লক্ষ্য: অতীতের স্মৃতি ভুলে রাশিয়া বিশ্বকাপকে স্মরণীয় করে রাখতে চান লিওনেল মেসি। ফাইল চিত্র
বিশ্বকাপে তিনি যতবার নেমেছেন, যন্ত্রণাবিদ্ধ হয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে। তিন বছর আগে ট্রফির খুব কাছে এসেও হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হয়েছিল। সেই যন্ত্রণা এখনও ভুলতে পারেননি লিওনেল মেসি। পাশাপাশি আরও একটা স্বপ্ন দেখে চলেছেন তিনি। বিশ্বকাপ হাতে ধরার স্বপ্ন। আর তাই তো বলে ফেলেন, ‘‘আশা করব, ফুটবল আমার ঋণ শোধ করবে।’’
২০১৪ সালে ব্রাজিল বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে এক মুহূর্তের ভুলে জার্মানির কাছে হারতে হয়েছিল আর্জেন্তিনাকে। যে হার এখনও ভুলতে পারেননি মেসি। বুধবার ফিফার ওয়েবসাইটকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আর্জেন্তিনার মহাতারকা বলেছেন, ‘‘ব্রাজিল বিশ্বকাপের ওই হারের যন্ত্রণা আমি এখনও ভুলতে পারিনি। ওই ক্ষত এখনও দগদগে আছে। জানি না, কোনও দিন যাবেও কি না। ওই যন্ত্রণাটা নিয়েই হয়তো আমাদের বেঁচে থাকতে হবে।’’
তিনটে বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে মেসি বলেছেন, ‘‘বিশ্বকাপ আমার কাছে একই সঙ্গে মধুর এবং যন্ত্রণার। বিশ্বকাপে খেলার স্মৃতির কোনও তুলনা হয় না। কিন্তু যে ভাবে টুর্নামেন্টগুলো আমাদের জন্য শেষ হয়েছে, সেটা সব সময় কষ্টকর।’’
রাশিয়া বিশ্বকাপে শেষ মুহূর্তে আর্জেন্তিনা যোগ্যতা অর্জন করার পরে হর্জে সাম্পাওলি বলেছিলেন, ফুটবলের এ বার কিছু ফিরিয়ে দেওয়ার সময় হয়েছে মেসিকে। এ বার মেসির একটা বিশ্বকাপ পাওয়া উচিত। আর্জেন্তিনা অধিনায়কের কাছে জানতে চাওয়া হয়, আপনি কি সাম্পাওলির ওই কথাগুলো শুনেছিলেন? মেসির জবাব, ‘‘হ্যাঁ আমি শুনেছিলাম। সাম্পাওলি আমাকেও ওই একই কথা বলেছিলেন। আশা করব, ফুটবল এ বার আমার ঋণ শোধ করবে।’’
এ বার একটা সময় এসেছিল, যখন মনে হয়েছিল রাশিয়ার ছাড়পত্র আর বুঝি পাওয়া হবে না আর্জেন্তিনার। কিন্তু ইকুয়েডরের বিরুদ্ধে মরণবাঁচন ম্যাচে মেসির হ্যাটট্রিকে সেই দুঃস্বপ্ন দূর হয়েছে। সেই ম্যাচকে আপনার ফুটবল জীবনে কোথায় রাখবেন? মেসির জবাব, ‘‘ওই ম্যাচটা আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ রাশিয়া বিশ্বকাপে খেলতে না পারলে সেটা আমাদের দলের কাছে বিশাল ধাক্কা হতো। ব্যক্তিগত ভাবেও আমার কাছে বড় ধাক্কা হতো। ব্যাপারটা কী ভাবে নিতাম, আমি জানি না। একই কথা খাটে আর্জেন্তিনার মানুষের জন্যও। রাশিয়া বিশ্বকাপে খেলতে না পারার চেয়ে আর বড় লজ্জা কী হতে পারে?’’
আর ক’মাস পরেই বিশ্বকাপ। জার্মানি, ব্রাজিল এই টিমগুলোর পাশে কোথায় রাখবেন আর্জেন্তিনাকে? প্রশ্নের জবাব দেওয়ার সময় মেসিকে আত্মবিশ্বাসী শোনায়, ‘‘আমাদের টিম কিন্তু উন্নতি করে চলেছে। আমাদের এমন একটা পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়েছিল, যা আর্জেন্তিনার প্রাপ্য ছিল না। ভেনেজুয়েলা, পেরুর মতো দলকে আমাদের সহজেই হারানো উচিত ছিল। এ বার দেখবেন, আমাদের টিমের চেহারাটাই বদলে যাবে। এই দলটা এখন সব রকম ভয়, সব রকম টেনশন ঝেড়ে ফেলে মাঠে নামবে। সেই আর্জেন্তিনা কিন্তু অন্য রকম হবে।’’
আপনার বয়স এখন তিরিশ। কী রকম অনুভূতি হচ্ছে? যে রকম জায়গায় থাকবেন বলে মনে করেছিলেন, সেখানে কি আছেন? ‘‘সত্যি কথা বলতে কী, আমি কখনও এই নিয়ে ভাবিনি। এখন আমার বয়স তিরিশ হয়েছে। আমি বলব, ফুটবল জীবন এবং ব্যক্তিগত জীবন— দু’টো নিয়েই আমি খুশি। শারীরিক ভাবেও ভাল জায়গায় আছি। সব মিলিয়ে বলতে পারেন, নিজেকে নিয়ে আমি খুশি,’’ জবাব এল এম টেনের।
সময় অনেক কিছু বদলে দেয়। আপনার ফুটবলও কি বদলে গিয়েছে? মেসি বলে দিচ্ছেন, ‘‘অবশ্যই বদলেছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যেটা হওয়া স্বাভাবিক। নিজের খেলায় উন্নতিও হয়। আপনি অনেক কিছু শিখতে পারেন। আমার বয়স যত বেড়েছে, খেলার উন্নতিও হয়েছে।’’
যে উন্নতির সুফল পেয়েছে আর্জেন্তিনার জাতীয় দল। ফের উঠে আসে ইকুয়েডরের বিরুদ্ধে সেই ম্যাচের কথা। জানতে চাওয়া হয়, মরণবাঁচন ওই ম্যাচে কী ভেবে মাঠে নেমেছিলেন? সেরাটা দিয়ে টিমকে জেতাতেই হবে? মেসি শুধু বলেন, ‘‘সে রকম কিছু ভেবে মাঠে নামিনি। শুধু এটুকু বলব, মাঠে সে দিন যা ঘটেছিল, সেটা আমার ফুটবল জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হয়ে থাকবে।’’ আপনার কাছে আর একটা প্রশ্নই আছে। ফিফার প্রশ্নকর্তা বলে চলেন, এই বাক্যটা শেষ করুন। ২০১৮ সালে লিওনেল মেসি হবে...
(একটু ভেবে) ‘‘আমি তৃতীয়বারের জন্য বাবা হব!’’ বলে দিলেন মেসি। অল্প একটু হেসে।