অস্ট্রেলিয়ার পার্কে ভারতের জয়ধ্বনি

বিরাট-মন্ত্র, অস্ট্রেলিয়ায় সব সময়েই সেরাটা চাই

বক্সিং ডে টেস্টকে উপলক্ষ্য করে এ বারে বিশেষ উৎসবের আয়োজন হয়েছে মেলবোর্ন ক্রিকেট মাঠে। সংলগ্ন ইয়ারা পার্কে তিন দিন ধরে চলবে ইন্ডিয়ান সামার ফেস্টিভ্যাল।

Advertisement

সুমিত ঘোষ 

মেলবোর্ন শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৪:০৬
Share:

অভিনব: বর্ডার-গাওস্কর ট্রফির সঙ্গে বিরাট, পেন এবং খুদে আর্চি। টুইটার

পার্‌থের উত্তেজিত বাক্য বিনিময়ের পরে এই প্রথম তাঁরা মুখোমুখি। ইন্ডিয়ান সামার ফেস্টিভ্যালের মঞ্চে কিন্তু বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ আবহেই পাওয়া গেল বিরাট কোহালি এবং টিম পেনকে।

Advertisement

বক্সিং ডে টেস্টকে উপলক্ষ্য করে এ বারে বিশেষ উৎসবের আয়োজন হয়েছে মেলবোর্ন ক্রিকেট মাঠে। সংলগ্ন ইয়ারা পার্কে তিন দিন ধরে চলবে ইন্ডিয়ান সামার ফেস্টিভ্যাল। রবিবার যার উদ্বোধন হল দু’দলের ক্রিকেটারদের উপস্থিতি দিয়ে। পার্কের চারদিকে ভারতীয় কিংবদন্তিদের মুরাল। মহাত্মা গাঁধী থেকে শুরু করে অমিতাভ বচ্চন, সচিন তেন্ডুলকর থেকে দিলীপ কুমার, মধুবালা, নার্গিস, সকলে আছেন। সচিনের মুম্বইয়ের আজাদ ময়দান রয়েছে। বেঙ্গালুরু শহরকে তুলে ধরা হয়েছে পার্কের একটি অংশে। চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে নানা ভারতীয় ফুডস্টল। ফুচকা পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে। রাইস ও বাটার চিকেনের প্যাকেজ সব চেয়ে জনপ্রিয় দেখা গেল। তার পরেই দুই ও তিন নম্বরে পাও ভাজি ও ফুচকা।

মাইকে জোরে বাজছে পঞ্জাবী সুরের গান। তার মধ্যেই বার বার সঞ্চালক ঘোষণা করতে থাকলেন, আর কিছুক্ষণের মধ্যেই দু’দলের ক্রিকেটারেরা এসে পড়বেন। মুহূর্তে মঞ্চের সামনে ভিড় জমে গেল। প্রথমে ভারতীয় ক্রিকেটারেরা ঢুকলেন। প্রত্যেকের নাম ধরে ডাকা হল। অন্যদের নাম ডাকা হচ্ছে, মাঝেমধ্যেই ভিড়ের মধ্যে থেকে স্লোগান উঠছে— ভি কে, ভি কে! শেষে এলেন অধিনায়ক বিরাট কোহালি। গর্জন শুনেই বোঝা গেল, তাঁর অপেক্ষাতেই ছিল জনতা।

Advertisement

সঞ্চালক এর পর কোহালি এবং পেনকে এক সঙ্গে দাঁড় করিয়ে দিলেন। কোহালি মঞ্চে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘‘দু’টো দলই সিরিজে খুব ভাল ক্রিকেট খেলেছে। তবে মেলবোর্ন এমন একটা জায়গা যেখানে আসতে আমরা খুব পছন্দ করি। এখানকার মানুষ এই ক্রিকেট উৎসবকে ভালবাসে। বক্সিং ডে টেস্ট দারুণ এক অভিজ্ঞতা। আমরা সকলে আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে রয়েছি।’’ ভিড়ের মধ্যে থেকে ফের গর্জন। সেটা আরও বেড়ে গেল, কারণ কোহালি এর পর বললেন, ‘‘ভারতীয় দল যেখানেই যায়, প্রচুর সমর্থন পায়। মেলবোর্নেও আমরা সেই সমর্থন আশা করছি।’’

সঞ্চালক পেনকে জিজ্ঞেস করলেন, তাঁর অধিনায়কত্বে প্রথম টেস্ট জয়ের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল? অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক বললেন, ‘‘আনন্দের চেয়ে যেন বেশি স্বস্তি হল। কঠিন ন’মাস আমরা কাটিয়েছি। ক্রিকেটার এবং কোচিং স্টাফেরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে গিয়েছে। সেই পরিশ্রমের পুরস্কার আমরা পেলাম।’’ বিরাট তো ভারতীয় দর্শকদের দিক থেকে সমর্থন চেয়েই নিয়েছেন। আপনি কী বলবেন? মঞ্চের সামনে তৈরি হওয়া ভিড়ের দিকে তাকিয়ে পেন বললেন, ‘‘বিরাট ঠিকই বলেছে। ভারতের সঙ্গে খেলা মানে প্রচুর সমর্থন ওদের দিকে থাকে। নিজেদের দেশে যে কোনও জায়গাতে গিয়েও আমরা সেটা দেখেছি। বিশেষ করে সিডনিতে। ওখানে টি-টোয়েন্টি ম্যাচে বুঝেছি, ভারতের দিকে কতটা সমর্থন থাকতে পারে। বক্সিং ডে টেস্টে নিশ্চয়ই মাঠ ভর্তি থাকবে। আমার কাছে অধিনায়ক হিসেবে প্রত্যেকটা টেস্টই খুব স্পেশ্যাল।’’

দু’দেশের মধ্যে টেস্ট সিরিজের নামকরণ হয়েছে দুই কিংবদন্তির নামে। বর্ডার-গাওস্কর ট্রফি নিয়ে জিজ্ঞেস করা হল কোহালিকে। ভারত অধিনায়ক বললেন, ‘‘আমার মনে আমাদের সঙ্গে পাকিস্তান এবং অ্যাশেজ বাদ দিলে ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া আর একটা বড় সিরিজ। সারা পৃথিবীতে প্রচুর লোক এই সিরিজটা দেখে। দু’টো দেশের কাছেই এই ট্রফির বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে।’’ দ্রুত যোগ করলেন, ‘‘সর্বকালের অন্যতম সেরা দুই ক্রিকেটারের নামে এই সিরিজ। সেখানে অংশ নিতে পারাটাই আমাদের কাছে খুব গর্বের ব্যাপার।’’

পার্‌থে হারের পরে খুব চিন্তিত হওয়ার মতো কিছু দেখেননি বলেও জানালেন বিরাট। বললেন, ‘‘মেলবোর্নে ১-১ অবস্থায় আসতে পেরে আমরা খুশিই। অস্ট্রেলিয়ায় খেলতে এসে কেউ যদি এই স্কোরলাইন পায়, সে খুশি মনেই তা গ্রহণ করবে। আমরা আশাই করেছিলাম, অস্ট্রেলিয়া প্রত্যাঘাত করবে।’’ আবারও মনে করিয়ে দিলেন, ‘‘পার্‌থের পিচে ওরা আমাদের চেয়ে ভাল ক্রিকেট খেলেছে। আমরা যেমন অ্যাডিলেডে জেতার মতো খেলেছি, তেমনই অস্ট্রেলিয়া খেলেছে পার্‌থে।’’ অস্ট্রেলিয়াতে এসে প্রথম দু’টি টেস্ট একটা জিনিস পরিষ্কার করে দিয়েছে ভারতীয় দলের সামনে। কোহালির কথায়, তা হচ্ছে, ‘‘অস্ট্রেলিয়াকে অস্ট্রেলিয়াতে হারাতে হলে সব সময় নিজেদের সেরা ফর্মে থাকতে হবে।’’ তিনি শেষ করতে না করতেই ভিড়ের মধ্যে থেকে স্লোগান উঠল, ‘‘জিতেগা ভাই জিতেগা, ইন্ডিয়া জিতেগা!’’ কে বলবে উৎসব হচ্ছে মুম্বইয়ে নয়, মেলবোর্নে! অস্ট্রেলিয়ার পার্কে উঠছে ভারতের জয়ধ্বনি!

পার্‌থে দুই অধিনায়কের মধ্যে সম্পর্ক অবনতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। মেলবোর্নের ক্রিকেট মঞ্চে বক্সিং ডে থেকে কী হবে, সময় বলবে। এ দিন কিন্তু উৎসবের মঞ্চে সৌজন্যের অভাব হয়নি। পেন সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন সাত বছরের আর্চিকে। এত ছোট বয়সেই হৃদযন্ত্রের ব্যধিতে আক্রান্ত আর্চি। তিন বার গুরুতর অস্ত্রোপচার হয়ে গিয়েছে। অস্ট্রেলিয়া দল তাকে বক্সিং ডে টেস্টের জন্য কো-ক্যাপ্টেন করেছে। এ দিন মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়ার নেটেও লেগস্পিন বল করল আর্চি। তার ব্যক্তিগত কোচের ভূমিকায় দেখা গেল নেথান লায়নকে। অভিনব এই উদ্যোগে কোহালিও মিশে গেলেন। মঞ্চে দাঁড়িয়ে আর্চির মাথায় হাত বুলিয়ে তাঁর সঙ্গে ছবি তুললেন। পেনের সঙ্গেও পার্‌থের টেস্টের পরে শীতল নয়, বেশ উষ্ণ করমর্দন করতে দেখা গেল ভারত অধিনায়ককে।

ও দিকে আর অশ্বিন এবং নেথান লায়নকেও একসঙ্গে ডাকলেন সঞ্চালক। অশ্বিন প্রথমেই বললেন, আশা করব চোট সারিয়ে যেন মেলবোর্নে খেলতে পারি। ‘‘বক্সিং ডে টেস্ট ম্যাচ খুব উত্তেজক একটা ব্যাপার। গত বার আমরা এখানে খেলেছিলাম, ম্যাচ ড্র হয়েছিল। আশা করব এ বারে ফয়সালা হবে এবং আমাদের জন্য ভাল কিছু অপেক্ষা করে থাকবে।’’ এই সিরিজে এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী নেথান লায়ন। কিন্তু নিজেকে নয়, তিনি কৃতিত্ব দিলেন পুরো দলকে। ‘‘বোলাররা সবাই দারুণ করেছে। ব্যাটসম্যানরা রান করেছে। সব মিলিয়ে খুব ভাল টিম পারফরম্যান্স। সেই জন্যই আমরা সিরিজে সমতা ফেরাতে পেরেছি।’’

সিরিজ ১-১। ভারতীয় শিবিরে কী ধরনের কথাবার্তা চলছে? সঞ্চালকের প্রশ্নে অশ্বিনের জবাব, ‘‘খুব বেশি কথাবার্তা হয়নি। আমরা জানি, পার্‌থে হারলেও সিরিজে দারুণ ভাবে ফিরে আসার ক্ষমতা আমাদের আছে। অ্যাডিলেডের মতো নিয়ন্ত্রণ দেখাতে হবে আমাদের।’’

মেলবোর্নে মঞ্চ তৈরি। উৎসবের, ক্রিকেটের, বিনোদনের। সত্যিই ‘ইন্ডিয়ান সামার’ হবে কি না, তা এখন কোহালিদের হাতে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন