আই লিগ

দ্বিতীয়ার্ধের ঝড়ে সমতা ফিরিয়ে বাঁচল ইস্টবেঙ্গল

ম্যাচ শেষে আলেসান্দ্রো ড্রেসিংরুমে ফিরলেন মাথা নিচু করে। উচ্ছ্বাসে ভাসলেন কাশ্মীর কোচ ডেভিড রবার্টসন। 

Advertisement

রতন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:১৭
Share:

ত্রাতা: ৭৬ মিনিট পর্যন্ত পিছিয়ে থাকার পরে দলকে সমতায় ফিরিয়ে উচ্ছ্বাস মার্কোসের (বাঁ দিকে)। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

ইস্টবেঙ্গল ১ • রিয়াল কাশ্মীর ১

Advertisement

‘মিশন কাশ্মীর’ সফল হল না আলেসান্দ্রো মেনেন্দেসের। চার দিন আগে পাহাড়ে হোঁচট খেয়ে ফিরেছে পড়শি ক্লাব মোহনবাগান। একই দশা হল ইস্টবেঙ্গলেরও।

লাল-হলুদ শিবিরের স্পেনীয় কোচ মাঠে ঢুকলেন গ্যালারির দিকে হাত নাড়তে নাড়তে। কল্যাণী স্টেডিয়ামের দশ হাজারের গ্যালারি পাল্টা অভিবাদন জানাল তাঁকে। ম্যাচ শেষে আলেসান্দ্রো ড্রেসিংরুমে ফিরলেন মাথা নিচু করে। উচ্ছ্বাসে ভাসলেন কাশ্মীর কোচ ডেভিড রবার্টসন।

Advertisement

ষোলো বছর আই লিগ আসেনি লাল-হলুদ তাঁবুতে। এ বার আসবে কি না, সময় বলবে। তবে বুধবার প্রথমার্ধে খাইমে কোলাদো সান্তোসেরা জঘন্য খেললেও দ্বিতীয়ার্ধে ঝলমল করল ইস্টবেঙ্গল। ম্যাচের পরে আলেসান্দ্রো বললেন, ‘‘ছেলেদের বিরতিতে বলেছিলাম পিছিয়ে আছি মনে না রেখে ০-০ চলছে ভেবে ঝাঁপাও। আমরা সব করেছি, শুধু গোল করতে পারিনি। ওরা একটা সুযোগ পেয়ে গোল করে গিয়েছে।’’ লাল-হলুদ কোচ এ ভাবে নিজে সান্ত্বনা খোঁজার চেষ্টা করলেন। আর সম্ভবত সে জন্যই নিখুঁত অঙ্কে পয়েন্ট কেড়ে উচ্ছ্বসিত কাশ্মীর কোচের মন্তব্য, ‘‘গত বারও এখানে পয়েন্ট কেড়েছিলাম। আমাদের লক্ষ্য ছিল না হেরে ড্রেসিংরুমে ফেরা।’’

সাত বছর পরে কল্যাণী স্টেডিয়াম আই লিগের ম্যাচ হল। বহু দর্শক দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়েও টিকিট পাননি। উড়ছিল প্রচুর লাল-হলুদ পতাকা। চলছিল গান। কিন্তু সেই উৎসবটা স্তব্ধ হয়ে গেল বত্রিশ মিনিটে। ‘স্নো লেপার্ড’-দের অসাধারণ এক গোলে। প্লেসিং শটে গোল করে গেলেন গোনোহোর ক্রিজো। ইস্টবেঙ্গল বক্সের প্রায় পঁচিশ গজ দূর থেকে। লাল-হলুদ স্টপার মেহতাব সিংহকে শরীরের দোলায় ছিটকে দিয়ে মাটি ঘেঁষা শট। দূরপাল্লার শটে এর আগেও গোল খেয়েছেন রালতে। তবুও তাঁর উপরেই আস্থা রাখা হচ্ছে। মির্শাদের মতো গোলকিপারকে বসিয়ে রেখে।

গোল করা ছাড়া ভূস্বর্গের দলটি বিরতির আগে আক্রমণেই গেল না। হারব না, এই অঙ্কে মাঠে নেমেছিলেন কাশ্মীর কোচ। তাঁর রণনীতি ছিল নিজের ঘর বাঁচাও। মাঠমাঠ পর্যন্ত প্রতিপক্ষকে খেলতে দাও আর সুযোগ পেলে পাল্টা আক্রমণে গোল করে এসো। তাতেই ছিয়াত্তর মিনিট পর্যন্ত ১-০ এগিয়ে থাকল কাশ্মীর।

বিরতির পরে খেলাটা ইস্টবেঙ্গলের মুঠোয় গেল মাঝমাঠে স্পেনীয় খুয়ান গঞ্জালেস মেরা দৌড়তে শুরু করায়। সামাদ আলি মল্লিক আর যুব বিশ্বকাপার অভিজিৎ সরকারকে নামিয়ে উইংও সচল করলেন আলেসান্দ্রো। এর পরেই ঢেউয়ের মতো আক্রমণ আছড়ে পড়ল। গোড়ালি দিয়ে ঠেলে বুদ্ধিদীপ্ত গোলে সমতা ফেরালেন মার্কোস এসাপারা মার্তিন। তিনি ১-১ না করলে আলেসান্দ্রোর দলের ড্রেসিংরুম তাঁকে কাঠগড়ায় তুলতই। দু’অর্ধ মিলিয়ে অন্তত তিনটি সহজ সুযোগ নষ্ট করলেন এই স্পেনীয় স্ট্রাইকার। গত বছর ন’টি গোল করা এনরিকে এসকুয়েদোর বদলে মার্কোসকে নিয়েছেন লাল-হলুদ কোচ। কিন্তু গোলের সামনে তিনি খেই হারিয়ে ফেলছেন। ইস্টবেঙ্গল আরও দু’টো সুযোগ পেয়েছিল। কাশিম আইদারার একটি হেড গোল লাইন থেকে ফেরানো হল। মেহতাব সিংহের হেড রুখলেন কাশ্মীর গোলকিপার ফুরবা টেম্পা লাচেনপা। দ্বিতীয়ার্ধে দলের গোল নষ্টের প্রদর্শনী দেখে ইস্টবেঙ্গল সমর্থকেরা হতাশ তো হবেনই। এই মরসুমে একটাও ট্রফি আসেনি তাঁবুতে। শতবর্ষে আই লিগও যদি না আসে তা হলে মিছিল আর অনুষ্ঠান করেই যে উৎসব শেষ করতে হবে!

ইস্টবেঙ্গল: লালথুমাওয়াইয়া রালতে, কমলপ্রীত সিংহ (সামাদ আলি মল্লিক), মার্তি ক্রেসপি, মেহতাব সিংহ, অভিষেক আম্বেকর, পিন্টু মাহাতো (অভিজিৎ সরকার), কাশিম আইদারা, খুয়ান মেরা গঞ্জালেস, তনদোম্বা নওরেম, খেইমে সান্তোস কোলাদো, মার্কোস এসপারা মার্তিন।

রিয়াল কাশ্মীর: ফুরবা টেম্পা লাচেনপা, নবীন গুরুং, লভডে ওকেচুকুওয়াও, অ্যারন ক্যাটেবি, আশপ্রীত সিংহ, ঋত্বিক কুমার দাশ (চেষ্টারপল লিংডো), বাজি আর্মান্দ, দানিশ ফারুক, ফারহান ঘানি, কালাম হিগিনবোথাম, গ্নোহেরে ক্রিজ়ো।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন