Wrestlers' Protest

জোড়া বৈঠক! কেন্দ্রের পদক্ষেপে কী ভাবে গলল বরফ? বিক্ষোভ কেন থামালেন কুস্তিগিরেরা?

ধর্না শুরুর হওয়ার ৪৫ দিন পরে নিজেদের আন্দোলন স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রতিবাদী কুস্তিগিরেরা। কেন্দ্রের কোন পদক্ষেপে বরফ গলল? নেপথ্যে কী কারণ?

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০২৩ ১৭:৫৩
Share:

বজরং পুনিয়া ও সাক্ষী মালিক। —ফাইল চিত্র

আন্দোলন শুরু করার ৪৫ দিন পরে তা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রতিবাদী কুস্তিগিরেরা। কেন্দ্রের আশ্বাসে ভরসা দেখিয়েছেন তাঁরা। সেই সঙ্গে হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন, ১৫ জুনের মধ্যে ভারতীয় কুস্তি সংস্থার সভাপতি ব্রিজভূষণ শরণ সিংহের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ না হলে নতুন করে আন্দোলন শুরু করবেন তাঁরা। কিন্তু কী ভাবে বরফ গলল? কেন্দ্রের কোন পদক্ষেপে আন্দোলন স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বজরং পুনিয়া, সাক্ষী মালিক, বিনেশ ফোগটেরা?

Advertisement

ঘটনার সূত্রপাত গত শনিবার। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে তাঁর বাড়িতে বৈঠক করেন কুস্তিগিরেরা। সেখানে কোনও সমাধান সূত্র বার না হলেও সেই বৈঠকই ভিত গড়ে দিয়েছিল। সেখানে নিজেদের দাবি জানিয়েছিলেন কুস্তিগিরেরা। সেই দাবি নিয়েই পরে কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরের বাড়িতে বৈঠক করেন কুস্তিগিরেরা। মঙ্গলবার রাত ১২.৪৭ মিনিটে টুইট করেন অনুরাগ। সেখানেই প্রথম বোঝা যায়, কুস্তি বিতর্কে সুর নরম করতে চাইছে সরকার। সাক্ষী, বজরংদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চেয়ে ক্রীড়ামন্ত্রী লেখেন, “কুস্তিগিরদের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে ইচ্ছুক সরকার। সে কারণে আলোচনার জন্যে কুস্তিগিরদের কাছে আবার আমন্ত্রণ পাঠিয়েছি।”

শুধু অনুরাগ নন, আলোচনার অনুরোধ করেন শাহও। তিনি বজরংকে ফোন করে দ্বিতীয় বার বৈঠকে বসার অনুরোধ করেন। তার পরেই অনুরাগের বাড়িতে যান কুস্তিগিরেরা। সেখানে নিজেদের পাঁচটি দাবি পেশ করেন বজরংরা। সেগুলি ছিল— ১) জাতীয় কুস্তি সংস্থায় অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হবে। ২) সংস্থার মাথায় মহিলা প্রধান নিয়োগ করতে হবে। ৩) ব্রিজভূষণ এবং পরিবারের কেউ যেন জাতীয় কুস্তি সংস্থার সঙ্গে জড়িত থাকতে না পারেন। ৪) নতুন সংসদ ভবনের সামনে প্রতিবাদ করতে যাওয়ায় কুস্তিগিরদের বিরুদ্ধে থানায় যে অভিযোগ জানানো হয়েছে তা খারিজ করতে হবে। ৫) ব্রিজভূষণকে গ্রেফতার করতে হবে।

Advertisement

অনুরাগের সঙ্গে পাঁচ ঘণ্টার বৈঠকের পরে কুস্তিগিরদের কয়েকটি দাবি মেনে নেয় কেন্দ্র। ভারতীয় কুস্তি সংস্থায় একটি অভ্যন্তরীণ কমিটি তৈরি করার কথা জানিয়েছেন অনুরাগ। সেই কমিটির মাথায় থাকবেন এক জন মহিলা। এই কমিটিতে এক জন প্রতিবাদী কুস্তিগিরকে থাকার অনুরোধও করেছিলেন তিনি। কিন্তু সেই অনুরোধ মানেননি কুস্তিগিরেরা। বজরংদের দাবি মেনে তাঁদের বিরুদ্ধে করা সব এফআইআর তুলে নেওয়া হয়েছে বলেও জানান ক্রীড়ামন্ত্রী। জাতীয় কুস্তি সংস্থার নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়ার এবং কুস্তির সঙ্গে ব্রিজভূষণের পরিবারের কেউ যুক্ত থাকতে পারবেন না বলেও জানিয়েছেন অনুরাগ।

কিন্তু কুস্তিগিরদের যে প্রধান দাবি, অর্থাৎ, ব্রিজভূষণকে গ্রেফতার করার দাবি এখনও মানেনি কেন্দ্র। কুস্তি কর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে ১৫ জুনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অনুরাগ। কুস্তিগিরদের বেশির ভাগ দাবিই মেনে নিয়েছে কেন্দ্র। সেই কারণেই নিজেদের আন্দোলন থেকে সরে এসেছেন বজরংরা। চলতি মাসের শেষেই এশিয়ান গেমসের ট্রায়াল হওয়ার কথা। আপাতত সেখানে অংশ নেওয়ার কথা ভাবছেন বজরংরা। তার জন্য প্রস্তুতিও শুরু করতে চাইছেন তাঁরা।

২৩ এপ্রিল থেকে ধর্না শুরু করার পরে কুস্তিগিরদের প্রধান দাবি ছিল কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখেছিলেন তাঁরা। এমনকি, বিজেপির মহিলা সাংসদদেরও চিঠি লিখেছিলেন। কিন্তু কেন্দ্র চুপ ছিল। উল্টে সংসদ ভবন অভিযানের সময় হেনস্থা করা হয়েছিল মহিলা কুস্তিগিরদের। সেই রাগে হরিদ্বারে গঙ্গায় পদক ভাসিয়ে দিতে গিয়েছিলেন সাক্ষী, বিনেশেরা। তখন কৃষক নেতাদের কথায় ফিরে এলেও আন্দোলন চলছিল। কেন্দ্রকে পাঁচ দিনের সময়সীমা দিয়েছিলেন তাঁরা। সেই সময়ের মধ্যে অবশেষে পদক্ষেপ করেছে কেন্দ্র। গত পাঁচ দিনে জোড়া বৈঠক হয়েছে। কেন্দ্রের এই পদক্ষেপে হয়তো দাবি পূরণের আশা দেখছেন বজরংরা। সেই কারণেই নিজেদের আন্দোলন স্থগিত করেছেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন