যুবভারতীতে গার্সিয়া।
তিনি সুস্থ। কোচ চাইলেই তাঁকে খেলাতে পারেন। শুক্রবার অনুশীলনের পর লুই গার্সিয়া স্বয়ং সাংবাদিক সম্মেলনে এই কথা জানিয়ে দেওয়ার পর ফের প্রকাশ্যে চলে এল কলকাতার কোচ বনাম মার্কি ফুটবলারের দ্বন্দ্ব।
মুম্বই রওনা হওয়ার এক দিন আগে আটলেটিকো দে কলকাতার আইকন ফুটবলার কেন এমন বললেন, তা নিয়ে আলোড়িত টিমের অন্দরমহলও। তীব্র অস্বস্তিতে তাঁরা।
এমনিতেই দিল্লি ম্যাচে গার্সিয়াকে বেঞ্চে বসিয়ে রাখায় সমালোচনার ঝড় বয়ে গিয়েছিল। ম্যাচের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নে রেগে গিয়ে আন্তোনিও হাবাস বলে দিয়েছিলেন, “কাকে কখন খেলাব সেটা একান্তই আমার নিজস্ব ব্যাপার। এ সব নিয়ে প্রশ্ন করবেন না।” শহরে ফিরে গার্সিয়ার আবার কোচ নিয়ে এ দিনের মন্তব্যের পর তাই প্রশ্ন উঠে গেল, হাবাসের সঙ্গে কি তাঁর বিরোধ চরমে পৌঁছেছে? যা আর মেরামতের নয়? না হলে যে ম্যাচটা জিতলেই সেমিফাইনালে যাওয়ার রাস্তা নিশ্চিত হয়ে যাবে, তার আগে অযথা এই বিতর্ক কেন তৈরি করলেন টিমের এক নম্বর ফুটবলার?
স্প্যানিশ তারকা এ দিন অনুশীলনের পর হঠাত্ই বলে বসেন, “আমার কোনও চোট নেই। একশো শতাংশ ফিট আছি। আমাকে দলে রাখা হবে কি না, সেটা কোচের ব্যাপার।” সঙ্গে তিনি যোগ করেন, “আইএসএলের মতো একটা লম্বা টুর্নামেন্টে সব সময় ফিটনেসের উপর নজর দিতে হয়। আসল জিনিস হল চোট না পাওয়া। আর দলের ফিজিও মিগুয়েল খুব ভাল কাজ করছেন ফুটবলারদের ফিটনেস বজায় রাখতে। আমি ভাবছি না, প্রথম দলে থাকব না রিজার্ভ বেঞ্চে। যেখানেই থাকি, আমি দলকে সাহায্য করতে চাই।”
শান্ত স্বভাবের প্রাক্তন বিশ্বকাপারের এ হেন বিতর্কিত মন্তব্যে যখন সাংবাদিকরাও বিস্মিত, তখন অবশ্য পরিস্থিতি ঘোরাল হচ্ছে দেখে অন্য পথে হাঁটতে শুরু করেন কলকাতার মার্কি ফুটবলার। “না, কোনও ঝামেলা নেই দলের মধ্যে। এটা সংবাদমাধ্যমের বানানো গল্প। অনেক বছর ধরে ফুটবলের সঙ্গে যুক্ত আছি। জানি কী ভাবে এ সব প্রচার হয়।” মলম দেওয়া এই মন্তব্যের পরেও অবশ্য গুঞ্জন থামেনি।
প্রকাশ্যে ঝামেলার কথা স্বীকার না করলেও, অনুশীলনে কিন্তু বোঝা গিয়েছে কোচ-মার্কি প্লেয়ারের সম্পর্ক কত শীতল। এক বারও মুখোমুখি হয়ে কথা বলতে দেখা যায়নি গার্সিয়া ও হাবাসকে। এক দিকে যখন সব ফুটবলারকে ডেকে কলকাতা কোচ স্ট্র্যাটেজি আলোচনা করছেন, তখন গার্সিয়া মাঠের এক কোণে কর্নার ফ্ল্যাগের সামনে দাঁড়িয়ে। আবার গার্সিয়া পেনাল্টি মারার সময়ও হাবাস ব্যস্ত ছিলেন বাকিদের ‘কুল ডাউন’ করাতে।
আইএসএলের প্রথম ম্যাচে মুম্বই এফসির বিরুদ্ধে ৩-০ জিতেছিল আটলেটিকো। কিন্তু এ বার সেই দলের বিরুদ্ধেই এত গোল করা সম্ভব নয়, জানিয়ে দিলেন গার্সিয়া। “সবার টার্গেট এখন আটলেটিকো। সবাই আমাদের শক্তি সম্পর্কে জানে। তার মধ্যে গোলের সুযোগ তৈরি হলেও আমরা গোল করতে পারছি না। অনুশীলনে এই দিকটার উপরেই জোর দিচ্ছি। আশা করছি মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে শুরু থেকেই আক্রমণে অনেক সুযোগ তৈরি করব।” তিন পয়েন্ট পেলেই সেমিফাইনালের ছাড়পত্র পাবে আটলেটিকো। গার্সিয়া বললেন, “এটা খুব ভাল যে সেমিফাইনালে ওঠাটা আমাদের হাতেই আছে। অন্য কোনও দলের ফলের উপর নির্ভর করতে হবে না। আশা করছি মুম্বইয়কে হারাব।”
শনিবার সকালে মুম্বই উড়ে যাওয়ার আগে শেষ বারের মতো যুবভারতীতে অনুশীলন করল আটলেটিকো। সেট পিসের উপর জোর দেওয়া ছাড়াও চলল হ্যান্ডবল খেলা। অর্থাত্ হাত দিয়ে বলের পজেশন রাখার চেষ্টা। চোটের কারণে এ দিন আলাদা করে ওয়ার্ম আপ করেন হোফ্রে ম্যাতিউ ও সিলভঁ মনসুরু। দলের সঙ্গে মুম্বই যাচ্ছেন না হোফ্রে। তাঁর হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট এখনও সারেনি। মুম্বই ম্যাচে হোফ্রের জায়গায় খেলতে পারেন জাকুব পদানি। গার্সিয়া বললেন, “হোফ্রে না থাকা অবশ্যই ক্ষতি। ও ধারাবাহিক ভাবে ভাল খেলছে। কিন্তু গত ম্যাচে পদানি খুব ভাল খেলেছে। আশা করছি এই ম্যাচেও ও ভাল খেলবে।” রেফারিকেও আবার ঘুরিয়ে একহাত নেন গার্সিয়া। বলেন, “অনেক ম্যাচে ভাগ্য আমাদের সঙ্গে ছিল না। কিছু প্রাপ্য পয়েন্টও নানা কারণে পাইনি।”
ছবিগুলি তুলেছেন শঙ্কর নাগ দাস।