লটারির টাকায় ব্রিটেনের মিশন অলিম্পিক্স: ‘লজ্জার টিম’ ২০ বছরেই ‘সোনার টিম’

কুড়ি বছর আগেই তাদের অ্যাথলিটরা দেশে ফিরেছিলেন লজ্জায় ডুবে। তাঁদের দলকে বলা হয়েছিল ‘টিম অব শেম’। লজ্জার টিম। ঠিক দু’দশকে ছবিটা যে এভাবে পাল্টে যাবে সে দেশের অতিবড় সমর্থকও বোধহয় তখন ভাবেননি। কিন্তু সেটাই করে দেখাল তারা। গ্রেট ব্রিটেন।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৬ ০৪:০৬
Share:

অভিনব ‘সোনা’র প্লেনে দেশে ফিরলেন গ্রেট ব্রিটেনের অ্যাথলিটরা। ছবি: টুইটার

কুড়ি বছর আগেই তাদের অ্যাথলিটরা দেশে ফিরেছিলেন লজ্জায় ডুবে। তাঁদের দলকে বলা হয়েছিল ‘টিম অব শেম’। লজ্জার টিম। ঠিক দু’দশকে ছবিটা যে এভাবে পাল্টে যাবে সে দেশের অতিবড় সমর্থকও বোধহয় তখন ভাবেননি। কিন্তু সেটাই করে দেখাল তারা। গ্রেট ব্রিটেন।

Advertisement

১৯৯৬ আটলান্টা অলিম্পিক্সে ব্রিটেন জিতেছিল মাত্র একটা সোনা। পদক তালিকায় তাদের স্থান ছিল ৩৬ নম্বরে। কাজাখস্তান, আলজিরিয়া, আয়ার্ল্যান্ডও সে বার পদক জেতার দৌড়ে শেষ করেছিল ব্রিটেনের আগে।

জাম্পকাট। ২০১৬। রিও অলিম্পিক্স। ২৭টা সোনা নিয়ে পদক তালিকায় অ্যান্ডি মারের দেশ দু’নম্বরে। তাদের থেকে এগিয়ে শেষ করেছে একটাই দেশ। যুক্তরাষ্ট্র। খেলার দুনিয়ার ‘সুপার পাওয়ার’ চিনকে ছাপিয়ে যাওয়াও তো রয়েছে। ২৬টা সোনা নিয়ে রিও অলিম্পিক্সে চিন শেষ করেছে তিন নম্বরে।

Advertisement

যে সাফল্যের গর্বে বুক ফুলিয়ে মঙ্গলবার রিও থেকে হিথরো বিমানবন্দরে সোনার প্লেনে ফিরলেন ব্রিটিশ অ্যাথলিটরা। দেশের অ্যাথলিটদের রিওর সাফল্য আরও রঙিন করতে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজকে নতুন করে রং করতে হয়েছে বিমানের। যার সামনের দিকটা করা হয়েছে সোনার রং। অলিম্পিক্সে তাদের এ বারের সোনার সাফল্য তুলে ধরতে। মোট ৩২০ জন অ্যাথলিট আর সাপোর্ট স্টাফের এগারো ঘণ্টার সফরে আমোদ-প্রমোদের যাতে কোনও খামতি না থাকে সেটাও দেখা হয়েছে। নিশ্চিত করা হয়েছে অতিরিক্ত শ্যাম্পেন যাতে মজুত থাকে বিমানে। তার সঙ্গে দেশে ফিরে ম্যাঞ্চেস্টারে ভিকট্রি প্যারেড। লন্ডনে আর এক প্রস্ত সেলিব্রেশন তো আছেই।

কুড়ি বছরে ব্রিটিশরা অলিম্পিক্সে ঠিক কতটা বড় লাফ দিয়েছে, সেটা বোঝার জন্য আর একটা তথ্য দেওয়া যাক। এ বার রিও অলিম্পিক্সে ব্রিটেনের সোনা ২৭টা। ১৯৭৬ থেকে ১৯৯৬— এই সময়ে হওয়া ছ’টা অলিম্পিক্সে পাওয়া সোনার থেকেও বেশি।

এ সব তো নয় বোঝা গেল। কিন্তু দু’দশকে কী ভাবে খেলার দুনিয়ার ‘সুপার পাওয়ার’ হয়ে উঠল ব্রিটেন? সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে উঠে আসছে একটাই জিনিস—পরিকল্পনামাফিক অর্থ খরচ।

১৯৯৬ অলিম্পিক্সের পর সিদ্ধান্ত হয় খেলাধুলোর পরিকাঠামো ঢেলে সাজাতে ন্যাশনাল লটারি থেকে পাওয়া পুরো অর্থ ব্যবহার করা হবে। অলিম্পিক্সে ব্রিটেন যা অর্থ খরচ করে তার চার ভাগের তিন ভাগই আসে ন্যাশনাল লটারি থেকে। এই ন্যাশনাল লটারি স্কিম চালু হয়েছিল ১৯৯৪ সালে। দু’বছরের মধ্যেই সেই স্কিমকে অপারেশন অলিম্পিক্সে বদলে দেয় ব্রিটেন।

তার পরিমাণ ঠিক কতটা? অভিনব বিন্দ্রা রিও অলিম্পিক্স চলাকালীনই একটা টুইট করে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘ব্রিটেন প্রত্যেকটা পদকের পিছনে খরচ করেছে প্রায় ৫.৫ মিলিয়ন পাউন্ড। এ রকম বিনিয়োগই চাই। যতক্ষণ সেটা না হচ্ছে আমাদের দেশের অলিম্পিক্সে বেশি কিছু আশা না করাই ভাল।’ সোনাজয়ী ভারতীয় শ্যুটারও হয়তো ইঙ্গিত দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন ব্রিটেনের সাফল্যের পিছনে আর্থিক জোর কত বড় ভূমিকা নিয়েছে। কিন্তু মোট কত অর্থ খরচ করেছে ব্রিটেন রিও অলিম্পিক্সের প্রস্তুতিতে? ব্রিটিশ মিডিয়া বলছে, পরিমাণটা হল ৪৬০ মিলিয়ন ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৩০৮৩ কোটি।

তবে লক্ষ্য ছিল শুধু এলিট স্পোর্টস। যেগুলো থেকে অলিম্পিক্সে পদক আসার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। যে খেলাগুলোয় পদক আসার সম্ভাবনা নেই তাতে খরচ করা হত না। যেমন বাস্কেটবল আর ভলিবল। আন্তর্জাতিক স্তরে বাস্কেটবলে ব্রিটেনের দাপট দেখানোর সম্ভাবনা নেই বলে ন্যাশনাল লটারির টাকা এখানে খরচ করা হয়নি। বেছে বেছে মোট অর্থ খরচ করা হয়েছে ২০টা খেলায়। অনেকে বলতে পারেন অন্য খেলাগুলোর জন্য এটা অন্যায়। কিন্তু প্রফেসর স্টিফ হাকি কিন্তু বলে দিচ্ছেন, ‘‘অন্য ভাবে দেখলে এতে কিন্তু করদাতাদের অর্থ যাতে ঠিক জায়গায় খরচ হয়, সেটাই দেখা হয়েছে। আমাদের আগে এটা দেখতে হয়েছে যে খেলাটার পিছনে আমি খরচ করছি তাতে পদক আসার সম্ভাবনা নিশ্চিত কিনা।’’

শুধু এলিট খেলাগুলোতে খরচ করাই নয় বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে খেলোয়াড়দের দিকেও। যাঁরা পদক আনতে পারেন। ব্রিটিশ মিডিয়া বলছে, মানসিক ভাবে অ্যাথলিটদের চাঙ্গা রাখতে বছরে কোটি কোটি টাকা খরচ হয়েছে তাঁদের পিছনে। আরও ভাল খাওয়া, আরও ভাল থাকা। চাপ না নিয়ে যাতে ফুরফুরে মেজাজে থাকতে পারেন তাঁরা। এ ছাড়া প্রত্যেক এলিট অ্যাথলিটের কোচিং, ট্রেনিংয়ের জন্য আলাদা অর্থ খরচ করা তো আছেই।

সাইক্লিং, রোয়িংয়ের মতো যে খেলাগুলো থেকে সবচেয়ে বেশি পদক আসার সম্ভাবনা, সেখানে অর্থ ঢালায় কোনও আপোস করা হয়নি। বরং ধরে ধরে প্রত্যেক অ্যাথলিটের উপর আলদা নজর দেওয়া হয়েছে। খুব ছোট ছোট জায়গাতেও উন্নতির টার্গেট নেওয়া হয়েছে। যাতে সামগ্রিক ভাবে গোটা খেলাটায় আরও সাফল্য পাওয়া যায়। ফলও এসেছে হাতে নাতে। ১৯৯৬ অলিম্পিক্সে সাইক্লিংয়ে যেখানে দুটো ব্রোঞ্জ এসেছিল ২০১৬ তে সেখানে এই একটা ডিসিপ্লিন থেকেই ব্রিটেন পেয়েছে ছ’টা সোনা, চারটে রুপো আর দুটো ব্রোঞ্জ।

আরও পড়ুন:
রিও অলিম্পিক্সে ‘ফ্লপ’ শো, ভয়ে ভয়ে দেশে ফিরছেন চিনা অ্যাথলিটরা

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন