বড় শট তো দূর, খুচরো রানও নিতে পারলেন না, ধোনিকে ধিক্কার দিল গ্যালারি

ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ধোনি একাই যে শট নিতে সমস্যায় পড়েছেন, তা নয়। শুরুতে কে এল রাহুল ঠিক মতো ব্যাটে-বলে করতে পারছিলেন না। কেদার যাদব হাফসেঞ্চুরি করলেও খুব একটা সপ্রতিভ দেখায়নি।

Advertisement

সুমিত ঘোষ

সাউদাম্পটন শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০১৯ ০৪:১৯
Share:

হতাশ: ধোনির ব্যাটিং নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। শনিবার। এএফপি

উইকেটকিপার ধোনি জিতলেন। ‘ক্যাপ্টেন কুল’ ধোনি জিতলেন। কিন্তু ভারতের এমন রুদ্ধশ্বাস জয়ের দিনে হার সঙ্গী হল ব্যাটসম্যান মহেন্দ্র সিংহ ধোনির। বিশ্বের কোনও মাঠেই খুব একটা বিদ্রুপ শুনতে হয় না তাঁকে। শনিবার সেই ব্যতিক্রমও ঘটল। কেদার যাদবের সঙ্গে ব্যাটিং করার সময় যখন আফগান বোলারদের বিরুদ্ধে খুচরো রান নিতেও পারছেন না ধোনি, গ্যালারি অধৈর্য হয়ে পড়ল। দু’এক বার বেশ চেঁচিয়েই তাঁরা অসন্তোষ প্রকাশ করলেন। কে বলবে, সকালে এঁরাই কেউ ধোনির মতো সাত নম্বর জার্সি পরে বা ‘আই লাভ ইউ’ ব্যানার তুলে ধরে তাঁর প্রতি সমর্থনের কথা ঘোষণা করেছেন।

Advertisement

ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ধোনি একাই যে শট নিতে সমস্যায় পড়েছেন, তা নয়। শুরুতে কে এল রাহুল ঠিক মতো ব্যাটে-বলে করতে পারছিলেন না। কেদার যাদব হাফসেঞ্চুরি করলেও খুব একটা সপ্রতিভ দেখায়নি। হার্দিক পাণ্ড্য এই বিশ্বকাপে দারুণ ছন্দে রয়েছেন। কিন্তু তাঁকেও দেখা গেল ঠিক মতো ব্যাটে-বলে করতে পারছেন না। তবু ধোনির ৫২ বলে ২৮ এবং ৫৩.৮৪ স্ট্রাইক রেটের কোনও ব্যাখ্যা কেউ খুঁজে পাচ্ছেন না। ভারতীয় শিবির এর পরেও হয়তো ধোনির পাশেই দাঁড়াবে। কিন্তু অস্বীকার করার উপায় নেই যে, আগের মতো বড় স্ট্রোক তো তিনি নিতে পারছেনই না, খুচরো রান নেওয়ার কৌশলও দ্রুত তাঁর ব্যাটিং থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছে। আরও চিন্তার কারণ হচ্ছে, স্পিনারদের মারার সাহসই তিনি দেখাতে পারছেন না। অথচ, ক্রিকেটবিশ্ব এত দিন উল্টোটাই দেখে এসেছে যে, ধোনিকে বল করতেই বুক কাঁপছে স্পিনারদের। ধোনির ব্যাটিং নিয়ে প্রশ্ন উঠছে গত দু’বছর ধরেই। কিন্তু আইপিএলে পুরনো মেজাজে ব্যাট করায় তাঁকে নিয়ে নতুন করে আশা তৈরি হয়েছিল যে, বিশ্বকাপে হয়তো ফের সেই বিধ্বংসী ধোনিকে দেখা যাবে। কিন্তু সাউদাম্পটনে এমন বিস্ময়কর ভাবে মন্থর ধোনিকে দেখতে হবে, তাঁর সমর্থকেরাও হয়তো ভাবেননি। ভারতীয় দলও হয়তো দুঃস্বপ্নে ভাবেনি যে, প্রাক্তন অধিনায়কের দিকে বিদ্রুপাত্মক ধ্বনি ধেয়ে আসার এমন অস্বস্তিকর মুহূর্তের সামনে পড়তে হবে।

ধোনি অবশ্য অন্য দু’টি কারণে খুব প্রশংসিতও হচ্ছেন। প্রচণ্ড ক্ষিপ্রতায় স্টাম্পিং করছেন এখনও। উইকেটের পিছনে দাঁড়িয়ে দারুণ সক্রিয় তিনি। তেমনই বোলারদের পথপ্রদর্শকের ভূমিকায় এখনও বাজিমাত করে যাচ্ছেন। এ দিনই শেষ ওভারে শামির বলে মহম্মদ নবি বাউন্ডারি মারার পরেই দেখা যায় ধোনি গিয়ে তাঁকে পরামর্শ দিচ্ছেন। তার পরেই শামির হ্যাটট্রিক। সেই ছবি টুইটারে ছড়িয়ে পড়ে ‘ক্যাপ্টেন কুল’-এর জয়গানও গাওয়া হচ্ছে। কেউ কেউ বলার চেষ্টা করছেন, ব্যাট হাতেও এমএসডি-র একটা খারাপ দিন গিয়েছে। দ্রুতই তিনি স্বমহিমায় ফিরবেন। আবারও ম্যাচ জেতাবেন। কিন্তু ব্যাটসম্যান ধোনিকে নিয়ে জনতার রিংটোন যতটা না স্বস্তির, তার চেয়েও বেশি দুশ্চিন্তার।

Advertisement

আরও পড়ুন: জিতলেও আফগানরা বিরাটদের যে ত্রুটিগুলো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল​

যদিও একা ধোনিকে কাঠগড়ায় দাঁড় না করিয়ে কেউ কেউ ভারতীয় মিডল অর্ডার ব্যাটিংয়ের দিকে আঙুল তুলছেন। তিন নম্বরে কোহালি পর্যন্ত ঠিক আছে। কিন্তু চার, পাঁচ এবং ছয়ে বিজয় শঙ্কর, ধোনি এবং কেদার যাদবের ত্রয়ীর প্রতি পুরোপুরি আস্থা রাখা যায় কি না, সেই প্রশ্ন উঠছে। শঙ্কর আইপিএলে দারুণ কিছু করে আসেননি। এ দিন বলও করানো গেল না। কেদার যাদবের অদ্ভুত স্পিন কতটা কাজে দেবে, তা নিয়েও প্রশ্ন থাকছে। তা হলে ঋষভ পন্থের মতো উত্তেজক প্রতিভা বাইরে বসে থাকছে কেন? এক দিকে ব্যাটসম্যান ধোনিকে নিয়ে বাড়তে পারে প্রশ্নের ধ্বনি। অন্য দিকে পন্থের প্রতি উপেক্ষা নীতি চলতে থাকা। জয়ের দিনেও কিংবদন্তি এবং তাঁর উত্তরসূরি নিয়ে প্রশ্নে জেরবার দেখাচ্ছে ভারতীয় দলকে।

কারও কারও আবার অন্য একটা ভয় তাড়া করছে যে, অধিনায়ক কোহালি কি মাঠের মধ্যে বেশি আগ্রাসন দেখিয়ে ফেললেন শনিবার? ভারত অধিনায়ককে আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে অসন্তোষ প্রকাশ করতে দেখা গেল দু’বার। এমন রক্তচাপ বাড়ানো ম্যাচে মেজাজ চড়ে যেতে পারে দু’এক বার। কিন্তু ম্যাচ রেফারির নাম যে ছিল ক্রিস ব্রড। ভারতের প্রতি একটু বেশিই কড়া হওয়ার ইতিহাস রয়েছে তাঁর। ম্যাচ জেতার পরেও কোহালিদের সব রকম উদ্বেগ কমল কি না, সেটাই দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন