ব্যর্থ: রান পেলেন না রায়ডু, ধওয়ন (ডান দিকে)। ছবি: এএফপি এবং গেটি ইমেজেস
হ্যামিল্টনে ভারতের ব্যাটিং বিপর্যয় রোহিত শর্মার দুশোতম ওয়ান ডে-তে শুধু একটা কালো দাগ হয়েই থেকে গেল না, বিশ্বকাপের আগে কয়েকটা অস্বস্তিকর প্রশ্নও তুলে দিয়ে গেল।
এক, বল যেখানে সুইং করে সেখানে আমাদের ব্যাটসম্যানদের খেলতে এখনও সমস্যা হচ্ছে। মনে রাখা দরকার, এ বারের বিশ্বকাপ হবে ইংল্যান্ডে, যেখানে সব চেয়ে বেশি করে বল সুইং করার পরিবেশ থাকে। দুই, আমরা বড় বেশি প্রথম তিন ব্যাটসম্যানের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছি। তিন, অম্বাতি রায়ডু কখনওই চার নম্বরে আদর্শ ব্যাটসম্যান হতে পারে না। কঠিন সময় ব্যাটিংকে নেতৃত্ব দেওয়ার দক্ষতা রায়ডুর নেই।
বৃহস্পতিবার সকালে কেউ যদি টিভি খুলতে দেরি করে থাকেন, তা হলে স্কোরটা দেখে হয়তো বিশ্বাসই করতে চাইবেন না, এমন ঘটনা ঘটেছে বলে। ৩০.৫ ওভারে ভারত শেষ ৯২ রানে! ট্রেন্ট বোল্ট ২১ রানে পাঁচ উইকেট, কলিন ডি গ্র্যান্ডহম ২৬ রানে তিন উইকেট। নিউজ়িল্যান্ডে এই প্রথম বল সুইং করল, বাঁ-হাতি বোল্ট বলটা ভিতরে আনল, কিন্তু একেবারে খেলতে না পারার মতো কিছু ছিল না।
ভারতের লজ্জার ওয়ান ডে স্কোর
• ৫৪ বনাম শ্রীলঙ্কা, শারজা, ২০০০
• ৬৩ বনাম অস্ট্রেলিয়া, সিডনি, ১৯৮১
• ৭৮ বনাম শ্রীলঙ্কা, কানপুর, ১৯৮৬
• ৭৯ বনাম পাকিস্তান, সিয়ালকোট, ১৯৭৮
• ৮৮ বনাম নিউজ়িল্যান্ড, ডাম্বুলা, ২০১০
• ৯১ বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা, ডারবান, ২০০৬
• ৯২ বনাম নিউজ়িল্যান্ড, হ্যামিল্টন, ২০১৯
এ রকম অবস্থায় ব্যাটসম্যানদের নিজেদের একটু পরিস্থিতি অনুযায়ী খেলতে হয়। বুঝতে হয়, এই পিচে, অন্তত প্রথম দিকে আমি বোলারদের শাসন করতে পারব না। তাই ঝুঁকি নিয়ে কোনও স্ট্রোক খেলব না। কিন্তু রোহিত, শিখর ধওয়ন, রায়ডুরা নিজেদের বদলানোর চেষ্টা করল না। বোল্ট টানা ক’ওভার বল করত? নতুন বলে ওর পাঁচটা ওভার সামলে দিলে এই হাল হয় না। শুরুতেই বোল্টের ইনসুইং ফিরিয়ে দিল ধওয়ন, রোহিতকে। তার পর থেকেই ধস।
বৃহস্পতিবার বিধ্বংসী মেজাজে ট্রেন্ট বোল্ট।
ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট অনেক দিন ধরেই রায়ডুকে চার নম্বরে সুযোগ দিয়ে যাচ্ছে। বলা হচ্ছে, বিশ্বকাপে এই জায়গায় রায়ডুই খেলবে। আমার কিন্তু মনে হয় না, সিদ্ধান্তটা ঠিক। রায়ডুর কি ক্ষমতা আছে একক দক্ষতায় জেতানোর? উত্তর হচ্ছে, না। রোহিত, ধওয়ন, কোহালি উল্টো দিকে থাকলে রায়ডু ওদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে চলনসই ব্যাটিং করে দিতে পারে। কিন্তু খুব কম রানে দুই কি তিন উইকেট পড়ে গেলে রায়ডু একা ম্যাচ বার করতে পারবে না। একই কথা বলা যায় দীনেশ কার্তিক সম্পর্কেও। অল্প কিছু ওভার খেলে দ্রুত রান হয়তো তুলে দিতে পারে, কিন্তু ওই পর্যন্তই। তার বেশি কিছু আশা না করাই ভাল। ৩০-৩৫ ওভার এদের ব্যাট করতে হলে, সমস্যা আছে।
সেই কাজটা করতে পারে ঋষভ পন্থ। এই দলটায় ঋষভই হল আদর্শ চার নম্বর। ওর দক্ষতা আছে একা একটা ম্যাচ বার করে নেওয়ার। তা ছাড়া বাঁ-হাতি হওয়ায় ভারতীয় ব্যাটিংয়ে বৈচিত্রও আনতে পারবে। ঋষভের ব্যাটিং নিয়ে কোনও প্রশ্ন ওঠেনি কখনও। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ায় টেস্টে সেঞ্চুরি আছে। দুরন্ত স্ট্রোকপ্লেয়ার। আদর্শ ওয়ান ডে খেলোয়াড়, গেমচেঞ্জার।
ঋষভের কোনও সমস্যা থাকলে, সেটা কিপিংয়ে। তা, কিপিং করার জন্য বিশ্বকাপে মহেন্দ্র সিংহ ধোনি তো থাকবেই। ঋষভ থাকা মানে ব্যাটিংয়ের শক্তি অনেক বেড়ে গেল। যেটা রায়ডু বা কার্তিক সম্পর্কে বলা যাবে না। নিউজিল্যান্ডে কেন ঋষভকে খেলানো হচ্ছে না, বুঝতে পারছি না। ২০ বছরের একটা ছেলেকে বিশ্রাম দিতে হচ্ছে, এই যুক্তিটাই হাস্যকর। আর বিশ্রামটাই বা কীসের? ও তো ‘এ’ দলের হয়ে খেলছে। তা হলে কি ঋষভকে বিশ্বকাপের জন্য ধরাই হচ্ছে না? নির্বাচকদের ব্যাপারটা পরিষ্কার করে দেওয়া উচিত। আর ধরা হলে, অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে পাঁচটি ওয়ান ডে-তেই খেলানো হোক ঋষভকে। কারণ ওর পরে তো বিশ্বকাপের আগে আর ওয়ান ডে ম্যাচ পাচ্ছে না ভারত।
এ দিন কোহালি বা ধোনি না থাকায় অবশ্যই সমস্যায় পড়েছে ভারত। এই দু’জন না খেলায় মিডল অর্ডারের অনভিজ্ঞতা ভীষণ ভাবে ধরা পড়ে গিয়েছে। বোল্ট শুরুতে রোহিত, ধওয়ন, শুভমনকে তুলে নেওয়ার পরে গ্র্যান্ডহোমকেও সামলাতে পারল না পরের দিককার ব্যাটসম্যানরা। শুভমন একটা ভাল সুযোগ পেয়েছিল নিজেকে প্রমাণ করার। কিন্তু কাজে লাগাতে পারল না। এ রকম সুযোগ কিন্তু বারবার আসবে না।
তবে বিশ্বকাপে ভারতের এ রকম পরিস্থিতি হবে বলে মনে হয় না। কারণ ইংল্যান্ডে খেলা হলেও পিচ নিষ্প্রাণই থাকবে। তাই ওই সময় ইংল্যান্ডে ‘অন দ্য রাইজ শট’ খেলতে কোনও সমস্যা হবে না। এর সঙ্গে ঋষভকে যদি দলে নেওয়া হয়, তা হলে তো কথাই নেই। ভুললে চলবে না, ইংল্যান্ডে কিন্তু রান পেয়েছে ঋষভ।