ধ্বংস দেখলাম, মেসি ফিরলে শিল্পও দেখব

ম্যাচটা দেখতে বসে আর্জেন্তিনার কাছ থেকে এ সবই পেলাম, কিন্তু মনটা ভরল না। আসলে আমার মতো একজন ফুটবলপ্রেমী যখন টিভি চালিয়ে আর্জেন্তিনা ম্যাচ দেখে, তখন তো শুধু তাদের জয় দেখে সন্তুষ্ট থাকতে পারে না। বরং আশা করবে জয়ের পাশাপাশি শিল্পটাও দেখতে।

Advertisement

সুব্রত ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৬ ০৪:৩৩
Share:

কোপা ২০১৬। গোল করে দি’মারিয়ার কান্না।

আর্জেন্তিনা ২ : চিলি ১

Advertisement

(দি’মারিয়া, বনেগা) (জোসে)

দু’টো দারুণ গোল। আঁটসাঁট ডিফেন্স। গোলকিপারের দারুণ সেভ। ধ্বংসাত্মক ফুটবল।

Advertisement

ম্যাচটা দেখতে বসে আর্জেন্তিনার কাছ থেকে এ সবই পেলাম, কিন্তু মনটা ভরল না। আসলে আমার মতো একজন ফুটবলপ্রেমী যখন টিভি চালিয়ে আর্জেন্তিনা ম্যাচ দেখে, তখন তো শুধু তাদের জয় দেখে সন্তুষ্ট থাকতে পারে না। বরং আশা করবে জয়ের পাশাপাশি শিল্পটাও দেখতে। এমন কয়েকটা মুভ দেখতে যা দিন দু’য়েক সম্মোহিত করে রেখে দেবে। কিন্তু আর্জেন্তিনার মধ্যে সেই শিল্পটা খুঁজে পেলাম কোথায়। আসলে শিল্পের সেই স্রষ্টা তো রিজার্ভ বেঞ্চে বসে ছিল। হয়তো প্রতিটা মিনিটেই হাঁসফাঁস করেছে মাঠে নামার জন্য। সেই শিল্পীর নাম যখন লিওনেল মেসি তখন বেঞ্চে বসে ফুটবল দেখা তো তার কাছে এক ধরনের শাস্তি।

কোপায় মেসিহীন ম্যাচে আর্জেন্তিনা অবশ্য খুঁজে পেল তাদের এমার্জেন্সি ম্যানকে। আমি আগেও বলেছি এই আর্জেন্তিনা দলের মগজ যদি মেসি হয় তবে হৃদপিণ্ড অ্যাঞ্জেল দি’মারিয়া। আরও একবার প্রমাণ হয়ে গেল কতটা উন্নতি করেছে প্লেয়ারটা। পুরনো দি’মারিয়া এত ভাল ফিনিশ করতে পারত না। পুরনো দি’মারিয়া ভাল করে বল হোল্ড করতে পারত না। এখন এই সব কিছুই ও শুধরেছে। দি’মারিয়াকে দেখে অনেক বেশি ফিট লাগে। ওর শারীরিক শক্তি অত বেশি নেই। কিন্তু চেহারাটা একটু রোগা হওয়ায় স্প্রিন্ট টানতে পারে ভাল। প্রথম গোলটা দি’মারিয়া ছাড়া কেউ করতে পারত না। কারণ কোনও থ্রু পাস ঠিক করে ধরতে গেলে ভাল গতি লাগে। দি’মারিয়া জানত চিলির গ্যারি মেডেল, মরিসিও ইসলাদের সঙ্গে শারীরিক শক্তি দিয়ে ও লড়তে পারবে না। তাই স্প্রিন্ট টেনে ওদের গতিতে হারাল। ফিনিশিংটার মধ্যেও বুদ্ধিমত্তার ছাপ। খুব জোরে শটটা মারেনি। শুধু বলটা প্লেস করল ক্লডিও ব্র্যাভোর পাশ দিয়ে। ক্লিনিকাল ফিনিশ বলতে যা বোঝায়। শুধু কী গোল? ড্রিবল করল ফুটবলারদের। প্রতিআক্রমণ সাজাল। বারবার সুযোগ তৈরি করছিল। ওয়ার্কলোড নিচ্ছিল। বনেগার ডিফ্লেকটেড গোলটা তো সেই দি’মারিয়ার পাস থেকেই।

ম্যাচ শেষে মেসির অভিনন্দন।

গোল করার পর আবার দেখলাম রিজার্ভ বেঞ্চের সামনে এসে একটা টি-শার্ট ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ল দি’মারিয়া। প্রথমে বুঝতে পারলাম না ঠিক কী হল। পরে ইন্টারনেট ঘেঁটে দেখলাম, ম্যাচ শুরু হওয়ার আগে দি’মারিয়া খবর পায় ওর ঠাকুমা মারা গিয়েছে। কিছুটা হলেও ওর সেই কষ্টটা আমি অনুভব করছিলাম। কারণ ২০০১-এ আমি মোহনবাগান কোচ থাকাকালীন জাতীয় লিগের ম্যাচের আগে খবর পেয়েছিলাম বাবা মারা গিয়েছেন। ম্যাচটা খেলতে বেঙ্গালুরু গিয়েছিলাম। প্রতিপক্ষ ছিল আইটিআই। তবুও আমি কষ্টটা কাউকে বুঝতে দিইনি। ডাগআউটে দাঁড়িয়ে মোহনবাগানকে জেতাতে মরিয়া লড়াই চালিয়েছিলাম। পরের দিন ভোরে ফ্লাইট ধরে বাড়ি যাই। তাই বুঝতে পারছি, দি’মারিয়া কতটা কষ্টের মধ্যে এই ম্যাচটা খেলেছে। সত্যিই ওর মানসিক জোরের প্রশংসা করতেই হবে।

আর্জেন্তিনা জিততে পারে কিন্তু চিলির খেলায় আমি হতাশ। এক বছর আগের কোপা ফাইনালের সঙ্গে এই চিলির কোনও মিল পেলাম না। দল তো খুব একটা বদলায়নি। শুধু কোচ জর্জ সাম্পাওলি পাল্টেছেন। তাতে এত খারাপ খেলবে কেন? অ্যালেক্সিস সাঞ্চেজ ছাড়া কারওর মধ্যে কোনও চেষ্ট়াই ছিল না। সাঞ্চেজ একটা দারুণ সুযোগ প্রথমার্ধে পেয়েছিল গোল করার। সের্জিও রোমেরো ভাল বাঁচিয়েছে। তা ছাড়া শেষ মিনিটে জোসের হেডে সেই গোলটা। এ ছাড়া চিলির মধ্যে কোনও লড়াকু মানসিকতার ছাপ দেখলাম না। গত বছর চিলির কোপা জয়ের ভিত ছিল রক্ষণ। ফাইনালে মেসি-ইগুয়াইনদের দেখে মনে হয়েছিল কোনও দেওয়ালের বিরুদ্ধে খেলছে। কিন্তু এ দিনের ম্যাচে আর্জেন্তিনার বিরুদ্ধে দুটো গোলই এক ভাবে খেলো। দি’মারিয়ার গোলের পরেও সেই এক রাস্তায় গিয়ে দ্বিতীয়টা পেল আর্জেন্তিনা। আর্জেন্তিনার কেউ বল পেলে এত জায়গা পাচ্ছিল মাঝমাঠে যে মনেই হচ্ছিল না আর্তুরো ভিদালের মতো ট্যাকলার আছে চিলিতে।

জয় দেখলেও মেসিকে দেখা হল না আর্জেন্তিনা ভক্তের।

এই আর্জেন্তিনা দলকে আগেই আমি হট ফেভারিট বলেছি। যে দলের প্রথম একাদশে সের্জিও আগেরোর জায়গা হয় না সেখানে বোঝাই যাচ্ছে ঠিক কতটা শক্তিশালী আর্জেন্তিনা। কিন্তু ফিনিশিংয়ে আরও উন্নতি করতে হবে। নিকোলাস গায়তানের হেডটা বারে লাগতে পারে। কিন্তু ইগুয়াইন, লামেলারা যে সমস্ত সুযোগ নষ্ট করল তা অন্য ম্যাচে করলে মুশকিলে পড়তে হতে পারে। আরও ভাল পাসিং মুভ তৈরি করতে হবে। লং রেঞ্জ শট মেরে মুভ নষ্ট করলে চলবে না।

আর্জেন্তিনার এই টিমটার মধ্যে অবশ্যই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সব মশলা আছে। আমি নিশ্চিত, মেসি ফিরলে সেই ম্যাজিকটাও দেখা যাবে, যা এ দিন পাইনি। ওর মতো ফুটবলার অবিশ্বাস্য সব পরিস্থিতি থেকে এক একটা মুভের জন্ম দিতে পারে। যা ফুটবল ভক্তদের সম্মোহিত করে রাখবে।

আশা করছি, পরের ম্যাচ থেকে মেসিকে দেখব। শিল্পও।

ব্রাজিলের সামনে সনির দেশ

প্রথম ম্যাচেই আটকে গিয়েছে ব্রাজিল। ইকুয়েডরের মতো দলের বিরুদ্ধে গোলশূন্য ড্র করার পরে নেইমারহীন ব্রাজিলের সামনে হাইতি। যে দলে রয়েছেন মোহনবাগানের পোস্টার বয় সনি নর্ডি। প্রথম ম্যাচে পেরুর বিরুদ্ধে ০-১ হারে হাইতি। ব্রাজিল বনাম হাইতি, অর্ল্যান্ডোয় বৃহস্পতিবার ভোর ৫-০০। সোনি ইএসপিএনে।

ছবি টুইটার, এএফপি

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন