Sports News

বিশ্বকাপে প্রথম গোল ভারতের, অনবদ্য খেলেও মানতে হল হার

প্রথমার্ধ গোলশূন্য থাকলেও লেখা থাকল ভারতের নামেই। উইং ধরে মিতেইয়ের দৌড় আর প্রতিপক্ষের বক্সে ঢুকে পড়াই হোক বা বরিসের অনবদ্য ডিফেন্স। অভিজিতের নিশ্চিত গোলমুখি শট পোস্টে লেগে ফেরা হোক বা একাধিক গোলের সুযোগ তৈরি করা। সবই ছিল ভারতেরই পক্ষে।

Advertisement

সুচরিতা সেন চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০১৭ ২৩:১২
Share:

গোলের পর ভারতীয় দলের উচ্ছ্বাস জিকসনকে ঘিরে। ছবি: এআইএফএফ।

ভারত ১ (জিকসন)

Advertisement

কলম্বিয়া ২ (পেনালোজা)

স্টেডিয়ামের ঘড়িতে তখন রাত ৯.৪০। ম্যাচও গড়িয়েছে ৮২ মিনিটে। আর ঠিক তখনই যুব বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথম গোল লেখা হল ভারতের নামে। ৮০ মিনিটে কলম্বিয়া বক্সে একটা উত্তেজনা। বল গেল বাইরে, কর্নার পেল ভারত। আর সেই কর্নার থেকে বল উড়িয়েছিল সঞ্জীব স্ট্যালিন। সেই বলই স্টপারের মাথার উপর দিয়ে মাপা হেড গোলে পাঠালেন জিকসন। গোলের নিচে কিছুই করার ছিল না কেভিন মিয়রের। বিরাট কোহালিরাও কী অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলতে গিয়ে এই সমর্থন পেয়েছিলেন? যে ভাবে নেচে উঠল গ্যালারি তাতে লজ্জা পাবে ক্রিকেটও। হেরে গিয়েও যে ভাবে সমর্থকরা উঠে দাঁড়িয়ে সম্মান জানাল দলকে সেটা দেখার মত।

Advertisement

আরও পড়ুন

কলম্বিয়ার কাছে হার, জিকসনের গোলই ভারতের সম্পদ এই বিশ্বকাপে

ঘানাকে হারিয়ে শেষ ১৬ প্রায় নিশ্চিত করে ফেলল ইউএসএ

ঘানা-ইউএসএ ম্যাচের শেষ থেকেই স্টেডিয়াম জুড়ে ইন্ডিয়া ইন্ডিয়া চিৎকারটা বার বার ইকো হয়ে ফিরে আসছিল। আবহটা তৈরি হচ্ছিল আগের ম্যাচ থেকেই। সব সমস্যা কাটিয়ে আয়োজকরাও অনেক স্বস্তিতে। টিকিট নিয়ে সমস্যা নেই। নেই জল, খাবারের আকাল। তার মধ্যেই মাঠে নেমে পড়ল দুই দল। কলম্বিয়া জাতীয় সঙ্গীত শেষে ‘জন-গন-মন’ শুরু হতেই অদ্ভুত এক পরিবেশ যেন নেমে এল স্টেডিয়ামে। রেকর্ডের সেই গানের সঙ্গে গলা মেলাচ্ছে গোটা স্টেডিয়াম। সঙ্গে জায়ান্ট স্ক্রিনে তখন লাইন করে দাঁড়িয়ে থাকা এক একজন যোদ্ধার মুখ। কঠিন মুখে যুদ্ধ জয়ের অঙ্গীকার। মাতোসও কি শিখে ফেলেছেন ভারতের সেই গান? না হলে এই জাতীয়তা বোধ, এই লড়ে যাওয়ার মানসিকতা, চোখে চোখ রেখে প্রতিপক্ষকে বুঝিয়ে দেওয়া আমরাও পারি, ছেলেদের শেখালেন কী করে? দ্বিতীয়ার্ধে যখন গোলশূন্য ফল নিয়ে মাঠে নামল ভারতীয় দল তখন যেন সমর্থকদের চিৎকারটা দ্বিগুন শোনাল।

ম্যাচ শেষ এ ভাবে সমর্থকদের শুভেচ্ছা নিল ভারতীয় দল।

প্রথমার্ধ গোলশূন্য থাকলেও লেখা থাকল ভারতের নামেই। উইং ধরে মিতেইয়ের দৌড় আর প্রতিপক্ষের বক্সে ঢুকে পড়াই হোক বা বরিসের অনবদ্য ডিফেন্স। অভিজিতের নিশ্চিত গোলমুখি শট পোস্টে লেগে ফেরা হোক বা একাধিক গোলের সুযোগ তৈরি করা। সবই ছিল ভারতেরই পক্ষে। প্রথম থেকেই কলম্বিয়ার বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক ফুটবলই খেলতে শুরু করেছিল। সেই সময় কিছুটা ছন্নছাড়াও দেখাল কলম্বিয়াকে। কিন্তু শেষটা ভারতের হল না।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুটা একটু ম্যাড়ম্যাড়ে সঙ্গে একটা ছোট্ট ভুল, যার ফলে এগিয়ে গেল কলম্বিয়া। পেনালোজার একটা ইনসাইড ডজেই কেটে গেল সঞ্জীব। তার পরই বক্সের মধ্য ফাঁকায় ঢুকে চলতি বলেই জোড়াল শট। ধিরাজের কিছুই করার ছিল না। ৪৯ মিনিটে এগিয়ে গিয়ে আক্রমণে গতি বাড়াল কলম্বিয়া। দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই ভারতের রক্ষণে চাপ বাড়াতে থাকে কলম্বিয়া। দুই দলের কাছেই মাস্ট উইন ম্যাচ ছিল। কিন্তু গোল হজম করে যেন কিছুটা দমেই গিয়েছিল ভারতীয় দল। অনিকেত মাঠে আসতে আবার খেলায় গতি ফিরল।

ভারত বনাম কলম্বিয়া ম্যাচের একটি মুহূর্ত।

প্রথম ম্যাচে ইউএসএ-র বিরুদ্ধে আনোয়ার আলির শট ক্রসবারে লেগে ফিরেছিল। আর এই ম্যাচে রাহুলের শট ফিরল পোস্টে লেগে। যুব বিশ্বকাপে যেন ভারতীয় দলের সব থেকে বড় গাট এই পোস্ট। তাই গোল হজম করে শেষ পর্যন্ত দুই স্ট্রাইকারে চলে যেতে বাধ্য হলেন কোচ মাতোস। অভিজিৎ সরকারকে তুলে নামিয়ে দিলেন অনিকেত যাদবকে। রহিম ও অনিকেতকে সামনে রেখেই গোলের মুখ খোলার এটা ছিল কোচের নতুন স্ট্র্যাটেজি। যাতে কাজও হল। আক্রমণে ঝাঁঝ বাড়ল ভারতের। জায়গা পরিবর্তন করে করে বল নিয়ে বার বার উঠতে দেখা গেল অনিকেতকে। যার ফলে বক্সের মধ্যেই ঢুকে পড়া বল কর্নারের বিনিময়ে ক্লিয়ার করতে বাধ্য হয়েছিল কলম্বিয়ার গোলরক্ষক। আর সেই কর্নারকেই কাজে লাগিয়ে দুরন্ত গোল জিকসনের। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যেই আবারও গোল হজম করে বসল। তখনও উৎসব থামেনি গ্যালারির। মুহূর্তেই শান্তির আবহ গোটা স্টেডিয়াম জুড়ে। পরক্ষণেই ইন্ডিয়া ইন্ডিয়া চিৎকারে ফেটে পড়লেন সমর্থকরা। তাই হয়তো ম্যাচ শেষে সেই সমর্থকদের দিকেই হাত ধরে এগিয়ে গেল পুরো দল। সঙ্গে কোচ মাতোসও। এই সমর্থনটাই তো প্রথম থেকে চেয়েছিলেন কোচ মাতোস।

ভারতীয় দল: ধিরাজ, বরিস (নাওরেম), আনোয়ার, সঞ্জীব, নমিত, মিতেই, অমরজিৎ, অভিজিৎ (অনিকেত), জিকসন, রাহুল, রহিম।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন