বিরাটদের জন্য বড় ধাক্কা হতে পারে এই চোট

মঙ্গলবার লাঞ্চ সেরে টিভিতে খবরের চ্যানেল ঘোরাতেই এমন একটা খবর শুনলাম তা বিমর্ষ করে দেওয়ার মতোই। খবরটা হল, শিখর ধওয়নের বাঁ হাতের হাড়ে চিড় ধরেছে।

Advertisement

এরাপল্লি প্রসন্ন

শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৯ ০৪:১৬
Share:

উৎকণ্ঠা: ধওয়নকে নিয়ে শঙ্কা ভক্তদের। তবে ভারতীয় দলের আশা বাঁ হাতি ওপেনার ফিট হয়ে যাবেন। ফাইল চিত্র

গত রবিবার থেকেই রয়েছি আমার অন্যতম প্রিয় শহর কলকাতাতে। এখানে বসেই দেখলাম বিশ্বকাপের দ্বিতীয় ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে বিরাট কোহালির দলের ৩৬ রানে জয়।

Advertisement

গত বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের ওভালে এ রকম পর্যুদস্ত করার পরে মনটাও বেশ উৎফুল্ল হয়ে উঠেছিল। কিন্তু মঙ্গলবার লাঞ্চ সেরে টিভিতে খবরের চ্যানেল ঘোরাতেই এমন একটা খবর শুনলাম তা বিমর্ষ করে দেওয়ার মতোই। খবরটা হল, শিখর ধওয়নের বাঁ হাতের হাড়ে চিড় ধরেছে। তিন সপ্তাহ খেলতে পারবে না।

শুনেই বিশ্বকাপে ভারতের ক্রীড়াসূচির দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিলাম। শিখর তিন সপ্তাহ মাঠের বাইরে চলে যাওয়ার অর্থ আগামী ২ জুলাই পর্যন্ত ভারতের কোনও ম্যাচে পাওয়া যাবে না দিল্লির এই আগ্রাসী ব্যাটসম্যানকে। এই সময়ের মধ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ খেলবে বিরাটের দল। যার মধ্যে রয়েছে নিউজ়িল্যান্ড (১৩ জুন), পাকিস্তান (১৬ জুন), আফগানিস্তান (২২ জুন), ওয়েস্ট ইন্ডিজ (২৭ জুন), ইংল্যান্ড (৩০ জুন) বাংলাদেশ (২ জুলাই) ও ও শ্রীলঙ্কা (৬ জুলাই)। অর্থাৎ শ্রীলঙ্কা ম্যাচের আগে লিগের খেলায় সুস্থ শিখরকে পাওয়ার সম্ভাবনা কম। একমাত্র ভারত সেমিফাইনালে গেলে তরতাজা শিখরকে ফের ব্যাট করতে দেখা যাবে। কিন্তু চোট কাটিয়ে ফিরে আসার পরে শিখরের ম্যাচ ফিটনেস বা মানসিক ফিটনেস কোথায় থাকবে, সেটা বলা দুষ্কর। ফলে ভারতীয় দলের যে পরিকল্পনা ছিল শিখর-রোহিত জুটিকে ঘিরে, তা ধাক্কা খাবেই।

Advertisement

খবরটা শুনে আমার সেই ১৯৮৫ সালে কপিল দেবের দলের অস্ট্রেলিয়া সফরের কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। সে বারও সফরের মাঝেই রজার বিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। যার ধাক্কা সাময়িক হলেও দলে পড়েছিল।

আমার মতে, শিখরের এই চোট পেয়ে দলের বাইরে চলে যাওয়া নিঃসন্দেহে বড় ধাক্কা। কারণ শিখরের একটা বড় গুণ হল, আসল দিনে ব্যাট হাতে জ্বলে ওঠে। এ বারও যেমন দুই প্রস্তুতি ম্যাচে রান পায়নি। নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে করেছিল ৭ বলে ২ রান। বাংলাদেশের বিরুদ্ধেও আউট হয়ে গিয়েছিল ১ রান করেই। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধেও বড় রান পায়নি। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার মতো শক্তিধর প্রতিপক্ষের সামনে পড়তেই আসল খেলাটা বেরিয়ে এল ওর ব্যাট থেকে। তাই শিখরকে ছাড়া নিউজ়িল্যান্ড, পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ইংল্যান্ডের মতো দলের বিরুদ্ধে নামতে হলে ভারতের ব্যাটিংয়ে কিছু হলেও ছন্দপতনের আশঙ্কা থেকেই যায়।

বিশেষ করে, সমস্যা হতে পারে ব্যাটিং কম্বিনেশন ঠিক করতে গিয়ে। কারণ, রোহিত শর্মা ও শিখর ধওয়নের ওপেনিং জুটিটা অনেক দিন ধরে খেলছে। এই জুটি পরীক্ষিত। এখন হঠাৎ এই ধাক্কা এলে চাপটা সবার আগে যার উপর এসে পড়বে সে হল অধিনায়ক বিরাট কোহালি। রবিবারের অস্ট্রেলিয়া ম্যাচটা একবার মনে করে দেখুন। মিচেল স্টার্ক, প্যাট কামিন্সদের সামনে প্রায় ২৩ ওভার (২২.৩ ওভার) খেলে দিয়েছিল ভারতীয় ওপেনিং জুটি। প্রায় দেড় ঘণ্টা খেলে স্কোরবোর্ডে যোগ করেছিল ১২৭ রান। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ভারতের হয়ে খেলার অভিজ্ঞতায় বলতে পারি, কোনও দলের ওপেনিং জুটি যদি এ রকম ছন্দে খেলে দেয়, তা হলে বিপক্ষ বোলাররা কতটা চাপে পড়তে পারে। স্বভাবতই এ রকম একটা বড় রান স্কোরবোর্ডে দেখে যখন বিরাট খেলতে নেমেছিল, তখন অনেকটা স্বস্তি নিয়েই ব্যাট করেছে। তার ফল কী হয়েছে তা ভারতের সাড়ে তিনশোর উপরে তোলা রানেই বলা রয়েছে।

কে এল রাহুল ওপেনার হিসেবে এখন খেলবে। কিন্তু এ পর্যন্ত ও মানসিক প্রস্তুতি নিয়েছে চার নম্বরে খেলার ব্যাপারে। সেখানে ওপেন করতে নেমে ওকে মানিয়ে নিতে সময় দিতে হবে। তা ছাড়া বিপক্ষও এ বার মানসিক ভাবে অনেকটা সুবিধা পাবে ভারতের বিরুদ্ধে খেলতে নেমে। তবে আশার কথা, নতুন বলে খেলতে রাহুলের সমস্যা হবে না। কার্ডিফে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রস্তুতি ম্যাচে সিমিং উইকেটে শতরান করে আত্মবিশ্বাসটা রয়েছে। ট্রেন্ট ব্রিজে নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওকে মুখোমুখি হতে হবে দু’ম্যাচে আট উইকেট পাওয়া ম্যাট হেনরি, লকি ফার্গুসনদের বিরুদ্ধে। তবে ট্রেন্ট ব্রিজ ব্যাটসম্যান সহায়ক মাঠ। আশা করি, এই পরিস্থিতিতে প্রথম ম্যাচে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় রাহুলের। তবে রোহিতের সঙ্গে দ্রুত মানানোর কাজটা ওকে করতে হবে।

এ বার ইংল্যান্ডের পিচে বাউন্স থাকলেও উপমহাদেশের ব্যাটসম্যানদের অসুবিধা হওয়ার নয়। শিখর ব্যাকফুটে ভাল খেলে। বোলারের বিরুদ্ধে আগ্রাসী হওয়ার পাশাপাশি ওর মারে জোরও প্রবল। যে কারণে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ওভালে শর্ট বলের মোকাবিলা করতে সমস্যা হয়নি শিখরের। মজায় কাট আর পুল করতে পেরেছে। লেগ স্টাম্পের বাইরে সে দিন গার্ড নিয়ে দাঁড়াচ্ছিল শিখর। ফলে বল মারার জন্য জায়গা পাচ্ছিল। ফলে অফস্টাম্পে বাড়তি ফিল্ডার রেখেও শিখরের রান আটকাতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া। ট্রেন্ট ব্রিজের মতো ইংল্যান্ডের ছোট মাঠে ভারতের তুরুপের তাস হতে পারত শিখর।

সব শেষে যে প্রশ্নটা আসছে, তা হল যদি শিখরকে ফিরতে হয়, তা হলে বিকল্প কে? শ্রেয়স আইয়ার, ঋষভ পন্থ রয়েছে। আমার ভোট এ ক্ষেত্রে ঋষভের দিকে। যদিও এখনও জানি না শিখর ফিরছে কি না। যদি ফেরে তা হলে পাঠানো হোক ঋষভকে। কারণ, তখন রাহুল ওপেন করলে চার নম্বরে খেলার যোগ্য ব্যাটসম্যান দিল্লির এই ছেলেটি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন