উচ্ছ্বাস: জয়ের পরে বোপান্না-দ্বিবীজ। উল্লসিত মহেশও। এই উৎসব অবশ্য স্থায়ী হল না। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
‘ইন্ডিয়া....ইন্ডিয়া’।
তৃতীয় সেটের খেলা চলছে তখন। সাউথ ক্লাবের গ্যালারি জুড়ে চিৎকারটা টানা চলছিল। বাধ্য হয়ে খেলা শুরু করার জন্য চেয়ার আম্পায়ারকে বলতে হল, ‘সাইলেন্স প্লিজ’। এক দিকে ইটালির মাতেয়ো বেরেত্তিনি ও সিমোনে বোলেল্লি জুটি। অন্য দিকে ভারতের রোহন বোপান্না ও দ্বিবীজ শরন। প্রথম সেটে হারার পরে দ্বিতীয় সেটে বোপান্নারা দুর্দান্ত ভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। তৃতীয় সেটে জয়ের গন্ধ পেয়ে হাজার দুয়েক দর্শক তখন আনন্দে আত্মহারা। কিন্তু কে জানত, এত উৎসাহ ঘণ্টা খানেক পরেই মিলিয়ে যাবে!
ডেভিস কাপে পছন্দের ঘাসের কোর্টে খেলেও ভারত হারাতে পারল না ইটালিকে। এমনকি, পাঁচ ম্যাচের টাই পুরোটা শেষও করতে হল না। ৩-১ কোয়ালিফায়ার্স জিতে ইটালি চলে গেল ফাইনাল রাউন্ডে। ভারতকে জ়োনাল গ্রুপে ঠেলে দিয়ে।
প্রথম দিন দুটো সিঙ্গলসে হারার পরে ভারতের আশা টিকে ছিল ডাবলসের উপরে। বোপান্না-দ্বিবীজ জুটি হতাশ করেনি। তিন সেটের লড়াইয়ে ভারতকে ৪-৬, ৬-৩, ৬-৪ জয় এনে দেন তাঁরা। অথচ বোপান্নাদের কাজটা কঠিন করে দেওয়ার চেষ্টা কম করেনি ইটালি। মার্কো চেখিনাতোর বদলে মাতেয়ো বেরেত্তিনিকে কোর্টে নামানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তারা। শুক্রবার ইটালি শিবিরের তরফে এ রকম একটা আভাস দেওয়া হলেও নিশ্চিত করে কিছু বলা হয়নি। তাতেও অবশ্য দমানো যায়নি বোপান্নাদের। ‘‘প্রথম দিনের ম্যাচে দেখেছিলাম বেরেত্তিনির খুব শক্তিশালী সার্ভ ও ফোরহ্যান্ড। তাই আমাদের স্ট্র্যাটেজি ছিল ওদের বিরুদ্ধে র্যালিতে না গিয়ে নেটের সামনে বেশি করে খেলা। যাতে ভলিতে পয়েন্ট নেওয়া যায়। তা ছাড়া তৃতীয় সেটে ওদের সার্ভিস ভাঙার পরেই আমরা ছন্দ পেয়ে যাই,’’ ডাবলস ম্যাচ জিতে বলেন বোপান্না।
আশা ছিল, এই জয়ের উৎসাহে ঘুরে দাঁড়াবে ভারত।
কিন্তু রিভার্স সিঙ্গলসে ভারতের এক নম্বর সিঙ্গলস খেলোয়াড় প্রজ্ঞেশ গুণেশ্বরন (বিশ্ব র্যাঙ্কিং ১০২) কোনও প্রতিরোধই গড়তে পারেননি ইটালির আন্দ্রেয়া সেপ্পির (৩৭) বিরুদ্ধে। প্রজ্ঞেশ ১-৬, ৪-৬ হারার পরেই ইটালির জয় নিশ্চিত হয়ে যায়।
হারের পরে ভারতের নন-প্লেয়িং ক্যাপ্টেন মহেশ ভূপতি বললেন, ‘‘আমরা সবাই হতাশ। দলের সবার মধ্যে একটা বিশ্বাস ছিল আমরা হারাতে পারব ইটালিকে। তার জন্য শুক্রবার অন্তত একটা ম্যাচে জেতা দরকার ছিল। ০-২ পিছিয়ে যাওয়ার পরে ঘুরে দাঁড়ানোটা ভীষণ কঠিন।’’
ভারতীয় দলকে বাস্তব দিকটা আরও ভাল করে দেখতে হবে বলে মনে করেন তিনি। ‘‘রাতারাতি অলৌকিক কিছু ঘটে না। মাদ্রিদে কোন ১২টা দল ফাইনালে যাচ্ছে সেটা ঠিক হওয়ার পরে আমি দেখতে চাই, সেই দলগুলোয় র্যাঙ্কিংয়ে প্রথম ১০০-র বাইরে কোনও খেলোয়াড় থাকে কি না।’’
তবে এই হারের পরেও মহেশ ইতিবাচক থাকতে চান। ‘‘রোম তো এক দিনে গড়ে ওঠেনি। এই পর্যায়ে লড়াই করার মতো ছেলেরা আমাদের রয়েছে। ইউকি চোট সারিয়ে ফিরে আসছে দলে, প্রজ্ঞেশ বছর দুয়েক আগেও বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে ৩০০ থেকে ১০২ উঠে এসেছে। তা ছাড়া আমাদের বিপক্ষ কারা ছিল সেটাও দেখতে হবে! যোগ্য দল হিসেবেই ইটালি জিতেছে।’’
সাউথ ক্লাবের ঘাসের কোর্ট ইটালির জন্য কাঁটা হয়ে ওঠার বদলে বাগান হয়ে উঠবে কে ভেবেছিল!