ফিল্ম দেখিয়ে অমলদা বলতেন, দেখ কী ফিট

নিজে গোলকিপার ছিলাম। পাখির মতো উড়ে গিয়ে ব্যাঙ্কসের বল বিপন্মুক্ত করার দৃশ্যগুলো ছোট বয়সে মোহিত করে দিত। তবে ব্যাঙ্কসের মহিমা তখনও সে ভাবে বুঝিনি। 

Advertisement

তরুণ বসু

শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:৩০
Share:

ক্লাস সিক্স বা সেভেনে পড়ি। চুটিয়ে ফুটবল প্রতিযোগিতাগুলোতে খেলে বেড়াই। থাকতাম তখন দক্ষিণ কলকাতায়। স্কুল পালিয়ে সিনেমা দেখতে যেতাম মাঝে মাঝে। তখন সিনেমা শুরুর আগে বিশ্ব ফুটবলের কিছু নির্বাচিত অংশ দেখানো হত। সেখানেই প্রথম দেখি আমার স্বপ্নের নায়ক গর্ডন ব্যাঙ্কসকে। আমার ছোটবেলার সেই নায়ক মঙ্গলবার বিকেলে চিরনিদ্রায় চলে গিয়েছেন শুনে তাই মনটা খারাপ। নিজে গোলকিপার ছিলাম। পাখির মতো উড়ে গিয়ে ব্যাঙ্কসের বল বিপন্মুক্ত করার দৃশ্যগুলো ছোট বয়সে মোহিত করে দিত। তবে ব্যাঙ্কসের মহিমা তখনও সে ভাবে বুঝিনি।

Advertisement

ব্যাঙ্কস কোন মাপের গোলকিপার তা বুঝলাম, আরও একটু বড় হওয়ার পরে। বাংলার নানা প্রান্তে ঘুরে তখন প্রয়াত কোচ অমল দত্ত প্রোজেক্টরে বিশ্ব ফুটবলের প্রদর্শনী করতেন। তখনই অমলদার ধারাভাষ্য শুনে টেকনিক্যাল দিক দিয়ে ব্যাঙ্কসকে বুঝতে শিখি। এখনও কানে বাজে ধারাভাষ্যকার অমলদার কথাগুলো। বলতেন, ‘‘কী চমৎকার সাহস ও অনুমানক্ষমতা। চোখ ধাঁধিয়ে দেওয়ার মতো গতি আর মানসিক দৃঢ়তা ব্যাঙ্কসের। আউটিং (সময় মতো গোল ছেড়ে বেরিয়ে এসে বল বিপন্মুক্ত করা) আর গ্রিপিং (বল তালুবন্দি করার দক্ষতা) অবাক করে।’’ পরবর্তী কালে যখন বড় দলে খেলতে শুরু করলাম, ওই ফিল্ম দেখেই আবিষ্কার করেছিলাম, গোলের কোণ ছোট করে দিয়ে বিপক্ষের মুখের গ্রাস কী অসম্ভব ক্ষিপ্রতার সঙ্গে কেড়ে নিতেন ব্যাঙ্কস। ফিল্ম দেখিয়ে অমলদাও বলতেন, দেখ, কী ফিটনেস!

আমরা চেষ্টা করেছিলাম অনেক কিছু শেখার। এখনও যদি কেউ ব্যাঙ্কসকে দেখে কিছু শিখতে চায়, তা হলে চারটি বিষয়ে চোখ রাখতে হবে। এক, শূন্যে ভেসে আসা বলে ব্যাঙ্কসের আউটিং। দুই, গ্রিপিং। তিন, নমনীয় শরীরের সৌজন্যে শূন্যে লাফ দিয়ে অনেকটা সময় ভেসে থাকার কৌশল। চার, পজিশন-জ্ঞান। বল কোথায় যাচ্ছে, তা অন্যদের চেয়ে আগে বুঝে ঠিক জায়গায় পৌঁছে ফরোয়ার্ডের পা থেকে টুক করে বলটি তুলে নিতেন এই কিংবদন্তি গোলকিপার। অবিশ্বাস্য ফিটনেস না থাকলে যা হয় না।

Advertisement

ইউটিউবে ওঁর খেলার বিভিন্ন মুহূর্ত ধরা আছে। খুঁটিয়ে দেখলে চোখে পড়বেই এই গুণগুলো। দেখবেন, বিপদের মুহূর্তে গোল ছেড়ে ১০-১২ গজ সামনে এগিয়ে এসে শূন্য থেকে বল ধরছেন ব্যাঙ্কস। দেখতে হবে, সত্তরের বিশ্বকাপে ব্রাজিল বনাম ইংল্যান্ডের সেই ম্যাচটাও। জায়েরজিনহো যখন ক্রস ভাসাচ্ছেন, ব্যাঙ্কস তখন প্রথম পোস্টে। কিন্তু গতি, অনুমানক্ষমতা, রিফ্লেক্স ও সাহসের উপরে ভর করেই ক্ষিপ্রতার সঙ্গে দ্বিতীয় পোস্টে উড়ে গিয়ে পেলের হেড গোলে ঢুকতে দেননি।

খেলোয়াড় জীবনে এমন বহু দুরন্ত সেভ করেছেন। কিন্তু মারণরোগের বিরুদ্ধে লড়তে লড়তে হেরেই গেলেন। শেষ হয়ে গেল এক অধ্যায়। কিন্তু আমি নিশ্চিত, ব্যাঙ্কসের সেই সোনার ইতিহাস আকর্ষণ করবে পরবর্তী প্রজন্মকেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন