আজ উদ্বোধন ইনচিওন গেমসের

এশীয় ক্রীড়াশক্তি হয়ে ওঠা লক্ষ্য ভারতের

মাত্র এক মাস আগেই কমনওয়েলথ গেমসে প্রত্যাশার অতিরিক্ত পারফরম্যান্সে উদ্দীপ্ত ভারত এ বার নিজেকে এশিয়ার অন্যতম ক্রীড়া-শক্তি হিসেবে প্রমাণ করতে চাইছে। কমনওয়েলথ গেমসকে কেউ কেউ ‘মিনি অলিম্পিক’ যদি বলে থাকেন, তা হলে শুক্রবার দক্ষিণ কোরিয়ার ইনচিওনে উদ্বোধন ঘটতে চলা সপ্তদশ এশিয়াড তর্কাতীত ভাবে এই মহাদেশের খেলাধুলোয় শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের সর্বোচ্চ মঞ্চ। আর সেই মঞ্চে চিন, জাপান, কোরিয়ার মতো পাওয়ারহাউসদের সঙ্গে একই সরণিতে দাঁড়ানো ইনচিওনে প্রধান লক্ষ্য ৫১৬ ক্রীড়াবিদের ভারতীয় দলের।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৪:৩০
Share:

ইনচিওনের গেমস ভিলেজে ভারতীয় মেয়েরা। বৃহস্পতিবার। ছবি: পিটিআই

মাত্র এক মাস আগেই কমনওয়েলথ গেমসে প্রত্যাশার অতিরিক্ত পারফরম্যান্সে উদ্দীপ্ত ভারত এ বার নিজেকে এশিয়ার অন্যতম ক্রীড়া-শক্তি হিসেবে প্রমাণ করতে চাইছে। কমনওয়েলথ গেমসকে কেউ কেউ ‘মিনি অলিম্পিক’ যদি বলে থাকেন, তা হলে শুক্রবার দক্ষিণ কোরিয়ার ইনচিওনে উদ্বোধন ঘটতে চলা সপ্তদশ এশিয়াড তর্কাতীত ভাবে এই মহাদেশের খেলাধুলোয় শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের সর্বোচ্চ মঞ্চ। আর সেই মঞ্চে চিন, জাপান, কোরিয়ার মতো পাওয়ারহাউসদের সঙ্গে একই সরণিতে দাঁড়ানো ইনচিওনে প্রধান লক্ষ্য ৫১৬ ক্রীড়াবিদের ভারতীয় দলের।

Advertisement

টিম ইন্ডিয়া

Advertisement

ক্রীড়া মন্ত্রক ৬৬২ ক্রীড়াবিদ-সহ মোট ৯৪২ জনের দলকে অনেকটা কাটছাঁট করলেও ইনচিওনে শেষ পর্যন্ত যে দল দিল্লি থেকে গিয়েছে, সেটাও যথেষ্ট বড়। ৫১৬ অ্যাথলিট আর ১৬৩ জন কর্মকর্তা নিয়ে মোট ৬৭৯ জনের বিশাল ভারতীয় দল এশিয়াডে ২৮টা বিভিন্ন খেলায় আগামী ষোলো দিন অংশ নেবে। এর মধ্যে তিরন্দাজি, অ্যাথলেটিক্স, ব্যাডমিন্টন, বক্সিং, গল্ফ, শ্যুটিং, কুস্তি, ভারোত্তোলন, ইয়টিং, স্কোয়াশ, কবাডি-তে ভারতের পদক সম্ভাবনা আছে বলে বিশেষজ্ঞমহল মনে করছে। এ ছাড়া হকি তো যে কোনও গেমসেই বরাবর ভারতের সম্ভাব্য পদক ইভেন্ট।

পদক তালিকায় টার্গেট

চার বছর আগে গুয়াংঝৌ এশিয়াডে ভারত মোট ৬৫ পদক জিতেছিল। যার মধ্যে ১৪টি সোনা। সে বারও এশিয়াডের এক মাস আগে কমনওয়েলথ গেমস হয়েছিল। এবং ঘরের মাঠ দিল্লিতে ভারত রেকর্ড সংখ্যক ১০১ পদক জিতে চাঙ্গা অবস্থায় চিনে পাড়ি দিয়েছিল। ২০১৪ কমনওয়েলথ গেমসে ভারতের মোট পদক সংখ্যা ৬৪। যার মধ্যে ১৫টি সোনা। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, গত মাসে গ্লাসগোয় জেতা পদক সংখ্যা ভারত ইনচিওনে টপকে যাবে। দক্ষিণ কোরিয়ার মাটিতে ২০০২-এ যখন শেষ বার এশিয়াড হয়েছিল, ভারত পদক তালিকায় আট নম্বরে ছিল। তার চার বছর পর দোহাতেও ভারতের স্থান অনুরূপ। কিন্তু ২০১০-এ শেষ এশিয়াডে ভারত পদক তালিকায় দু’ধাপ উঠে ছয় নম্বরে ছিল। এ বার লক্ষ্য আরও উপরে উঠে প্রথম চার দেশের মধ্যে থাকা।

সর্দারের হাতে তেরঙা

শুক্রবার এশিয়াডের উদ্বোধন। এবং সেই বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে ৪৫ দেশের কুচকাওয়াজে ভারতীয় দলের জাতীয় পতাকা থাকবে হকি দলের অধিনায়ক সর্দার সিংহের হাতে। এ বার এশিয়াডে মোট ক্রীড়াবিদের সংখ্যা প্রায় সাড়ে নয় হাজার। যাঁরা মোট ৩৬টি বিভিন্ন খেলার ৪৩৯টি ইভেন্টে লড়াই করবেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সর্দারকে পতাকাবাহক বাছাই করা নিয়ে ভারতীয় দলের শেফ দ্য মিশন আদিল সুমারিওয়ালা বলেছেন, “সব অ্যাথলিট আর কোচকেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হাজির থাকতে বলা হয়েছে। এবং প্রতিটা খেলার কোচের কাছে জানতে চাওয়া হয়, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শেষমেশ তাঁদের দলের কারা-কারা থাকতে পারবেন। প্রায় সবারই পরের দু’দিনের মধ্যে প্রথম খেলা আছে। সে জন্য প্রায় কেউই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আগে স্টেডিয়ামের বাইরে দুপুর বারোটা থেকে চারটে পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকতে রাজি হয়নি। ভারতীয় পুরুষ হকি দলের পরের দু’দিন ম্যাচ নেই। সে জন্য জাতীয় হকি দলের অধিনায়ককে তেরঙা বহন করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সর্দার এত সম্মানজনক দায়িত্ব পেয়ে খুশি।”

সংস্কৃতি-সভ্যতার ডিজিটাল রূপ

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ঠিক চব্বিশ ঘণ্টা আগে এ দিন গেমস ভিলেজে উদ্বোধন ঘটল ভারতের জাতীয় পতাকার। অনেক দিন পর কোনও গেমসে ভারতীয় দলের শেফ দ্য মিশন হয়েছেন এক জন নিখাদ খেলোয়াড়। সেই প্রাক্তন আন্তর্জাতিক স্প্রিন্টার আদিল সুমারিওয়ালা, যিনি বর্তমানে ভারতীয় অ্যাথলেটিক্স সংস্থার প্রেসিডেন্টও, এ দিন পঞ্চাশ জনেরও বেশি অ্যাথলিটের উপস্থিতিতে গেমস ভিলেজে তেরঙা ওড়ান। যা আগামী দু’সপ্তাহ ইনচিওনের আকাশে উড়বে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান নিয়ে যথারীতি জল্পনা চলছে। শোনা যাচ্ছে, কোরিয়ার প্রাচীন সংস্কৃতি আর আধুনিক সভ্যতার সংমিশ্রনে তৈরি গোটা অনুষ্ঠানটা সম্পূর্ণ ডিজিটাল টেকনোলজিতে প্রদর্শিত হবে।

বিতর্কিত বরণ

চিরশত্রু প্রতিবেশী দেশে গেমস শুরুর মাত্র এক দিন আগে সেখানকার মাটিতে পা রাখল উত্তর কোরিয়া দল। এবং উত্তর কোরিয়ানদের গ্যাংনাম নেচে দক্ষিণ কোরীয়দের অভ্যর্থনা জানানো নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। গ্যাংনামের সময় নাকি উত্তর কোরীয় অ্যাথলিটদের মুখ ইস্পাতের মতো কঠিন ছিল!

প্রশ্নের মুখে টেনিস-ফুটবল

সাই-এর ডিরেক্টর জেনারেল জিজি থমসনের হিসেব অনুযায়ী, শ্যুটিং আর অ্যাথলেটিক্স থেকে এ বার ভারতের সিংহভাগ পদক আসবে। “শ্যুটিংয়ে ১০ থেকে ১৪টা আর অ্যাথলেটিক্সে ১২ থেকে ১৬টা পদক আশা করছি। বক্সিং রিং, কুস্তির ম্যাট, কবাডির মাটি, স্কোয়াশ আর ব্যাডমিন্টন কোর্ট থেকেও পদক আসতে পারে। কিন্তু টেনিসে বিশেষ আশা নেই। এশিয়াড টেনিসে আমাদের মোট ২৩টা পদক আছে। কিন্তু এ বার সানিয়া মির্জা ছাড়া প্রথমসারির প্লেয়ার কেউ নেই। তবে লিয়েন্ডার পেজের এশিয়াডে না আসার সরকারি ভাবে খবর পাইনি,” বলেছেন সাইয়ের প্রধান। ফুটবলে ইতিমধ্যেই পুরুষ দলের এক ম্যাচে পাঁচ গোল খাওয়া আর মেয়েদের ১৫ গোল দিয়ে পরের ম্যাচেই ১০ গোল হজম করা নিয়েও প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন