওয়েলসের ফাইনালে ওঠা আটকাবে না। কেন না ইউরোয় তাঁরা যত ম্যাচ খেলেছেন তত উন্নত করে তুলেছেন নিজেদের। তাই পর্তুগালের মতো বড় টিমকে কী করে হারাতে হয় সেটা তাঁরা জানেন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় আবার রোনাল্ডো-বেল যুদ্ধ নিয়ে দু’ভাগ রিয়ালের সমর্থকরা। কেউ বলছেন, ‘আমি রিয়াল সমর্থক হলেও চাই এ বার বেলের সঙ্গে যুদ্ধে হারুক রোনাল্ডোর পর্তুগাল।’ পাল্টা যার জবাবে রোনাল্ডো আর রিয়ালের আর এক ভক্ত বলছেন, ‘দূর, কখনই সেটা হবে না। বুধবার মাঠে রোনাল্ডো বুঝিয়ে দেবে বেলকে শিষ্য কে আর গুরু কে।’’
এর মধ্যে ওয়েলস সমর্থকদের জন্য কিছুটা হলেও খারাপ খবর। পর্তুগালকে হারাতে পারলে ফাইনালে ওঠার সেলিব্রেশনে বেল, রবসন-কানু, অ্যাশলে উইলিয়ামসদের মাঠে বাচ্চাদের নিয়ে মেতে ওঠার ছবি আর দেখা যাবে না হয়তো। নিরাপত্তার জন্য উয়েফা ফুটবলারদের বাচ্চাদের ম্যাচের পর মাঠে না আনার নির্দেশ দিয়ে বলেছে ‘এটা ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ। ফ্যামিলি পার্টি নয়।’ তাতেও অবশ্য দমানো যাচ্ছে না ওয়েলস সমর্থকদের। সোশ্যাল মিডিয়ায় কেউ কেউ বলছেন, ‘উয়েফা যাই বলুক, ফাইনালে উঠলে আমাদের সেলিব্রেশনে কোনও ভাঁটা পড়বে না।’