হতাশ বাগান ফুটবলাররা। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
মোহনবাগান ১ : ২ মিনার্ভা
ম্যাচ শেষ হতেই মুঠো করা দু’হাত আকাশের দিকে ছুড়ে দিলেন মিনার্ভা পঞ্জাবের কোচ খগেন সিংহ। যেন যুদ্ধ জয় করে ফেরা কোনও সেনাপতি। হ্যাঁ লড়াই-ই তো বটে! কলকাতায় এসে মোহনবাগানকে হারানো কোনও লড়াই জেতার চেয়ে কম নয়। মিনার্ভা কোচের এই স্বস্তির নেপথ্যে অন্যতম কারণ যিনি তাঁর নাম চেঞ্চো গেলতসেন। ভুটানের রোনাল্ডো হিসেবে ইতিমধ্যেই পরিচিতি লাভ করেছেন ভারতীয় ফুটবলে। চেঞ্চোর জোড়া গোলেই মোহনবাগানকে ২-১ এ হারিয়ে দিল পঞ্জাবের দলটি।
বুধবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ম্যাচটা যখন শুরু হয়েছিল স্টেডিয়ামে হাজির হাজার পাঁচেক সমর্থক আশা করে ছিলেন আইজল ম্যাচে জয়ের পর মিনার্ভার বিরুদ্ধেও জয়ের মুখ দেখবে তাঁদের প্রিয় দল। কিন্তু জয় তো দুরঅস্ত, এক পয়েন্ট নিয়েও মাঠ ছাড়তে পারল না শঙ্করলাল চক্রবর্তীর দল।
বুধবার হাজার ভোল্টের আলোয় সেজে ওঠা যুবভারতীর মায়াবী সন্ধ্যায় মোহনবাগান ফুটবলারদের ক্রীড়াশৈলী যেন সত্যিই বড় বেমানান। বরং বুধবারের সন্ধ্যাটা লেখা থাকল কয়েকজন অখ্যাত-আনকোরা-লাইমলাইটে কখনও না আসা ফুটবলারদের নিয়ে তৈরি মিনার্ভা পঞ্জাবের নামেই। গত বছর যে দলটি অবনমন বাঁচানোর জন্য লড়ছিল, সেই দলটিই আমূল বদলে গিয়েছে এই একটা বছরে।
আরও পড়ুন: ভাল খেলেও হারতে হল: শঙ্করলাল
আরও পড়ুন: ধবন, রোহিতকে দলে নেওয়া নিয়ে প্রশ্ন সৌরভের
অ্যাওয়ে ম্যাচ হলেও ইস্টবেঙ্গলকে টপকে লিগ টেবিলের শীর্ষে উঠে আসার লক্ষ্যে এ দিন প্রথম থেকেই আক্রমণাত্মক ফুটবলের উপর জোড় দেন মিনার্ভা কোচ খগেন সিংহ। আর এরই সুবাদে ম্যাচের ২৩ মিনিটে বিশ্বমানের গোল করে মিনার্ভাকে এগিয়ে দেন ভুটানের ‘রোনাল্ডো’ চেঞ্চো গেলতসেন। বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া চেঞ্চোর শট আটকানোর ক্ষমতা ছিল না শিল্টন পালের পরিবর্তে দলে আসা বাগান গোলরক্ষক শিভিনরাজের পক্ষে। চেঞ্চোর করা এই গোল দীর্ঘদিন মনে রাখবেন ফুটবলপ্রেমী বাঙালি।
প্রথম গোলের ৭ মিনিটের মধ্যে ফের চেঞ্চো ম্যাজিক। নিখিল কদমের ভুল থেকে বক্সের মধ্যে ফাঁকায় বল পেয়ে যান চেঞ্চো। তিন কাঠিতে বল রাখতে ভুল করেননি এই ফুটবলার। প্রথমার্ধেই আরও গোল পেতে পারত মিনার্ভা। কিন্তু মিনার্ভা ফরোয়ার্ডদের শিশু সুলভ ভুলে একের পর এক সহজ সুযোগ হারাতে হয় পঞ্জাবের এই দলটিকে। একটি সিটার মিস করেন চেঞ্চোও। প্রথমার্ধে পাওয়া সুযোগগুলি সঠিক ভাবে কাজে লাগাতে পারলে প্রথমার্ধেই ৪ গোলে এগিয়ে যেতে পারত মিনার্ভা।
গোলের পর স্যাঞ্চোর উচ্ছ্বাস। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
গোল পেতে পারত মোহনবাগানও। ম্যাচের ৩৫ মিনিটে ডিপান্ডা ডিকাকে বক্সের মধ্যে পঞ্জাব গোলরক্ষক রক্ষিত ডাগর ফাউল করলে পেনাল্টি পায় মোহনবাগান। কিন্তু, পেনাল্টি পেলেও তা কাজে লাগাতে পারেননি লাইবেরিয়ান মিডফিল্ডার আনসুমানা ক্রোমা। গোল কিপিং প্র্যাক্টিসের ভঙ্গিতে ডাগরের হাতে বল জমা করে দেন ক্রোমা। এর পর চেষ্টা করেও প্রথমার্ধে ব্যবধান কমাতে পারেনি মোহনবাগান।
প্রথমার্ধে ভাল খেলতে না পারলেও দ্বিতীয়ার্ধে চেনা ছন্দে কিছুটা হলেও ফিরে পায় মোহনবাগান। চেনা উইং প্লে দেখা যায় দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম মিনিট থেকেই। বারবার মাঝ মাঠের নিয়ন্ত্রণ হারানো ওয়াটসন-ক্রোমারাও নিজেদের চেনা ছন্দে খেলা শুরু করেন। কিন্তু গোল করার লোকের অভাবে ডিকা-নরহরিদের লক্ষ্য করে ভেসে আসা প্রতিটি ক্রসই বিফলে যায়। এরই মধ্যে ম্যাচের ৭৮ মিনিটে পঞ্জাব দলটির ম্যানেজার রঞ্জিত বাজাজকে মার্চিং অর্ডার দেন রেফারি। যদিও তাতে মিনার্ভার খেলাতে কোনও প্রভাব পড়েনি।
দ্বিতীয়ার্ধের সংযুক্তি সময় মোহনবাগানের হয়ে স্বান্তনাসূচক গোল করে যান কিংঙ্গসলে। এই গোলটি যদি আরও দশ মিনিট আগে আসত তা হলে খেলার ফল অন্যরকম হতেও পারত।প্রত্যাশা মতোই এ দিন ম্যাচের সেরা নির্বাচিত হয়েছেন মিনার্ভার চেঞ্চো। এই ম্যাচে জয়ের ফলে ৮ ম্যাচে ১৯ পয়েন্ট নিয়ে লিগ তালিকার শীর্ষে উঠে এল মিনার্ভা। এক ম্যাচ বেশি খেলে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে ইস্টবেঙ্গল দ্বিতীয় স্থানে। ৯ ম্যাচে ১৩ পয়েন্ট নিয়ে পঞ্চম স্থানেই থাকল মোহনবাগান।