ন্যু ক্যাম্পে উল্লাসের রাত।
ঐতিহাসিক কামব্যাক? না কি শুধুই এক অপূর্ব রূপকথা? ঠিক কী নামে ডাকা যাবে বার্সেলোনার এই কীর্তিকে? ৪ গোলে পিছিয়ে থাকা, কোচের সঙ্গে বার্সা মহাতারকার দ্বন্দ্ব, সব কিছু ছাপিয়ে উঠে বুধবারের রাত রঙিন হয়ে থাকল গোলের আতসবাজীতে। প্যারিস সঁ জঁ-র বিরুদ্ধে ৪ গোলের বিশাল ব্যবধান মুছে ৬ গোল দিয়ে এ দিন ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম স্মরণীয় জয় পেল বার্সেলোনা। টানা ১০ বার কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়ার রেকর্ড যে মহা ম্যাচের কাছে নিতান্তই একটা কাগুজে হিসাব।
কাভানিদের ঘরের মাঠে নাকানিচোবানি খাওয়ার পর বেশির ভাগ ফুটবল বিশেষজ্ঞই ধরে নিয়েছিলেন, এ বারে আর শেষ আটে পৌঁছনো হল না মেসিদের। তবু প্যারিসে লজ্জার হারের পর লা লিগায় ফর্মে ফেরায় মেসিদের নিয়ে আশার সামান্য আলো দেখতে শুরু করেছিলেন সমর্থকরা। বলা হচ্ছিল, এই অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারে একমাত্র বার্সাই। বুধবারের রাত যেন ছিল জবাব দেওয়ার। যেন প্রমাণ করার যে, আমরা বার্সেলোনা। যে কোনও পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়াতে আমরাই পারি।
বলে তৃপ্তির চুম্বন মেসির।
খেলা ঠিকমতো শুরু হওয়ার আগেই গোল করা শুরু করে বার্সা। তিন মিনিটে প্রথম গোল করেন সুয়ারেজ। এমএসএনের ত্রিফলায় বিদ্ধস্ত থিয়াগো সিলভা, কুরজোয়ারা একের পর এক ভুল করহতে শুরু করেন। চাপ রাখতে না পেরে ৪০ মিনিটে নিজের গোলেই বল ঢুকিয়ে দেন কুরজোয়া। ২ গোলে এগিয়ে বিরতির পর নেমে আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে বার্সা। ৫০ মিনিটে পেনাল্টি থেকে ৩-০ করেন মেসি। লিগের ১১তম গোল করলেন আর্জেন্তিনীয় মহাতারকা। এর কিছু ক্ষণ পরেই ধাক্কা খায় এনরিকের দল। খেলার বিপরীতে অসাধারণ গোল করেন প্রথম পর্বের নায়ক এডিনসন কাভানি। অ্যাওয়ে গোল করে ফেলায় তখন ছ’গোল করতেই হত বার্সাকে। ৮৮ মিনিট পর্যন্ত স্কোর ছিল ৩-১। সবাই যখন ধরেই নিয়েছে, ম্যাচ হাত থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে, তখন ঝলসে ওঠে নেইমার। তিন মিনিটের ব্যবধানে দু’গোল করে ৫-১ করেন ব্রাজিলের ওয়ান্ডার কিড। এক্সট্রা টাইমের ৪ মিনিট মেসিদের আটকে রাখলেই কাতালান বেঞ্চে নামত অন্ধকার। কিন্তু তা হতে দিলেন না রবের্তো। ৯৫ মিনিটে গোল করে ৬-১ করেন বার্সার সুপারসাব।
আরও পড়ুন: ১০-২ গোলে আর্সেনালকে হারিয়ে কোয়ার্টারে বায়ার্ন
প্রথম পর্বের দাপুটে সঁ জঁ-কে এ দিন যেন খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছিল না। এর অন্যতম প্রধান কারণ বোধহয় দি’মারিয়ার চোট। যার জেরে প্রথম ১১-এ দলের সেরা অস্ত্রকে রিজার্ভ বেঞ্চে রেখেই শুরু করেছিলেন সঁ জঁ কোচ। নিরুপায় কোচ ৫৫ মিনিটে তাঁকে নামালেও মারিয়ার চেনা ঝাঁঝ ছিল অদৃশ্য। ম্যাচ হেরে সঁ জঁ কোচের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া, “যত দ্রুত সম্ভব ম্যাচটা ভুলে যেতে চাইব।” আর ‘অসম্ভব’ ম্যাচ জিতে বার্সা কী বলছে? নেইমার থেকে শুরু করে সুয়ারেজ এমনকী মেসি— নিজেদের পারফরম্যান্সে উত্ফুল্ল বার্সা মেতেছে উত্সবে।
ছবি: রয়টার্স।